বিপন্ন টেনিদার বাড়ি

কুড়ি নম্বর পটলডাঙা স্ট্রিট। পুরসভার রেকর্ডে এই রাস্তার দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন, বাস্তবে তার পথটা অনেক অনেক লম্বা। উত্তর কলকাতার অখ্যাত গলি এঁকে বেঁকে চলে গিয়েছে  অসংখ্য বাঙালি পাঠকের মনের অন্দরমহলে। সৌজন্যে টেনিদার বাড়ি।

Updated By: Dec 2, 2011, 11:22 PM IST

কুড়ি নম্বর পটলডাঙা স্ট্রিট। পুরসভার রেকর্ডে এই রাস্তার দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন, বাস্তবে তার পথটা অনেক অনেক লম্বা। উত্তর কলকাতার অখ্যাত গলি এঁকে বেঁকে চলে গিয়েছে  অসংখ্য বাঙালি পাঠকের মনের অন্দরমহলে। সৌজন্যে টেনিদার বাড়ি। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগবে, এখন টেনিদার সেই বাড়ির সামনে দাঁড়ালে, বাড়িটি আর চেনা যাবে না। বেআইনি নির্মাণের জেরে চারমূর্তির অমর ঠেক আজ আমূল বদলে গিয়েছে।
 
টেনিদা চরিত্রটা সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমের দৌলতে সকলের জানা। কখনও গড়ের মাঠে গোরা পেটানো, কখনও যোগসর্পের আস্ত হাঁড়ি সাবাড় করে ফেলা কখনও বা `নীলপাহাড়ির বাংলোতে কুণ্ডুমশাইয়ের মুন্ডু নাচানো`র রহস্যের সমাধান! টেনিদার নানা কীর্তিকাহিনি এখনও বাঙালী পাঠকের স্মৃতিতে ভাস্বর।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত পটলডাঙা স্ট্রিটের কুড়ি নম্বর বাড়িতেই থাকতেন সেই `টেনিদা`। আসল নাম প্রভাত মুখোপাধ্যায়। আর কুড়ির-এ`তে থাকতেন সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং।  প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের অনুকরণেই নাকি টেনিদা চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন নারায়ণবাবু। টেনিদার প্রায় প্রতিটি গল্পের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে পটলডাঙার এই বাড়ির স্মৃতি।
গত এক বছরে আমুল বদলে গিয়েছে টেনিদার সেই বাড়ি। ছাদের উপর তিনতলা তুলতে গিয়ে উধাও চাটুজ্জ্যেদের রোয়াক। বারান্দা, চিলেকোঠাও হাপিশ!  প্রতিবেশীদের অভিযোগ, পুরসভার অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে তিনতলা তোলা হচ্ছে। বাড়ির বর্তমান মালিক স্বপ্না দাস সেখানে অবৈধ ভাবে বই বাঁধাইয়ের ব্যবসাও চালাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। মিডিয়ার সামনে অবশ্য কিছুই বলতে রাজি নন স্বপ্না দেবী। এমনকী বাড়ির ছবি তুলতে দিতেও তাঁর আপত্তি।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টির নস্টালজিয়ায় ঘেরা বাড়ির এই আমূল বদলে যাওয়াটা যথেষ্ট পীড়া দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। তাঁদের মতে, হেরিটেজ না হোক অন্তত বাংলা সাহিত্যের ক্ল্যাসিক চরিত্রের স্মৃতিটুকু নিয়ে টিকে থাকুক `কুড়ি নম্বর পটলডাঙা স্ট্রিট`।

.