ডিজিটালে স্বয়ংসেবকদের টেক্কা দিতে স্বেচ্ছাসেবক চেয়ে বিজ্ঞাপন দিল সিপিএম
কম্পিউটারে কর্মসংস্থান কেড়ে নিতে পারে, এমন আশঙ্কায় নয়ের দশকে প্রযুক্তির বিরোধিতা করেছিল সিপিএম।
মৌমিতা চক্রবর্তী
সব পেটে সব হাতে কাজ চাই বা সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক। বাংলার দেওয়াল ভরে উঠত বিপ্লবের স্লোগানে। সময়ের ফেরে সেই সিপিএম আর নেই। সেই দেওয়াল আছে তবে তা এখন ভার্চুয়াল। ফেসবুকের দেওয়াল এখন ছয়লাপ রাজনৈতিক প্রচার থেকে তরজা। প্রচারের অভিঘাত বলে দিচ্ছে মতামতের সংখ্যা। কিন্তু খানিকটা দূরত্বই বজায় রেখেছিলেন আলিমুদ্দিনের পক্ককেশী নেতারা। লোকসভা ভোটের ধাক্কা খাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়গড় হতে ডিজিটাল স্বেচ্ছাসেবক গঠনের সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপনও।
সময় বদলায়। বদলায় দৃষ্টিভঙ্গি। এত দিন কেবল দেওয়াল লিখন, পথনাটিকা ও গণসংগীতই ভরসা ছিল। কিন্তু ডিজিটাল যুগে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে ভরসা অন্তর্জালই। তা থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন আলিমুদ্দিনের পক্ককেশী নেতারা। একদা কম্পিউটারের বিরোধী সিপিএমই এখন লোক চাইছে ডিজিটাল প্রচারের জন্য। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের আহ্বান জানাল আলিমুদ্দিন- আপনি কি সিপিএমের সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহী?
বন্ধু হও, বাড়াও হাত- ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতে ইচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক বামপন্থীদের এক ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী সিপিএম। সেই উদ্দেশ্যে সমীক্ষা, তথ্য বিশ্লেষণ ও ভাবনা প্রচারের লক্ষ্যে ডিজিটাল দল তৈরি করতে চাইছে সিপিএম। সমষ্টিগত বা এককভাবে সিপিএমের ডিজিটাল টিমে সামিল হতে পারবেন সমর্থকরা। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ধাঁচে ডিজিটাল বিপ্লবে সামিল হতে চাইছে সিপিএমও।
ডিজিটাল মাধ্যমে কিন্তু শুরু করেছিল বিজেপি। সেই ২০১৪ সালে ভারতবাসী প্রথম দেখেছিলেন, কাকে বলে ডিজিটাল প্রচার! টুইটার, ফেসবুকে বিরোধীদের হাতে পেন্সিল ধরিয়ে ছেড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ফাঁকা মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব বুঝে ঝাঁপিয়েছে বিরোধীরাও। কিন্তু বিজেপির আইটি সেলের সঙ্গে টক্কর দিতে এখনও পারেনি তারা। সেই আইটি সেলের ধাঁচেই এবার বাহিনী তৈরি করতে চাইছে সিপিএম। প্রাথমিক পর্যায়ে কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ দিয়েই শুরু করা হচ্ছে সিপিএমের ডিজিটাল দল। এর পরে ত্রিপুরা ও কেরলেও কাজ শুরু হবে।
কম্পিউটারে কর্মসংস্থান কেড়ে নিতে পারে, এমন আশঙ্কায় নয়ের দশকে প্রযুক্তির বিরোধিতা করেছিল সিপিএম। সেই বিরোধিতার খেসারত দিতে হয়েছিল রাজ্যকে। সেই সিপিএমই এখন খুঁজছে ডিজিটাল সৈনিক। শুধু তাই নয়, একেবারে সঙ্ঘের অনুকরণে ডিজিটাল স্বেচ্ছাসেবক। তাহলে কি এবার স্বয়ংসেবক বনাম স্বেচ্ছাসেবকের লড়াই দেখতে চলেছে বাংলা? তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, জেন ওয়াইয়ের কাছে দলের 'মন কি বাত' বলতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল না?
আরও পড়ুন- বিজেপি জুজু? শিলিগুড়িতে একসঙ্গে মিছিলে সিপিএম-কংগ্রেস-তৃণমূল