সিকন্দর কি কাহানি

শিল্পীর স্বাধীনতা দরকার। যদি কোনও দৃশ্য অশ্লীল মনে হয়, তা কেটেছেটে ঠিক করা যায়। সেটাই করা উচিত। নিষেধাজ্ঞা কখনই উচিত নয়।      

Updated By: Dec 28, 2017, 08:38 PM IST
সিকন্দর কি কাহানি
পাপা কেহতে হ্যায় বড়া নাম করে গা... দিয়ে নিজের অনুষ্ঠান শুরু করলেন উদিত নারায়ণ।

সৌরভ পাল 

ক্রিসমাস পেরিয়ে বর্ষবরণের দিকে একটু একটু করে পা বাড়াচ্ছে কলকাতা। উত্তর থেকে দক্ষিণ সেজে উঠছে মহানগরী। আলো আর আমজনতা যেভাবে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পাটুলি উৎসবে সামিল হয়েছে তাতে চোখ বুজে বলেই দেওয়া যায়, বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের (কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরপিতা) পাড়ায় তখন মহাষ্টমীর সন্ধ্যা। এমন মনে হওয়ার কারণ, নয়ের দশকের স্লোগান হয়ে যাওয়া গানের গায়ক উদিত নারয়ণ। তৃতীয় বর্ষের পাটুলি উৎসবে তিনিই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রীতি আর সংস্কৃতির সেই উৎসবে 'রোম্যান্স কিং'য়ের মুখোমুখি হল ২৪ ঘন্টা ডট কম।   

     

জীবনের ৬২তম বসন্তে, নবর্ষের প্রাক্কালে রেজোলিউশন কী? 

উদিত নারায়ণ: রেজোলিউশন তো নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু আমি এবছর স্বাস্থ্য নিয়েই ব্যস্ত। শরীর সুস্থ রাখার চেষ্টায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেব। 

একসময় ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়েছেন। আটের দশক, নয়ের দশকে বলিউডের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গানই আপনার কণ্ঠে। এই শতকে আপনি তেমনভাবে নেই। কারণটা কী? 

উদিত নারায়ণ: (হেসে উত্তর)। ঠিক আছে। আমার মনে হয় সবারই সুযোগ পাওয়া উচিত। বিগত ৩০ বছর আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আছি, গান করছি। অনেক মানুষের আশীর্বাদ আমি পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। নতুনরা সুযোগ পাচ্ছে, আমি খুশি। 

পরবর্তী উদিত নারয়ণ-কে? আপনার ছায়া দেখা যার মধ্যে...

উদিত নারায়ণ: (হাসিতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, কেউ নেই) নিজের গুণগান করা উচিত নয়। আমার গান সবাই পছন্দ করে। আমাকে সবাই ভালবাসে। আগামী সময়ও আমাকে ভালবাসবে। ম্যায় চারো তরফ হু (আমি সব জায়গায় আছি)। কেয়ামত সে কেয়ামত তক হু। 

হারি বাজি কো জিতনা জিসে আতা হ্যায়... আপনার গাওয়া এই গান বিরাটদের ড্রেসিং রুমের প্লে লিস্টের ফার্স্ট চয়েস। এই অনুভূতি কেমন?  

উদিত নারায়ণ: ছবির নাম- যো জিতা ওহি সিকন্দর। গানের শব্দ- সিকন্দর ওহি কেহলাতা হ্যায়, হারি বাজি কো জিতনা জিসে আতা হ্যায়। যার অর্থ, ভয় না পেয়ে চেষ্টা করলে জয় হয়। সাময়িক হার হলেও সিকন্দর সবসময় শেষ বাজি জেতে। ক্রিকেট, ফুটবল সব খেলাতেই এই গান খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা দেয়। খুব ভাল লাগে এই অনুভূতি।  

জীবনে ১৯ হাজার গান রেকর্ড করেছেন। আপনার পছন্দের গান কোনটা?

উদিত নারায়ণ: পাপা কেহতে হ্যায় বড়া নাম করে গা। যে গান আমাকে পরিচিতি দিয়েছে সেই গানকেই আমি সবসময় অগ্রাধিকার দেব। ইটস লাইক অ্যা ইউনিভার্সাল থট (এটা একটা বিশ্বজনীন ভাবনা)। এখনও সবার মধ্যে এই গানের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। পিতা-পুত্রের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করেছে এই গান। 

ছেলে আদিত্যের সঙ্গে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আছে? 

উদিত নারায়ণ: আই লাভ ইউ ড্যাডি গেয়েছি। সেসময় আদিত্য ছোট। এখন আদিত্য অনেক বর হয়ে গেছে, ওর অনেক নামডাকও হয়েছে। সঞ্চালক হিসেবে আদিত্য বড় নাম। আগামী দিনে অনেক গান করব ওর সঙ্গে। 

আপনার সময়ের ইন্ডাস্ট্রি আর এখনকার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কী কী ফারাক আপনার চোখে পড়ছে?

উদিত নারায়ণ: অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগে ফিল্ম মেকিং-এর যে পদ্ধতি ছিল, তা পাল্টে গেছে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ছবিটাও একই রকম। কে গান গাইছে, কেই বা গীতিকার, কে শিল্পী হল, কিছুই বোঝা যায় না। আগে কাউকে বলতে হত না, কে গান লিখছে, কে সুর করছে, কে গাইছে। এখন সব বদলে গিয়েছে। এখন অনেকের মধ্যেই প্রতিভা আছে। অনেককেই শুনি যারা 'পঞ্চম দা'কে (আর ডি বর্মন) অনুসরণ করছেন। এল-পি'কে (লক্ষীকান্ত-পেয়ারেলাল) অনুসরণ করছেন। নিজের সৃষ্টি খুব কম।  

মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি-তে দীর্ঘ দিন কিশোর কুমারকে ঘিরে শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি অন্য ঘরানা এনেছেন...

উদিত নারায়ণ: (স্বভাবজাত হাসিতে কথা থামিয়ে দিয়ে) আমি তো নিজে রফি সাব'কে (মহম্মদ রফি) অনুসরণ করি। কিশোরা দা, লতাজি, আশাজি, মান্না দা, মহেন্দ্র কাপুর, মুকেশজি, এনারা সবাই আমার আদর্শ। তাঁরা কিংবদন্তি। এনারা একেকজন আমাদের কাছে বইয়ের মত। 

এখনকার কণ্ঠশিল্পীদের নিজস্ব স্টাইল আছে, এটাকে ঠিক কীভাবে দেখেন?
 
উদিত নারায়ণ: নিজেরা এক্সপেরিমেন্ট করে নতুন নতুন গান গাইছেন। কোনও কোনও কাজে হয়ত ভাল লাগছে। তবে সব গানেই এক শৈলী একেবারেই শুনতে ভাল লাগছে না। 

ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁই ছুঁই। পদ্মভূষণে বিভূষিত, তিন তিনটি জাতীয় পুরস্কার এবং পাঁচটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জয়ী তারকাকে দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় পাটুলি। উপনগরীর স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে উপচে পড়া ভিড়। গগণভেদী আওয়াজ...সঞ্চালক বারে বারে বলছেন, আর একটু অপেক্ষা...এরপরই পাটুলি উৎসবের মঞ্চের দখল চলে যাবে বিহারীবাবু উদিত নারয়ণের কাছে। তার একটু আগে এই মঞ্চেই দর্শক দেখেছে কারাবন্দিদের নিয়ে অলকানন্দা রায়ের বাল্মিকি প্রতিভা। এই মঞ্চেই লোপামুদ্রা-ব্রততীর যুগলবন্দির (কবিতা আর গানের রসায়ন) স্বাদ পাওয়া হয়ে গিয়েছে ১৮ হাজার দর্শকের। উদ্যোক্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তও এবার উঠে দাঁড়িয়ে উদিতজি-কে নিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু, এই সময়ের সবথেকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটা না করেই চলে যেতে হবে? না সেটা হল না। স্যার, শেষ প্রশ্ন। সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণে আপনি সম্মানিত হয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যের সরকার এখন সিনেমায় নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব। আপনি কী বলবেন? 

উদিত নারায়ণ: আমার এসব বলা উচিত না। আমি তো একজন শিল্পী। এখন যেভাবে সিনেমা ব্যান করা হচ্ছে, তা হওয়া উচিত না। দীর্ঘ পরিশ্রম দিয়ে বানানো ছবি রিলিজ করা দরকার। এত টাকা দিয়ে ছবি বানিয়ে যদি রিলিজই না করে তাহলে, অনেকেই সমস্যায় পড়বে। ক্ষতি হবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির। 

আর, শিল্পীর স্বাধীনতা...

উদিত নারায়ণ: শিল্পীর স্বাধীনতা দরকার। যদি কোনও দৃশ্য অশ্লীল মনে হয়, তা কেটেছেটে ঠিক করা যায়। সেটাই করা উচিত। নিষেধাজ্ঞা কখনই উচিত নয়।   

.