কিংবদন্তি সরোদিয়া পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্মৃতিচারণায় সঙ্গীতজ্ঞরা
বিশিষ্ট সরোদিয়া পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে যেন এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে অভিভাবকহীন ভারতীয় সঙ্গীতজগতের বিশিষ্ট শিল্পীরা, শোকাহত শিল্পীরা জানালেন কিংবদন্তি সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁদের আত্মীক সম্পর্কের কথা। বুদ্ধদেববাবুর স্মৃতিচারণায় বিশিষ্টরা।
নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশিষ্ট সরোদিয়া পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে যেন এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে অভিভাবকহীন ভারতীয় সঙ্গীতজগতের বিশিষ্ট শিল্পীরা, শোকাহত শিল্পীরা জানালেন কিংবদন্তি সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁদের আত্মীক সম্পর্কের কথা। বুদ্ধদেববাবুর স্মৃতিচারণায় বিশিষ্টরা।
দেবাশিস রায় চৌধুরী (সঙ্গীতশিল্পী)
'' বুদ্ধদেব কাকুর (বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের) সঙ্গে আমার নিয়মিত কাজ করা শুরু হয় ১৯৯০ থেকে। উনি রবীন্দ্রনাথের গানের সুরের উপর বেশ করে বন্দিশ তৈরি করতে লাগলেন, আর উনিই এই কাজটা প্রথম করেছিলেন। এরপর তাঁর সঙ্গে দিল্লি, বেনারস, পটনা এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অনুষ্ঠান করেছি ওনার সঙ্গে। উনি পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্রের ছাত্র ছিলেন। তাঁর সেই ঘরনাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বুদ্ধদেব কাকু। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে, রাগসঙ্গীত নিয়ে ওনার মতো জ্ঞান খুন কম জনেরই আছে। এমন একজন গুরুগম্ভীর মানুষ হয়েও ভীষণ সুন্দর রসবোধ ছিল ওনার মধ্যে। উনি আমার কাছে অভিভাবকের মতো। কিছুদিন আগেও উনি আমায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কিছু গান নিয়ে কাজ করার জন্য, কিন্তু তা আর হল না, আফসোস থেকে গেল...''
বিক্রম ঘোষ (তবলাবাদক)
''বুদ্ধ জ্যেঠু, (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত) উনি আমার বাবার দাদার মতো ছিলেন। বাবার থেকে বছর পাঁচেকের বড়। ভীষণ কছের একজন, ছোটবেলা থেকে দেখেছি ওনায়। আমার জীবনের প্রথম পাবলিক কনসার্ট ১৯৭৯ 'রাইজিং ট্যালেন্ট কনর্সাট' উনিই করিয়েছিলেন। ছোট থেকেই ওনার অসামান্য বাজনা শুনেছি। আমি নিজেও বাজিয়েছি ওনার সঙ্গে। অসামান্য শিল্পী, একজন মহান শিক্ষক। সারা বিশ্বে ওনার ছাত্ররা রয়েছে। সঙ্গীতে বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল গভীর। বুদ্ধ জ্যেঠুকে সবাই মিস করবেন। সবার মাঝেই ছিলেন। খুব উৎসাহ দিতেন। ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। উনি যে ঘরনার শিল্পী ছিলেন সেটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, বড় ক্ষতি হয়ে গেল...''
অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় (সঙ্গীতশিল্পী)
''বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত চলে যাওয়াটা ভারতীয় সঙ্গীত জগতের বিরাট বড় ক্ষতি। বুদ্ধ কাকাকে আমি খুব কাছ থেকে পেয়েছিলাম। যার জন্য তাঁর গান বাজনার ব্যাপ্তি নিয়ে জানার সুযোগ হয়েছিল। সরোদিয়া হিসাবে তিনি তো অসাধারণ ছিলেনই, সরোদ সাধনাকে যে উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেছেন তার তুলনাই নেই। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে তিনি যে বন্দিশ তৈরি করেছিলেন সেগুলি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অংশ হয়ে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানটি আমি ও হৈমন্তী দি, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার ভাই অংশু বোস (তবলা বাদক) অনেক জায়গায় করেছি। একটা অ্যালবামও হয়েছে। আমার পিএইচডি করার সময় পুঁথিগত ভাবে শিখেছি, আর ওনার কাছে যেটা শিখেছি সেটা প্র্যাকটিকাল আর্ট। আর উনি একজন স্কলার ছিলেন, ভালো চাকরি করতে, খেতে ভালোবাসতেন, সকলকে খাওয়াতেও ভালোবাসতেন। অসাধারণ সঙ্গীত শিল্পীর পাশাপাশি, অসাধারণ মানুষও ছিলেন।''
তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার (সরোদবাদক)
'' বড় ক্ষতি, ভারতীয় সঙ্গীতের জগতের একজন গুরু চলে গেলেন। ছোট থেকে আমি ওনার ভক্ত। অনেক আশীর্বাদ পেয়েছি। ওনার মতো অভিভাবককে মনে পড়বে।''
রসিদ খাঁ (সঙ্গীতশিল্পী)
'' খুব কষ্ট হচ্ছে (গলা ধরে এল), দু'মাস আগেও আমার বাড়িতে এসিছেলেন। আমার ছেলের গান শুনে আশীর্বাদ করেছেন। এত গুণী, এত শিক্ষিত মানুষ খুব কম আছে। সঙ্গীতের জগতে বিরাট বড় ধাক্কা।''