আজীবন ভালো থেকো, আমরণ ভালো থেকো..

Updated By: Aug 12, 2015, 07:38 PM IST
আজীবন ভালো থেকো, আমরণ ভালো থেকো..

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম: অনুব্রত ভালো আছো

রেটিং: ****

এক জীবনের প্রান্তে বসে অন্য জীবনের অপেক্ষায় থাকার কাহিনি। জীবন যেমন সত্য, তেমনি মৃত্যুও অনির্বার্য। তা জেনেও কেমন যেন স্বস্তিতে থাকতে ভালবাসি আমরা। এই ছবির চরিত্রেরা সকলেরই জীবনে অন্য বসন্ত। সবাই যেন শীতের মানুষ। জীবনটা শুধু বাড়ি আর হাসপাতাল, হাসপাতাল আর বাড়ি, এই গণ্ডির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এক কঠিন জীবনের দরজাটা, চাবি দিয়ে খুললেন পার্থ সেন।

ঋত্বিক, দেবলীনা, স্বস্তিকা, নীল প্রত্যেকেই এই ছবিতে নিজের বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন। প্রশ্ন আসে, কেনই বা এমন কাস্টিং? বর্ষীয়ান অভিনেতাদের নিলে কী এমন ক্ষতিবৃদ্ধি হত? ছবিটা কিছু দূর এগোলেই বোধগম্য হবে, পরিচালকের দৃষ্টিটা কতটা স্বচ্ছ্ব ছিল। ঋত্বিক অভিনয় করেছেন ৫৫ বছরের এক প্রৌঢ়ের চরিত্রে। ইতিমধ্যেই তিনি মাদ্রিদ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। কম কথা নয় সেটা! কিন্তু সব্বাইকে চমকে দিয়েছেন দেবলীনা। ছোটপর্দার পরিসরে তাঁকে আটকে রেখে টালিগঞ্জ যে চরম ভুল করেছে, তার খেসারত কে দেবে? আপনারা যারা ক্লিন্ট ইস্টউডের মিলিয়ন ডলার বেবি দেখেছেন, তাঁরা হিলারী সোয়াঙ্কের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা এক সাধারণ মহিলার চরিত্রে যেভাবে অভিনয় করলেন দেবলীনা, বিগত দিনের এবং আগামী দিনের যে-কোনও অভিনেত্রীর কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবেন তিনি। স্বস্তিকা মুখার্জি ও নীলও ভাল অভিনয় করেছেন। আর অবশ্যই ক্রেডিট প্রাপ্য প্রত্যেক মেক-আপ আর্টিস্টের। এতটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রত্যেকের বয়স বাড়িয়ে দেওয়াটা সত্যিই চ্যালেঞ্জ ছিল, যেটা তাঁরা অনায়াসে উতরে দিয়েছেন। খরাজ মুখার্জি।

পার্থ সেন এর আগে বালুকাবেলা ডট কম নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন, সেই ছবি দেখে এতটুকু টের পাওয়া যায়নি যে, পরের ছবিতে তিনি মানব অনুভূতির এতটা গভীরে যেতে পারেন। ১৪০ মিনিটের ছবি, কিন্তু গল্পের গতি খুবই মন্থর, বিষয়ের সঙ্গে একেবারে খাপখাওয়ানো। ভাল থাকার পাসওয়ার্ড হয়ত জানা যাবে না। কিন্তু, জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য মৃত্যু শব্দটাকে সহজে মেনে নেওয়ার একটা মানসিকতা অবশ্যই তৈরি করবে এই ছবি। তৈরি করবে আজীবন ভালো থাকার ও আমরণ ভালো থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

যেটুকু খামতি মনে হল, সেটা বাজেট কনস্ট্রেন নয়। সেট ডিজাইনিং আরও ভাল হতে পারত। ডিওপি খুব ভালভাবেই চেষ্টা করে গিয়েছেন। উদারবিস্তৃত সমুদ্রের দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের ওঠাপড়া দোলাচলের জীবনদর্শন সেখানে তীব্র।

 

.