নিরাপত্তার অভাব, ক্রিসমাস ইভেও মজল না পার্কস্ট্রিট
বড়দিনের আগের রাতে অচেনা পার্ক স্ট্রিট। অন্যান্য বছরের মত সেই চেনা ভিড় এবার উধাও। রাত বাড়তেই শুনশান পার্কস্ট্রিট। রাতের কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। পুলিসি নিরাপত্তা সত্বেও রাত বাড়তেই ঘরে ফেরার পালা।
বড়দিনের আগের রাতে অচেনা পার্ক স্ট্রিট। অন্যান্য বছরের মত সেই চেনা ভিড় এবার উধাও। রাত বাড়তেই শুনশান পার্কস্ট্রিট। রাতের কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। পুলিসি নিরাপত্তা সত্বেও রাত বাড়তেই ঘরে ফেরার পালা। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল কলকাতা পুলিস। পার্কস্ট্রিটে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন নগরপাল।
কিন্তু কলকাতা পুলিসের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আশ্বস্ত হতে পারেননি শহরবাসী। বড়দিনের আগের রাতের পার্কস্ট্রিটের ছবিই সেকথা বলে দিচ্ছে। গত বছর এই দিনে পার্কস্ট্রিটে ছিল জনজোয়ার। সারা রাত আনন্দ উত্সবে সামিল হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এবছরের ছবিটা পুরো আলাদা। রাত দশটার আগেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে পার্কস্ট্রিট। রাতের শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। রাজ্যে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ও সম্প্রতি দিল্লিতে গণঘধর্ষণের পর আতঙ্কে রয়েছেন মহিলারা। অল্প সময় উত্সবে সামিল হয়েই ঘরে ফিরতে চাইছেন তাঁরা। বড়দিন এলেই মনে পড়ে যায় আলোয় ঝলমলে পার্কস্ট্রিটের কথা। হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দের এই পার্কস্ট্রিটই কিন্তু কলকাতা পুলিসের এক অন্ধকার সময়ের সাক্ষী। যার জন্য পুলিসের শীর্ষকর্তাদেরই একাংশ দায়ী। এই পার্কস্ট্রিটের গণধর্ষণ নিয়ে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে তত্কালীন গোয়েন্দা প্রধান দময়ন্তী সেন জানিয়ে দিয়েছিলেন, সে দিন ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেছিল। রাজ্য তথা কলকাতা পুলিসের শীর্ষকর্তার বক্তব্য ছিল অন্যরকম।
আর তারই ফল হিসাবে বদলি হয়ে যেতে হয় দময়ন্তী সেনকে। আটকে যায় তদন্ত। এমনকী ধরা পড়েনি এই মামলার মূল অভিযুক্ত কাদের খান। একের পর এক ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে কলকাতা পুলিসের চরম গাফিলতি। যে হোটেল থেকে বেরনোর পর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল সেখান থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ থেকেই অভিযুক্তদের সনাক্ত করেন অভিযোগকারী মহিলা। কিন্তু হার্ড ডিস্কের সেই অংশের ছবি পাওয়া যায়নি। হার্ড ডিস্কের অন্য অংশের ফরেনসিক পরীক্ষার কোনও চেষ্টাই করেনি পুলিস। যে গাড়িটিতে ওই ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ, সম্প্রতি সেই গাড়িটিও ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। পুলিসের তরফে কোনও আপত্তিই জানানো হয়নি।
ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। একইসঙ্গে, প্রথম থেকেই পুলিসের কর্তারা এই ঘটনা অন্যপথে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়ায় অভিযুক্তদের ধরতে অনেক সময় লেগে যায়। তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষার আর কোনও সুযোগই ছিল না পুলিসের কাছে। সবথেকে বড় বিষয়, মূল অভিযুক্ত কাদের খান কিছুদিন আগেই কলকাতায় এসেছিল বলে খবর পান গোয়েন্দারা। কিন্তু, খোঁজ নিয়ে অভিযান চালিয়েও কোনও লাভ হয়নি। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের ধরে ফেলে সুনাম অর্জন করা লালবাজারের গোয়েন্দারা কেন সামান্য একজন অভিযুক্তকে এতদিনেও ধরতে পারেননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তের দায়িত্ব এমন একজন অফিসারকে দেওয়া হয়েছে, যাকে প্রকাশ্যেই আদালতে ভর্ত্সনা করা হয়েছে বলে আইনজীবীদের দাবি। এই অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনায় মে মাসে চার্জশিট দিলেও এখনও চার্জ গঠনের কাজই হয়নি।