দিলওয়ালে হাম্পটি ডাম্পটি লে যায়েঙ্গে
না বললেও চলে, এ ছবির এক ও অদ্বিতীয় রেফারেন্স পয়েন্ট শাহরুখ-কাজলের ব্লকবাস্টার দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। টোটো টোকা নয়, ট্রিবিউট। সেটারও একটা কায়দা আছে, অমনি অমনি ট্রিবিউট বললেই হবে না।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: হাম্পটি শর্মা কি দুলহনিয়া
রেটিং: ***
না বললেও চলে, এ ছবির এক ও অদ্বিতীয় রেফারেন্স পয়েন্ট শাহরুখ-কাজলের ব্লকবাস্টার দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। টোটো টোকা নয়, ট্রিবিউট। সেটারও একটা কায়দা আছে, অমনি অমনি ট্রিবিউট বললেই হবে না। সিকোয়েন্সগুলো এমনভাবে বানাতে হবে যাতে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপে খাপ মেলে। জোর করে চাপানো মনে না হয়। এই কাজটা কিন্তু পরিচালক বেশ মনোযোগ দিয়েই করেছেন, বেশ কিছু জায়গায় চূড়ান্ত সাকসেসফুলও বটে। আবার কোনও জায়গায় একেবারে এলেবেলে।
উদাহরণ এক। আবার বছর কুড়ি পরে যদি আরও একবার দিলওয়ালে দুলহনিয়া বানানো হয়, তাহলে সেই বিখ্যাত ট্রেন সিকোয়েন্সটা কেমন হবে? ডিসিশন নেওয়ার ব্যাপারে মহিলা ব্রিগেড এখন অনেক এগিয়ে। কাজেই শাহরুখের জায়গায় ট্রেনে থাকবেন আলিয়া ভাট। আর পড়ি-কি-মরি করে দৌড়ে আসবেন বরুণ ধাওয়ান।
দুই। দ্বিতীয়ার্ধে আলিয়া ভাট মাইক্রোফোন নিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন- হম এক বার জিতে হ্যায়, এক বার মরতে হ্যায়...অগলা লাইন হম ভুল গয়ে! স্ক্রিপ্টরাইটারের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারা যায়!
আরও দুয়েকটা উদাহরণ দেওয়াই যেত। ভার না বাড়িয়ে সরাসরি ছবিতে ঢুকি। আলিয়া-বরুণ জুটির দ্বিতীয় ছবি এটা। স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার-এ অভিষেকের পর আবার। মাত্র কয়েকটি ছবিতেই এমন চূড়ান্ত ম্যাচিয়োরিটি! খুব প্রতিভাবান শিল্পীর নামও এখুনি মাথায় আসছে না, যাঁরা এত তাড়াতাড়ি জাদু শানপাথরে নিজেদের ঘষেমেজে এমন ঝকঝকে করে ফেলেছেন। আলিয়া এই দশকের সেরা আবিষ্কার। ক্যামেরার চোখও নতজানু হবে এই নতুন তারার কাছে। অতি কঠিন অভিব্যক্তিও তাঁর কাছে জলবত্ তরলং। একজনের মধ্যেই শাবানা-স্মিতা-মাধুরী। কম্বো প্যাক!
আর বরুণ ধাওয়ান? প্রোমোশনে এসে ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, বাবার সব কমেডি ছবিই তিনি গোগ্রাসে গিলেছেন। কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। অসাধারণ কমিক টাইমিং এত দ্রুত কীভাবে রপ্ত করলেন, তাজ্জব! হাম্পটি শর্মা ও কাব্যপ্রতাপ সিং-এর রোম্যান্স তাই জমে আইসক্রিম। প্রথম হাফটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবেন। আশুতোষ রাণাকে পাওয়া গেল আবার, মাঝে কয়েক বছর যে তিনি ছিলেন না, সেই স্মৃতি আবার উসকে দিলেন। তবে সিরিয়াস দৃশ্যে আরও তালিম প্রয়োজন। আলিয়ার বাবাকে তিনি এই ব্যাপারে অ্যাপ্রোচ করতে পারেন!
কুড়ি বছর পর অনেক কিছুই বদলে যায়। জীবনানন্দ দাশ থেকে রিপ ভ্যান উইঙ্কল, দৃষ্টান্ত অঢেল। কিন্তু বিয়ের গল্পে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। নো চেঞ্জ। তাই দ্বিতীয়ার্ধে স্ক্রিপ্টের ফানুশ ফুটো হয়ে তরতর করে নেমে আসে, কোনও এক্সপেরিমেন্টেশনের চক্করে না গিয়ে। বদল যেটুকু নজরে আসে, তা হল অনবদ্য ব্র্যান্ডিং। নায়িকা তার নায়ককে যে উপহারটি দেয়, এক্কেবারে নতুন মডেলের মারুতি। খোঁজ নিয়ে দেখুন, এখনও বাজারে আসেনি! এই হপ্তার শেষে পাবেন। প্রোডিউসার পাইপয়সা তুলে নিতে পেরেছেন তুখড় বুদ্ধিপ্রয়োগ করে। ব্র্যান্ডেড শাদির ডিজাইনার পোশাকেও নাম বলা হয়েছে ডিজাইনারের। আরও আছে। কিন্তু সেগুলো তোলা থাক দর্শকের জন্য। ছানবিন করে তাঁরাই বের করুন।
নাচাগানার দৃশ্য এখনই সুপারহিট। নতুন জেনারেশনের কাছে ঝড়-তোলার মতোই রেসপন্স পেয়েছে। গান বাজছে ডিস্কে, পার্টিতে। সেলিব্রেশনই এ ছবির এক অন্তর্নিহিত ঝরনাধারা। সবার মধ্যে এখনই প্রপাত হয়ে আছড়ে পড়েছে। ছবির গুণাগুণ যা-ই হোক। এটা একটা বড় প্রাপ্তি।