বদলা নয়, বরুণের বদল!
ছবির নাম: বদলাপুর
ওয়েব ডেস্ক: ছবির নাম: বদলাপুর
রেটিং: ****
ভোলবদল বলিউডে প্রায়ই হয়। নতুন ভাবনা, নতুন পরিচালক প্রায়ই উঠে আসেন। তবুও বলিউডের রোমান্স ধারার ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্টেশন হয়েছে অনেক বেশি, কিন্তু রোমাঞ্চ ধারার ছবি নিয়ে সফল পরীক্ষা নিরীক্ষার জায়গাটা কমেই এসেছে। পরিচালক শ্রীরাম রাঘবনের ফিল্মোগ্রাফি সীমিত। ছবি বানাতেও সময় নেন অনেক বেশি। এক্কেবারে সঠিক মাত্রায় রোমাঞ্চের গাঢত্বে না পৌঁছনো পর্যন্ত শট ওকে করেন না। এজেন্ট বিনোদ ছবিতে এই মাত্রাবোধটা তেমন ক্লিক করেনি। বদলাপুর পুরোটাই বদলে দিল। প্রত্যেক ছবিতেই যেমন শ্রীরাম নিজের সই রাখেন, এবারটা একেবারে অননুকরণীয়।
একজন ভঙ্গুর মানুষ, যিনি স্ত্রী-পুত্র হারিয়েছেন। দুজনেই খুন হয়েছেন এক আততায়ীর হাতে। বলিউডি ছবিতে এমন প্রতিহিংসা-পর্ব অগুনতি হয়েছে। কিন্তু নায়কের মুখভঙ্গি ও ম্যানারিজমে এমন পরিবর্তন, সত্যিই দেখা যায়নি। টানটান স্ক্রিপ্ট চেনা ছকের গল্পকে অচেনা রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। আলো-আঁধারির এই রাস্তায় মানুষ চেনা খুব শক্ত। প্রেডিক্টেবল লাইন থেকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার এক মগজ ধোলাই বলা যেতে পারে। আর এখান থেকেই শুরু বরুণের পথ চলা।
নওয়াজউদ্দিনের পাশে বরুণ ধাওয়ান! কম্বিনেশনটা অনেকেরই বদহজম হবে। প্রায় আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ওয়র্ল্ড কাপ ম্যাচের মতোই। কিন্তু প্রত্যেকটি অভিব্যক্তিতেই বরুণ বুঝিয়েছেন যে তিনি কতখানি তৈরি। হোমওয়র্ক বলে যে-বিষয়টা খুব হালকা চালেই নেন বহু তারকা অভিনেতা, বরুণ তাঁদের ব্যতিক্রম। শ্রীরামের প্রি-ফিল্ম ওয়র্কশপে অন্যতম বাধ্য ছেলে ছিলেন বরুণ। এই বরুণ স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার নয়। ম্যায় তেরা হিরো কিম্বা হামপটি শর্মা কি দুলহনিয়া-র মধ্যেও একে খুঁজতে যাবেন না! নিজের ইমেজ ভাঙাগড়ার ট্রিকস অনেকটাই এই আঁতুড়ঘরে শেখা। তবে শেখা আর প্রপার ডেলিভারির মধ্যে কোনও জড়তা নেই বরুণের। এ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের পর বলিউডের অনেক পরিচালকই নতুন করে ভাবতে পারেন।
গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ছবিতে অনুরাগ কাশ্যপ কাস্ট করেছিলেন নওয়াজ-হুমা জুটিকে। এই ছবিতে তাঁদের কেমিস্ট্রি একটা নতুন বাঁক নিয়েছে। ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। বরুণের স্ত্রীর ভূমিকায় ইয়ামি গৌতমও বেশ সপ্রতিভ। ভাল লাগবে দিব্যা দত্ত ও রাধিকা আপ্তেকেও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে চোখ টানবে নওয়াজ-বরুণের দ্বান্দ্বিক উপস্থিতি। ছবি জুড়ে সেটা অনুভব করবেন।
অসম্ভব তীক্ষ্ণ, ধারালো এই ছবির ক্যামেরাওয়র্ক। ক্যামেরা কথা বলতে বলতে এগোয় চরিত্রের সঙ্গে। অনেক সময়েই চিত্রনাট্যের কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে একে ব্যবহার করেছেন অনিল মেহতা। অ্যাকশন ঘরানার ফিল্মে অনেকটাই দায়িত্ব থাকে ক্যামেরাম্যানের স্কন্ধে। এ ছবি আগামী বছর সিনেমাটোগ্রাফিতে একাধিক পুরস্কর পেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
বদলাপুর একশো কোটি ক্লাব মেম্বারশিপ পাবে কি না জানা নেই, কিন্তু বদলে যাওয়া বরুণ ধাওয়ান কিন্তু অনেকেরই ঘুম কেড়ে নিতে চলেছেন, খুব শিগগির!