সেদিন সঠিক ছিলেন বুদ্ধদেব, সিঙ্গুরে বিজেপির জয়ের পর বিলম্বিত বোধোদয় সিপিএমের?
১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দিল ডিওয়াইএফআই।
মৌমিতা চক্রবর্তী
রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম সরকারে বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছিল সিঙ্গুর। সেই সিঙ্গুর আবার ফিরে এসেছে। রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আবারও শিরোনামে সিঙ্গুর। লোকসভা ভোটে সিঙ্গুর থেকে লিড পাওয়ার পর কারখানার তৈরির দাবি তুলে ফেলেছে বিজেপি। এমতাবস্থায় বিজেপির হাতে চলে যাওয়া সিঙ্গুরকে ফিরিয়ে আনতে কর্মসূচি নিল ডিওয়াইএফআই। অনেকেই বলছেন, সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লাইনে আসতে হল সিপিএমের যুব সংগঠনকে।
১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দিল ডিওয়াইএফআই। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র মিত্র বলেন,'ফোনে কথা বলার দিন শেষ। এবার কথা হবে সামনাসামনি। সিঙ্গুর মানে আমাদের কাছে অপরাধ নয়, সিঙ্গুর মানে আমরা কাজ চাই। সিঙ্গুর মানে শিল্প চাই। কর্মসংস্থানের দাবির কথাই দিদিকে বলতে চাই'।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতপ সাংসদ রূপচাঁদ পালকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের রত্না দে নাগ। সেই সিপিএমের শেষের শুরু। এরপর ২০১১ সালে পালাবাদল। হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়েও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সওয়াল করেছিলেন, রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাবে কোথায়? শিল্প কী হাওয়ায় হবে। কিন্তু দল পাশে দাঁড়ায়নি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পার্টি দলিলে স্বীকার নেওয়া হয়, সিঙ্গুরে চাষের জমি কেড়ে নেওয়া ভুল হয়েছিল। তার খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। পরবর্তীকালে সিঙ্গুরের চাষিরা ফেরত পেয়েছেন জমি। কিন্তু চাষ শুরু করা যায়নি।
কালের নিয়মে সেই সিঙ্গুরেই উঠেছে শিল্পের দাবি। আর সেই দাবিকে সামনে রেখেই হুগলিতে তৃণমূলের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সিঙ্গুর বিধানসভায় তৃণমূলের চেয়ে ১০, ৪২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে বিজেপি। এমনকি টাটাদের জমি যে মৌজাগুলিতে, সেগুলির অধিকাংশেই ভোট পড়েছে বিজেপি ইভিএমে। ভোটের পর সিঙ্গুরে গিয়ে সভাও করে এসেছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। মুকুল রায় স্বীকার করে নিয়েছেন, টাটাদের তাড়িয়ে ভুল হয়েছে।
কিন্তু আলিমুদ্দিন? তখন কি নেতৃত্ব বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছিল? সেই সিপিএমের কাঠগড়ায় উঠেছিলেন রাজ্যে শিল্প আনতে চাওয়া এক মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতারাই গালমন্দ করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন ঘরবন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে এসেছিলেন বটে, তবে গাড়ি থেকে নামেননি। সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পার্টিই আজ কার্যত স্বীকার করে নিল, সেদিন তিনিই সঠিক ছিলেন। একেই হয়তো বলে বিলম্বিত বোধোদয়!
আরও পড়ুন- সিঙ্গুরে এত কিছু করলাম, জমি ফেরত দিলাম, লজ্জা হওয়া উচিত, দলকে বার্তা মমতার