Kabir Suman: হাসপাতালে 'গানওয়ালা'! হৃদরোগে আক্রান্ত কবীর সুমন...
Kabir Suman: হৃৎপিণ্ডে সমস্যার কারণে বাড়িতে অসুস্থ বোধ করেন শিল্পী। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সুমনের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কবীর সুমন ( Kabir Suman)। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ হার্ট ফেলিওর নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কবীর সুমনকে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাড়ে তিনটে নাগাদ হাসপাতালে আসেন তিনি। আপাতত মেডিসিন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, চেস্ট মেডিসিন, কার্ডিওলজির আন্ডারে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। সুমনের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা চলছে।
আরও পড়ুন- Saayoni Ghosh: জন্মদিনে মায়ের পারলৌকিক ক্রিয়া! মায়ের স্বপ্নপূরণের প্রতিজ্ঞা সায়নীর...
জানা যায় যে সোমবার হৃৎপিণ্ডে সমস্যার কারণে বাড়িতে অসুস্থ বোধ করেন শিল্পী। দেরি না করে তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সুমনের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে নানা মেডিক্যাল টেস্ট, সেই সব টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন ডাক্তাররা। জানা যায়, এদিন দুপুরের আহারের কিছু পড়েই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। বুকে সংক্রমণের সঙ্গে হৃদযন্ত্রেও সমস্যা রয়েছে শিল্পীর। সেই কারণেই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে কবীর সুমনের অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন তাঁর অনুরাগীরা। তবে জানা যাচ্ছে, বর্ষীয়ান শিল্পী সজাগ রয়েছেন, চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন। তাঁকে কড়া পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। এর আগেও একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুমন। সেই সময় শিল্পী শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথার সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝরাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় সত্তরোর্ধ্ব সঙ্গীতশিল্পীকে। তাঁকে দেখতে হাসাপাতালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯২ সালে বাংলা গানের যাত্রাপথ বদলে দিয়েছিলেন কবীর সুমন। হাতে গীটার নিয়ে একাই দাপিয়ে বেড়াতেন মঞ্চে। প্রেম থেকে শুরু করে বিদ্রোহ, তাঁর গানে গানে পুনর্জন্ম পেয়েছে কয়েক প্রজন্ম। বাংলা আধুনিক গানকে নতুন এক দিশা দেখানো ৭৫ বছর বয়সী কবীর সুমন এখন আর নতুন গানের অ্যালবাম না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষায় খেয়াল নিয়ে মেতে থাকেন তিনি। সোশাল মিডিয়ায় খেয়াল সংগীতও করে থাকেন প্রায়ই। সম্প্রতি রশিদ খানের মৃত্যুতেও নয়া গান বেঁধেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- Dev: প্রাপ্তবয়স্ক হলেন অভিনেতা দেব! ফ্যানেদের দিলেন বিশেষ উপহার...
ছেলেবেলায় বাবার হাতে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া সুমন একসময়ে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান গাইতেন রেডিওতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা তাঁর। এই শিল্পী জীবনের শুরুর দিকে কাজ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এবং পরে ভয়েস অব আমেরিকা এবং ডয়েচে ভ্যালেতে। মার্কিন লোকসংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকার কর্মী পিট সিগারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে একসময় হাতে গিটার ধরেন সুমন। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'তোমাকে চাই'। এক কথায় বাংলা আধুনিক গানে প্লাবন নিয়ে আসেন সুমন।
গানের অ্যালবাম ছাড়াও সুমন বেশি পরিচিত হন তাঁর কনসার্টগুলোয়। গিটার, পিয়ানো, মাউথঅর্গান বাজিয়ে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের সঙ্গে কথোপকথনে সুমনের জুড়ি পাওয়া ভার। মঞ্চ থেকে দেশ বিদেশের একাধিক বিষয়ে আওয়াজ তুলেছেন সুমন। তাঁর গান ছড়িয়েছে বিদ্রোহের আঁচ। শুধু আধুনিক গানের অ্যালবামই নয়। সিনেমার জন্যও গান তৈরি করেছেন তিনি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য সুমন পান জাতীয় পুরস্কার। শুধু গানে গানেই নয়, রাজনীতির মঞ্চেও উঠেছেন সুমন।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বদলে যাওয়া রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সঙ্গী হয়ে ওঠেন তিনি। নানা সাক্ষাতকারে তিনি জানান যে কীভাবে গানে গানে সেই সময় মানুষকে রাজনৈতিক সচেতন বানিয়েছিলেন তিনি। এরপর যাদবপুর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে সাংসদও হয়েছিলেন তিনি। তবে নিজের আদর্শের কাছে মাথা নত করতে অনিচ্ছুক সুমন, একসময় রাজনীতি ছেড়েও দেন তবে বরাবরই থেকে গেছেন মুখ্যমন্ত্রীর পাশে। বর্তমানে নানা সময় সোশ্যাল মিডিয়াতেই নিজের ক্ষোভের কথা জানান তিনি।
গত তিন দশক ধরে সুমনের জনপ্রিয় অ্যালবামের সংখ্যা অনেক। ‘তোমাকে চাই’ ছাড়াও, ‘বসে আঁকো’, ‘ইচ্ছে হল’, ‘গানওয়ালা’, ‘ঘুমাও বাউন্ডুলে, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, ‘জাতিস্মর’, ‘পাগলা সানাই’, ‘যাব অচেনায়’, ‘নাগরিক কবিয়াল’, ‘আদাব’ এখনও জনপ্রিয় নতুন প্রজন্মের কাছেও।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)