যে তেরঙ্গাকে পতপত করে উড়তে দেখে গর্বিত হন, জানেন ওটার নকশা করেছিলেন কে?
স্বরূপ দত্ত
১৫ আগস্ট। স্বাধীনতার দিন। কত কত অতীত। কত কত ইতিহাস। কত কত কষ্ট। কত কত অবিচার। কত কত অত্যাচার। কত কত শহিদ। কত কত লড়াই। কত কত বিপ্লব। কত কত মৃত্যু। সব একদিন শেষ হয়ে গিয়েছিল। অবেশেষ মিলেছিল সেই অমোঘ শব্দ। 'স্বাধীনতা'। বর্বর ব্রিটিশদের থেকে নিজেদের অস্তিত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার স্বাধীনতা। আমাদের দেশকে আমরাই চালাবো, অন্যের নাক গলানো সহ্য করব না, এই স্বাধীনতা। এরপর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যে স্বাধীনতা পাওয়া গেল, সেটাই আমাদের বীর শহিদদের স্বপ্নের স্বাধীনতা ছিল কিনা সে তো আজ ৭০ বছর পরেও আলোচনার বিষয়। নানা মত উঠে আসার বিষয়। তবু, এটা স্বাধীনতা। কারণ, আমাদের দেশের লাখো লাখো মানুষ বীরের মতো মৃত্যুবরণ করে এই স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছেন। এই প্রাপ্তি স্বীকার তাঁদের আত্মাকে বীরের শ্রদ্ধা দেওয়া প্রতিবার। আজ স্বাধীনতা দিবসে এ দেশের প্রত্যেক বীর শহিদকে প্রণাম আর তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে অবশ্যই পালন করব স্বাধীনতা দিবস।
এবার আসি লেখার প্রসঙ্গে। স্বাধীনতা দিবস। লাগামছাড়া আনন্দ। সব জায়গায় কত অনুষ্ঠান। কত বাড়ির ছাদে উঠবে তেরঙ্গা। গর্বে বুক ফুলে উঠবে আমাদের সব ভারতবাসীর। স্যালুট। কিন্তু একবার ছোট্ট করে যদি কেউ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে ওঠে, এই যে আমাদের পতাকাটা পতপত করে উড়ছে, ওই পতাকাটা কার বানানো? উত্তর দিতে পারবেন তো? দিতে পারলে, বলব, এটা জানাটাই আপনার-আমার দায়িত্ব। কিন্তু না বলতে পারলে, আমার-আপনার না জানার থেকেও বেশি করে ওই মানুষটাকে অসম্মান করা হবে না তো? মনে তো হয় সেটাই। আজ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও যদি আমাদের শিক্ষিত সমাজ না জানেন, কার বানানো পতাকাকে আমরা মাথার উপর রাখি। কার বানানো পতাকাকে দেখে আমাদের ১২০ কোটির দেশের একটা জাতি গর্ব অনুভব করে।
আর অপেক্ষা না করিয়ে নামটা এবার বলেই দিই। শ্রী পিঙ্গলি বেঙ্কইয়া গারু। হ্যাঁ, আধুনা অন্ধ্রপ্রেদেশে জন্মানো এই মানুষটাই বানিয়েছিলেন আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা। তাঁর জন্ম ১৮৭৬ সালের ২ আগস্ট! বড় গরিব ঘরের মানুষ ছিলেন। তবু, পড়াশোনা করেছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন কলম্বোতে। পরে ফের যান লাহোরে। সেখানে উর্দু, জাপানি এবং ইতিহাস নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেন। পরে দেশের রেলে চাকরিও করেন। গান্ধিজির প্রবল অনুরাগী ছিলেন। পরিচয় হওয়ার পর থেকে গান্ধিজির সব আন্দোলনের সঙ্গী ছিলেন। আধুনিক স্বাধীন ভারতের নকশা কেমন হবে, সেটা ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনিই। হ্যাঁ, আজ আমরা যে জাতীয় পতাকা দেখে চোখ সরাতে পারি না। প্রথমবার কল্পনা করে সেই তেরঙ্গার জন্ম দিয়েছিলেন তিনিই। আজ গোটা দিন স্বাধীনতা দিবস পালন করুন। আমাদের দেশের সব বীরদের আত্মার শান্তি কামনা করুন আর অবশ্যই প্রণাম করুন আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন আমাদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে জন্মাতে দেওয়ার জন্য। আর অবশ্যই যতবার তেরঙ্গাকে পতপত করে উড়তে দেখে গর্বিত হবেন, ততবার গর্ব করে নামটা উচ্চারণ করুন। শ্রী পিঙ্গলি বেঙ্কইয়া গারু। তাঁর প্রতি সেরা শ্রদ্ধা জানানো হবে এটাই।