সিঙ্গুরের জমি রাজ্য সরকারের হাতেই রয়েছে: মমতা

সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরতের ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ফের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আজ সিঙ্গুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "জমি রাজ্য সরকারের হাতেই রয়েছে।" মামলার নিষ্পত্তি হলেই তা কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, যে জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সেই জমি রাজ্য সরকারের হাতে রয়েছে বলে কীভাবে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী? কীভাবেই বা তিনি ধরে নিচ্ছেন মামলায় রাজ্য সরকারেরই জয় হবে?

Updated By: Nov 30, 2012, 10:00 PM IST

সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরতের ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ফের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আজ সিঙ্গুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "জমি রাজ্য সরকারের হাতেই রয়েছে।" মামলার নিষ্পত্তি হলেই তা কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, যে জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সেই জমি রাজ্য সরকারের হাতে রয়েছে বলে কীভাবে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী? কীভাবেই বা তিনি ধরে নিচ্ছেন মামলায় রাজ্য সরকারেরই জয় হবে?
ক্ষমতায় আসার দেড় বছর পরও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অন্যতম চিন্তার কারণ, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরতের সমস্যা। জমি ফেরতের প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় সিঙ্গুর যে ক্রমশ তাঁর পাশ থেকে সরে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন তৃণমূল নেত্রী। আর সম্ভবত সেই কারণে মামলা চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, জমি সরকারের কাছেই রয়েছে।
বিধানসভায় সিঙ্গুর আইন পাশ করিয়ে সিঙ্গুরের জমি টাটাদের কাছ থেকে অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করে রাজ্য সরকার। সেই আইনকে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায় টাটারা। ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয় সিঙ্গুর আইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক। ফলে, টাটাদের হাতে থাকা জমি অধিগ্রহণ করে অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় রাজ্য সরকার। এরপর, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। সিঙ্গুর মামলা এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
বর্তমানে, সিঙ্গুরের জমির ভোগসত্ত্ব টাটা বা রাজ্য সরকার কারও হাতেই নেই। এইখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে বলছেন, জমি সরকারের হাতেই রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলছেন, মামলার নিষ্পত্তি হলেই জমি ফেরত দেবেন তিনি।  মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে ধরে নিচ্ছেন যে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সরকারের পক্ষেই যাবে ? 
যদি, তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় সরকারের পক্ষেই যাবে, তাহলেও সুপ্রিম কোর্টের সাতটি ডিভিশন বেঞ্চে মামলা চালিয়ে যেতে পারবে টাটারা। এই অবস্থায় সিঙ্গুরের জমির জট কাটানো যে সহজ নয়, তা পরিষ্কার। ফলে, প্রশ্ন উঠছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কৃষক পরিবারের সমর্থন পেতেই কি মুখ্যমন্ত্রীর জমি ফেরতের রাজনৈতিক ঘোষণা ?

মুখ্যমন্ত্রীর জমি ফেরতের দাবির সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আদালতের বাইরে টাটাদের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।
১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন বলে টাটাদের জমি দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সিঙ্গুর আইন পাশ করে সেই জমি ফেরত নেওয়া হয়। পরে, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গুর আইনটিকেই অবৈধ ঘোষণা করে। ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতে মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে বলছেন, সিঙ্গুরের জমি তাঁর হাতে? প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। ২৪ ঘণ্টাকে এদিন অরুণাভ বাবু জানান, "এখনও অবদি রায় অনুযায়ী জমি টাটাদের হাতে।" সিঙ্গুরের জমির চরিত্র বদলানোর প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সমালোচনা করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশ বাবুর প্রশ্ন, "এই জমিতো আর কৃষি জমি নেই। তবে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন?"
আইনজীবীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এপ্রসঙ্গে বলেন, "মামলা মিটে গেলে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) জমি ফিরিয়ে দেবেন বলছেন। বিষয়টা এত সহজ নয়।"  সর্ব্বচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পরই কারা জমি পাবেন সেবিষয়টা স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, "যাতে ওখানের কৃষকরা বাঁচে, তাই আদালতের বাইরে বিষয়টি রফা করে নেওয়া উচিৎ।"

 

.