কোন পথে এড়ানো যাবে দায়?

রায়গঞ্জে অধ্যক্ষ নিগ্রহ কাণ্ড হোক বা পার্কস্টিট ধর্যণ কাণ্ড, রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় প্রশাসন ও মন্ত্রীদের কথায় ছিল ব্যাপক অমিল। বুধবার বর্ধমানে সিপিআইএমের প্রাক্তন বিধায়ক খুনের ঘটনাতে তো মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে মিলল না তাঁর মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্য।

Updated By: Feb 23, 2012, 03:16 PM IST

বুধবার বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে ২ সিপিআইএম নেতার নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার ঘটনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার অন্য ৩ সদস্য।
বুধবার রাতে বর্ধমানের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সিপিআইএমের 'গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব'-এর ফলে মৃত্যু হয়েছে ২ সিপিআইএম নেতার।' অন্যদিকে, ঘটনার দিন সকালেই সিপিআইএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদাপ তা এবং বর্ধমান জেলা কমিটি সদস্য কমল গায়েনের মৃত্যুর কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান 'জনরোষ'-এর বলি হয়েছেন ২ সিপিআইএম নেতা। একই কথা বলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এর আগে অবশ্য, তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানান সিপিআইএমের 'গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব'-এর ফলে মৃত্যু হয়েছে ২ সিপিআইএম নেতার।  ফলে ক্রমাগত পরস্পর বিরোধী মন্তব্যের জেরে ঘটনা নিয়ে ক্রমশ বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে।
বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল বের করে সিপিআইএমের স্থানীয় নেতৃত্ব। রাজ্য পুলিসের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিত্‍ কর পুরকায়স্থর বক্তব্য অনুযায়ী সাড়ে ৮টা নাগাদ লালঝাণ্ডা লাগানো এবং ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন ছেঁড়া নিয়ে দুপক্ষের বচসা শুরু হয়। আহত হন সিপিআইএম কর্মী সিপিআইএম কর্মী রূপকুমার গুপ্ত এবং তৃণমূল কর্মী বিদ্যুত্‍ হাজরা। অভিযোগ দায়ের করা হয় বর্ধমান থানায়। পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয় সেইসময়।
এরপর ৯টা ৫০ নাগাদ পুলিস সুপারকে ফোন করে ফের মিছিল করার অনুমতি চান প্রদীপ তা। সুরজিত্‍বাবুর বক্তব্য, পুলিসের 'আপত্তি' সত্ত্বেও মিছিল বের হয় মিছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর দেওয়ানদিঘি-নাদনঘাটের রাস্তা এগোতে থাকে সিপিআইএমের মিছিল। ১০টা ১৫ নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া দু'পাশ থেকে মিছিল ঘিরে ধরে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। প্রায় ৫০-৬০ জন সশস্ত্র তৃণমূল কর্মী ঘিরে ধরে প্রদাপ তা ও কমল গায়েনকে। এরপর রাস্তায় ফেলে লাঠি ও টাঙ্গি দিয়ে মারা হয় তাঁদের। বোল্ডার দিয়ে নৃশংস ভাবে থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা। হাসপাতালের পথেই মৃত্যু হয় প্রদাপবাবুর। পরে দুর্গাপুর হাসপাতালে মারা যান গুরুতর জখম কমলবাবুও। ঘটনায় পুলিস গ্রেফতার করে ৪ জনকে। উল্লেখ্য ধৃত ওই ৪ যুবক পতিতপবন তা, সুরজিত্‍ তা, ভুপাল গোস্বামী এবং ছোটন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক পরিচয় পুলিস গোপন রাখলেও এলাকায় তারা তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিত।
পুরো অভিযোগই কার্যত অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কোন পথে দায় এড়াবে তাই নিয়ে দেখা গেছে মতবিরোধও। এর আগে রায়গঞ্জে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনা, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডেও পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। এরপর বুধবার এই নৃসংশ ঘটনার পরেও একইভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা।

.