রবি-ভাবনা, আধুনিকতার মোড়ক ও ক্যামেরা

Updated By: Aug 12, 2015, 08:19 PM IST
রবি-ভাবনা, আধুনিকতার মোড়ক ও ক্যামেরা

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম: শেষের কবিতা

রেটিং: ***

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা এক অন্য সময়ের আলেখ্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কাছেও শেষের কবিতা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। এমন এক সামাজিক পরিস্থিতিতে তিনি লিখেছিলেন, যখন সমসাময়িক সাহিত্যে একটি রবীন্দ্রবিরোধিতা তৈরি হচ্ছে। যখন বলা হচ্ছে রবীন্দ্রসৃষ্টিই শেষ কথা নয়। একরকম বিচলিত হয়েই তিনি এই উপন্যাস লিখেছিলেন। অমিত-লাবণ্য-কেটির প্রেমকাহিনি, যা এখনও বাংলা ছবির জগতে বিভিন্ন মাত্রায় অনুসরণ ও অনুকরণ করা হয়েছে। রয়েছে কালজয়ী কিছু সংলাপ আর অবশ্যই, প্রতিটি চরিত্র বাহ্যিক চাকচিক্যে পরিপূর্ণ। নয় চতুরঙ্গ, নয় রক্তকরবী।

শেষের কবিতা উপন্যাসের অ্যাডাপ্টেশন অবশ্যই পাহাড়প্রমাণ চ্যালেঞ্জ। সমালোচকের কলম আর কলম থাকে না, খড়গ হয়ে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে। বিশেষ করে ১৯২৯ সাল, প্রায় আট দশকেরও বেশি আগে লেখা কাহিনি। সুমন মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্র উপন্যাসকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেছেন, মূর্ত হয়েছে ক্যামেরার লেন্সে। অমিত, লাবণ্য, কেতকী এতদিনে বহুচর্চিত রূপ পেয়েছে। দর্শকের মনে বড় বেশি দৃঢ তাদের উপস্থিতি। রাহুল বোস অভিনয় করেছেন অমিত রায়ের চরিত্র। উপন্যাসের অমিত বিলেতফেরত, ধোপদুরস্ত, আধুনিক যে রবীন্দ্রবিরোধী ভাবনায় উদ্বুদ্ধ। মানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখনও তাঁর অভিনয় এত বেশি আন্ডারটোনড, যে জড়তা মনে হয়।

একই দিনে স্বস্তিকা মুখার্জির দ্বিতীয় ছবি মুক্তি পেল। কেতকীর ভূমিকায়  মানানসই। অভিনয়টাও ভালই করেছেন। লাবণ্যের চরিত্রে কঙ্কণা অসাধারণ। দুই ভিন্নমুখী, ভিন্ন প্রতিভার অধিকারী নারীর চরিত্রে দুজনেই সাবলীল। নম্বর দিলে কঙ্কণাই বেশি এগিয়ে থাকবেন। শোভনলালের চরিত্রে দেবদূতের অভিনয়টাও লক্ষ্য করার মতো। মঞ্চ ও সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা এখানে যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখেন।

কখনও লন্ডন, কখনও শিলং। ক্যামেরার লেন্স তার সবরকম সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে দিল দর্শকের সামনে। ক্যামেরাও শেষের কবিতার অন্যতম চরিত্র। কেন না, দৃশ্যনির্মাণ এই উপন্যাসের সবচেয়ে বলিষ্ঠ জায়গা। ঐতিহাসিক মুহূর্তটাও ধরতে পেরেছেন পরিচালক। শেষের কবিতা আখ্যানের আধুনিকতা অনেকটাই ধরা পড়েছে চিত্রনাট্যে, সংলাপে। নিঃসন্দেহে, সুমন মুখোপাধ্যায়ের একটি সোচ্চার প্রচেষ্টা।

.