মেডিক্যালে বিরলকাণ্ড! অস্ত্রোপচারের পর কেমো বন্ধ হতেই মিলিয়ে গেল ক্যানসার

২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিংয়েই জন্ম হয় মিনুর। 

Reported By: তন্ময় প্রামাণিক | Updated By: Oct 23, 2019, 10:37 PM IST
মেডিক্যালে বিরলকাণ্ড! অস্ত্রোপচারের পর কেমো বন্ধ হতেই মিলিয়ে গেল ক্যানসার

তন্ময় প্রামাণিক: সদ্যোজাতের মেরুদণ্ডের নীচে বিশালাকার টিউমার। টিউমারে মস্তিষ্কের ক্যানসারের দু'ধরনের কোষ। বিরলতম রোগের চিকিত্‍সায় সাফল্য পেলেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্‍সকরা। অস্ত্রোপচারে একটি টিউমার বাদ দেওয়া হলেও, নতুন টিউমার দেখা দেয়। কেমো বন্ধ হতে তাও মিলিয়ে গেছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে মিনু।

বছর দুয়েকের ছোট্ট মেয়ে। মেডিক্যাল কলেজের শিশুবিভাগেই থাকে। ডাক্তারবাবু আর সিস্টাররাই ওর সব। চিকিত্‍সাবিজ্ঞানের বিরলতম সাফল্যের নজির গড়লেন ডাক্তাররা। ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিংয়েই জন্ম হয় মিনুর। দেখা যায় শিশুর শরীরে মেরুদণ্ডের নীচে বিশাল টিউমার। যার ওজন সদ্যোজাতের ওজনের অর্ধেক। পরদিনই উধাও হয়ে যান শিশুটির মা। মেলেনি পরিবারের খোঁজ। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার থেকে সংগ্রহ করা হয় ঠিকানা।  খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ঠিকানা ভুল। সেখানে ওই নামে কেউ থাকেন না। আইনি কাগজপত্র তৈরি করে মিনুর অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেয় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রসূতি বিভাগ থেকে মিনুকে নিয়ে যাওয়া হয় পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে। শিশুটির সমস্ত দায়িত্ব নেন বিভাগীয় প্রধান সুকান্ত দাস। 

তবে কাগজপত্র তৈরি করতে সময় লেগে যায়। এই ধরনের টিউমার দ্রুত অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। কারণ এর মধ্যে ক্যান্সারের কোষ থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল থাকে। অধ্যাপক সুকান্ত দাস বলেন, "কাগজপত্র তৈরির পর অস্ত্রোপচারের অনুমতি মেলে। তারপরই আমরা অস্ত্রোপচার করি। বায়োপসিতে পাঠানো হয়।'' 

জন্মগত ত্রুটির কারণে শিশুর শিরদাঁড়ার নীচে ছিল টিউমার। বিজ্ঞানের ভাষায় নাম স্যাক্রোকক্সিজিয়াল টেরাটোমা। মিনুর টিউমারে মস্তিষ্কের ক্যানসারের ২ ধরনের কোষ মেলে। চিকিত্‍সাবিজ্ঞানে বিরল এই ঘটনাকে বলে অলিগো অ্যাস্ট্রো সাইটোমা। অস্ত্রোপচার করে মিনুর টিউমার বের করা হয়। শুরু হয় কেমোথেরাপি। দ্বিতীয়বার চমকে ওঠেন অভিজ্ঞ চিকিত্‍সকরা। কেমোথেরাপি শুরুর পর শিশুর তলপেটে টিউমার ধরা পড়ে। তাতেও ক্যানসারের কোষ ছিল। শেষ পর্যন্ত কেমোথেরাপি বন্ধ করা হয়। তারপরই টিউমার মিলিয়ে যায়। কেন এমন হল? এখনও ব্যাখ্যা খুঁজছেন চিকিত্‍সকরা। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, মিনু এখন সুস্থ।

অঙ্কোলজি মেডিসিন বিভাগের প্রধান শুভাশিস  ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কেমোথেরাপি দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের জন্য আমরা আশ্চর্য হই। শিশুটির পেটের ভিতর আর একটি টিউমার বড় হতে থাকে। সেটা আমরা দেখতে পাই। তার মধ্যেও ম্যালিগনেন্সির অস্তিত্ব ছিল।  এর কোনও ব্যাখ্যা নেই। আলোচনা করে কেমোথেরাপি বন্ধ করি। কারণ, শিশুটির মৃত্যু তখন অনিবার্য। এখানে আরো আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। কেমোথেরাপি বন্ধ করে দেওয়া মাত্রই পেটের ভিতর ক্যান্সার-সহ জন্ম নেওয়া টিউমার ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। তার কারণ খুঁজছি আমরা। গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন- "আমাকে বলো না যে কাজ চলছে! কবে শেষ হবে? এটা নাটক হচ্ছে?" কড়া ধমক মুখ্যমন্ত্রীর

.