ডেটলাইন ব্যাটলফিল্ড
য়াংখেরে স্টেডিয়ামের ভীড়ে ঠাসা কনফারেন্স রুমে একের পর এক প্রশ্ন ছুটে যাচ্ছিল যাঁর দিকে, তিনিও হাসছিলেন। তাঁর পাশে বসা দলনেতাও হাসছিলেন। হাসারই কথা, তাঁরাই তো আরবসাগরের পাড়ে সদ্য হাসির সুনামি এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ জিতে, যে সুনামি আছড়ে পড়ছিল গোটা দেশের ঘরে ঘরে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। মাঠের মধ্যের বেপরোয়া মেজাজ সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে আনা যুবরাজ সিং ছিলেন সদ্য লড়াই শেষ করা আমেজে।
চারপাশে শুধু হাসি ছিল সেদিন। সবাই হাসছিলেন। গোটা মাঠ উপচে পড়া দর্শক হাসছিলেন। প্রেসবক্সে বসা ভারতীয় সাংবাদিকরা হাসছিলেন। এমনকি আইসিসি-র বিদেশি কর্মীরাও হাসছিলেন। ওয়াংখেরে স্টেডিয়ামের ভীড়ে ঠাসা কনফারেন্স রুমে একের পর এক প্রশ্ন ছুটে যাচ্ছিল যাঁর দিকে, তিনিও হাসছিলেন। তাঁর পাশে বসা দলনেতাও হাসছিলেন।
হাসারই কথা, তাঁরাই তো আরবসাগরের পাড়ে সদ্য হাসির সুনামি এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ জিতে, যে সুনামি আছড়ে পড়ছিল গোটা দেশের ঘরে ঘরে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। মাঠের মধ্যের বেপরোয়া মেজাজ সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে আনা যুবরাজ সিং ছিলেন সদ্য লড়াই শেষ করা আমেজে।
বুঝিনি আরও একটা লড়াই ততক্ষনে তাঁর জন্য আস্তিন গোটাতে শুরু করে দিয়েছে।
সে লড়াই বাঁচার লড়াই।
ফাইনালের আগে বেশ কয়েকবার বমি করেছিলেন যুবরাজ। তখন সেটা ছিল ক্লান্তি, টেনশন, ধকলের যোগফল। আসলে ফুসফুসের পাশের টিউমারটা তখন চাপ বাড়াচ্ছিল। রোগের আর কি, রোগের তো আবেগ থাকে না,জ্ঞানগম্যিও না। অথবা এসবই থাকে। তাই যুবরাজদের মত লড়াকুদের জন্যই খুলে দেয় অন্য এক ফ্রন্ট, লড়াইটা যাতে সেয়ানে সেয়ানে হয়। মারণ রোগকে বারণ করার ক্ষমতা যুবরাজের আছে,থাকতেই হবে। কারন যুবরাজরা তো কখনও একা লড়েন না, একার জন্যও লড়েন না। তাঁরা দেশের জন্য লড়েন,অনেকের জন্য লড়েন। যুবরাজের এই লড়াইটাও অনেকের জন্য, সেই সব মানুষের জন্য যাঁরা কোনওদিন কোনও লড়াই জেতেননি। অথবা যাঁদের লড়াই জেতার খবর খবরের কাগজের পাতায়,নিউজ চ্যানেলের পর্দায় জায়গা পায় না। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত এরকম বহু মানুষ অথবা রোগকে হারান বহু অখ্যাত যোদ্ধার জন্য লড়ছেন যুবরাজ। লড়ছেন এই খবরটা প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে।
-আমি পারি, আমরা পারি,আপনিও পারবেন।
হতে পারে বিশ্বকাপ জয়ের পর পরই প্যাড পরার সুযোগ না দিয়ে ক্যান্সারের বাউন্সার এক মুহূর্তের জন্য হলেও যুবরাজের ডিফেন্স কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ফাঁকে ঢুকে পড়েছিল সংস্কার, সময় নিয়েছিল জড়িবুটি। কিন্তু সেই দুর্বল মুহুর্তেও যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাঁর বন্ধু, ক্রিকেট।
খেলাটা যুবরাজকে অনেক কিছু দিয়েছে। অর্থ, খ্যাতি, প্রচার, সুন্দরী বান্ধবী, আরও অনেক অনেক কিছু। আর সবকিছুর আড়ালে দিয়েছে একটা বিশ্বাস, ছোটবেলার সেই বন্ধুর মত যে সবসময় কানের পাশে চুপিচুপি এসে বলে যায়- আমি তো আছি। আর তাই সবকিছু জেনে, সবকিছু ভুলে যুবরাজ মাঠে নেমে পড়তে পারেন এই বিশ্বাসে, তাঁর ক্রিকেট তাঁর সঙ্গেই আছে।
ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলির একটা অ্যাড এসেছিল টিভিতে। ম্লান মুখে সৌরভ জিজ্ঞাসা করছেন, আপনারা আমায় ভুলে যাবেন নাতো! খুব রাগ হয়েছিল বিজ্ঞাপনটা দেখে। মনে হয়েছিল টাকার জন্য নিজের দুর্বলতাটা জাহির না করলেই চলছিল না! যুবরাজেরও একটা বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে টিভিতে। যুবরাজ বলছেন-সেই জয়ের মুহূর্তটা কিভাবে যেন বদলে গেল। বলছেন- যবতক বল্লা চলেগা, তবতক ঠাট চলেগা। বল্লা নেহি চলেগা তো!- যুবরাজের ম্লান মুখে মাথা নাড়াটাকে কিন্তু দুর্বলতা ভাবতে পারছি না কিছুতেই। কারণ যুবরাজ যখন শুটিংটা করেছেন, তখন তিনি জেনে গেছেন তাঁর মেডিকেল রিপোর্ট কি বলছে। তবু বিজ্ঞাপনটা করেছেন বোধহয় শেষের লাইনগুলোকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন বলেই। বল্লা থামার প্রশ্নই নেই, কারন ওটা ব্যাট নয়, যুবির লড়াই।
নেড়া মাথা একটা ছবি আর একটা ক্যাপসান- চুলটা গেছে, কিন্তু লড়াইটা আছে। ডেটলাইন ব্যাটলফিল্ডে যুবরাজের প্রথম প্রতিবেদন। আর একটা লাইন পড়ে নিন-জিতিয়ে দেওয়ার সেই হাসিটা কিন্তু এখনও আছে।
অমৃতাংশু ভট্টাচার্য