আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, ক্ষতিপূরণ দেবে মোদী? প্রশ্ন যৌনকর্মীদের

Updated By: Nov 8, 2017, 09:13 PM IST
আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, ক্ষতিপূরণ দেবে মোদী? প্রশ্ন যৌনকর্মীদের
গ্রাফিক্স- ২৪ ঘণ্টা

সৌরভ পাল 

নোটবন্দির বর্ষপূর্তিতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করল এশিয়ার সবথেকে বড় সেক্স ট্রেড সেন্টার সোনাগাছি। নোটবন্দি খারাপ। অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নষ্ট করেছে। রেডলাইট এরিয়ায় গ্রাহক আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই নোটবন্দির কারণেই। আমাদের মেয়েদের হাতে আর কোনও টাকা পয়সাই নেই। এমন আরও অজস্র প্রশ্নবানে '৫৬ ইঞ্চির বুকওয়ালা' প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা।  

নোটবন্দিতে ক্ষতি হয়েছে যৌনকর্মীদের পেশায়! 

পঞ্চাশোর্ধ সরস্বতী দাসের সোজা জবাব, "রোজগারে ঘাটতি"। নোটবন্দির সময় থেকেই যৌনপল্লীতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি সামাল দেওয়া যায়নি। দুর্বারের এই প্রবীণ সদস্য বলেন, "প্রথম দু-তিন মাস তো মেয়েরা না খেয়ে মরার মত অবস্থা। এখনও সেই অবস্থা চলছে। চোখের সামনে দেখেছি সারাদিন পর কেউ একটা-আধটা কাস্টোমার পাচ্ছে। সারাদিন পর বওনি করছে। তার বাচ্চা আছে, পরিবার আছে। কীভাবে চলবে?" নোটবন্দির সময় যৌনকর্মীরা ওষুধই জোগাড় করতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেছেন সরস্বতী দাস। তাঁর অভিযোগ, "রেডলাইট এরিয়ায় ওষুধ তো নিত্যসামগ্রী। যে কোনও ব্যাপারেই তো ওষুধ লাগে। যারা পড়াশুনা জানে না তাদের ঠকিয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা।" একই সঙ্গে জিএসটি'র বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন, "একে তো রোজগার নেই, তার ওপর পরিবারের খরচ চালানো, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা। এসবের পর ওষুধ কিনতে গেলেও ট্যাক্স দিতে হলে সঞ্চয়ই বা হয় কীভাবে?"   
 
ক্যাশলেস চলে না! 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন ডিজিটাল ইন্ডিয়া তৈরি করার। আর সেজন্যেই নোটবন্দির সঙ্গে ক্যাশলেস ভারত গড়ার জন্যও সওয়াল করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই ক্যাশলেস ইন্ডিয়া গড়ার স্বপ্নকে কার্যত 'অবস্তাব' বলেও কটাক্ষ ছুড়েছেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। "এখানে বিনা ক্যাশে কিছুই হয় না। বিশ্বাস করে চেক নিয়েও ঠকতে হয়েছে অনেককে", এই ভাষাতেই নোটবন্দি এবং ক্যাশলেস ভারত গড়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা শোনা গেল সবিতা পাইনের গলায়।

আরও পড়ুন- নোট নাকচের বর্ষপূর্তিতে 'উলু-খাগড়া'রা কেমন আছেন?

যৌনকর্মীরা যে নোটবন্দিকে একেবারেই মন থকে মেনে নেননি তা স্পষ্ট ধরা পড়ল দুর্বারের আরও এক সদস্য চামেলি সাহার গলায়। নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে চামেলি সাহা বলেন, "৮ নভেম্বর চিড়ে গুড় খেয়ে থাকব। ৫০০, ১০০০ টাকার নোটের শ্রাদ্ধ হচ্ছে তো।"  

যৌনকর্মীদের রোজগারে কোপ বসিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা! 

রাজ্য, দেশের মতই নোটবন্দির পর খুচরো সমস্যায় নাজেহাল হতে হয়েছে যৌনকর্মীদেরও। রক্ত জল করা রোজগারে কোপ বসিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমনটা অভিযোগ উঠে এল যৌনকর্মীদের কন্ঠে। এখনও নভেম্বরের সেই দুর্বিষহ ছবি চোখের সামনে ভাসে ওদের। বিস্মৃতির পাতা থেকে নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সরস্বতী দাস জানালেন, "এখানে সবারই অল্প পয়সার ইনকাম। পেট চালাতে নোট বন্দির পরও পুরনো টাকা নিতে হয়েছে। খরিদ্দারকে ফিরিয়ে দিইনি। বাধ্য হয়েই পুরনো টাকা নিয়েছি। কিন্তু সেই রোজগারেও কোপ পড়েছে। কিছু কিনতে গেলে দোকানদাররা ডিডাকশন দিয়ে পুরনো টাকা নিয়েছে। ৫০০ দিলে ৪০০ পেয়েছি। হাজারে পেয়েছি ৮০০।"  

হারাচ্ছে যৌনপল্লীর জৌলুস, পেশা হারিয়ে বেকার হাজারো! 

নোটবন্দির কারণে কালীঘাটের যৌনপল্লী পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে বলে দাবি দুর্বার কর্মীদের। "মেয়েদের রোজগার নেই, ঊষাতে (কো-অপরেটিভ) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে সবাই। নোটবন্দির সময় এত টাকা যে ঊষাতে জমা হয়েছে এখন তার কৈফিয়তও দিতে হচ্ছে। পেনাল্টি চার্জ করা হচ্ছে আমাদের। সেক্স ওয়ার্কাদের সোর্স অব ইনকাম কী? হঠাৎ করে আবার এল জিএসটি", সব মিলিয়ে বেসামাল অবস্থা আদি যৌনপল্লীর। চামেলি সাহার অভিযোগ, "রোজগারের অভাবে পেশা থেকে সরে গিয়েছে অনেকেই। আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, ক্ষতিপূরণ দেবে মোদী? একই সঙ্গে চামেলি সাহার প্রশ্ন, "যাদের বয়স হয়ে গিয়েছে তারা কী করবে?"

আরও পড়ুন- মোদীর কাছে কর ছাড়ের আর্জি যৌনকর্মীদের

.