এ বার মৌমাছিই বলে দেবে আপনি করোনা আক্রান্ত কি না!
তবে সে জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে মৌমাছিকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি! ছেলেভুলোনো এই ছড়ার মৌমাছি এক স্বাধীন পতঙ্গ, যে আপনমনে উড়ে-ঘুরে বেড়ায়। নিজে সে যত কর্মীই হোক, কাজের প্রতি তার কোনও দায় নেই। কিন্তু এই করোনা-পর্বে আর তা বলা যাচ্ছে না। এখন মৌমাছির কাঁধে, থুড়ি ডানায় বিপুল কর্মভার। তাকে এখন করোনা রোগীকে শনাক্ত করতে হবে!
ব্যাপারটা নিছক মজার নয়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, মৌমাছিকে (honeybees) দিব্যি করোনা রোগীর (corona) শনাক্তকরণে কাজে লাগানো যায়। তাতে খরচও কমে, হ্যাপাও কমে। polymerase chain reaction (PCR) test-এর পরিবর্তে হাতে-পাওয়া এই মৌমাছি-প্রযুক্তি খুবই কার্যকরী হতে পারে তুলনায় গরিব দেশগুলির ক্ষেত্রে ।
আরও পড়ুন: এ বার চিনের সিনোফার্ম টিকাকে অনুমোদন WHO-র
এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা, ১৫০টি মৌমাছিকে প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণটি Pavlovian conditioning method-য়ে সম্পাদিত হয়। পতঙ্গগুলি যতবার কোনও করোনাভাইরাসের গন্ধ পায় তত বারই তাদের চিনিমিশ্রিত জলের দ্রবণ দেওয়া হয়। কিন্তু যখন করোনাভাইরাসের গন্ধ এভাবে খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয় তারা তাদের আর চিনিজল দেওয়া হয় না। বিজ্ঞানীরাই এই করোনাভাইরাসওয়ালা স্যাম্পেল মৌমাছিদের সামনে এনে দেয়। এই স্যাম্পেলের মাধ্যমে তারা চোস্ত হয়ে ওঠে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব মৌমাছি পরে গন্ধ শুঁকেই শনাক্ত করতে পারবে কোভিড–১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা। কোভিড আক্রান্তের নমুনা ঠিকঠাক শনাক্ত করতে পারলে আসলে পুরস্কার হিসেবেই ওই মিষ্টিজল পাচ্ছে মৌমাছিরা। শনাক্ত করতে না পারলে মিলছে না কিছুই।
insect sniffing অবশ্য একেবারে নতুন কিছু নয়। ১৯৯০-এর পরবর্তী সময়ে কোনও কোনও দেশের প্রতিরক্ষায় কীটপতঙ্গ, যেমন বোলতা বা ফড়িং ব্যবহার করে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ করা হয়। ল্যান্ডমাইন খুঁজতে বা খনিজ পদার্থের সন্ধান পেতেও অতীতে পতঙ্গের ব্য়বহার করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের (netherlands) ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের (Wageningen University) গবেষণাগারে মৌমাছির এ বিশেষ প্রশিক্ষণ চলছে। সেখানে কোভিড–১৯ আক্রান্ত রোগীদের নমুনা শনাক্ত করতে দেওয়া হচ্ছে মৌমাছিকে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মৌমাছিরা কোভিড-১৯ আক্রান্তের নমুনা শনাক্তের সময়ে লম্বা ও সূক্ষ্ম শুঁড় প্রসারিত করছে। এমনই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের।
এই প্রকল্পের পরিচালক উইম ভ্যান ডার পোয়েল (Wim van der Poel) বলেন, শুরুতে আমরা মৌপালকদের থেকে মৌমাছি সংগ্রহ করেছি। এরপর সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় রেখেছি। এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠার পরে, প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে মৌমাছিগুলোর সামনে করোনার পজিটিভ নমুনা রাখা হয়েছে। এবং দেওয়া হয়েছে চিনিযুক্ত জল।
আরও পড়ুন: শুধু টিকা নয়, করোনা-মোকাবিলায় এবার মিলবে খাওয়ার ওষুধও!