গুড়িয়ার মৃত্যু রহস্য: রিপোর্ট তলব আদালতের

গুড়িয়া মৃত্যু রহস্যে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ প্যাটেলের ডিভিশন বেঞ্চ ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই গুড়িয়ার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন বাসবী রায়চৌধুরী নামের এক আইনজীবী।

Updated By: Jul 13, 2012, 04:20 PM IST

গুড়িয়া মৃত্যু রহস্যে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ প্যাটেলের ডিভিশন বেঞ্চ ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই গুড়িয়ার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন বাসবী রায়চৌধুরী নামের এক আইনজীবী। নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুলিসের ভূমিকা কী ছিল তার খোঁজ করা এবং যে চিকিত্সক গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গেই, রাজ্যে এরকম হোম কটি রয়েছে, সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তাদের লাইসেন্স আছে কি না, তার নজরদারিতে সরকারের কী ভূমিকা তা জানতে চাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যদিকে গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। এই মর্মে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে কমিশনের তরফে জেলার দুই প্রশাসনিক কর্তা, জেলাশাসক এবং পুলিস সুপারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিশনের তরফে রাজ্যের কাছ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনার
প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা বলেছেন, আপাতত গোটা ঘটনার দিকে নজর রাখছেন তারা। রাজ্যের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গুড়িয়াকাণ্ডের তদন্তে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। ধনেখালির হোমে রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় এই নিয়ে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হল। আজ যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁরা হলেন, হোমের কলের মিস্ত্রি সন্দীপ দাস, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শেখ নাজিমুদ্দিন, দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের কোষাধ্যক্ষ অসীম মাইতি এবং হোমের দুই সদস্য জলধর সাধু খাঁ ও প্রভাস রঞ্জন ঘোষ। এই পাঁচজনের পাশাপাশি গতকাল ধৃত প্রফুল্ল সোরেন এবং তরুমল দাসকেও আজ চুঁচুড়া আদালতে তোলা হবে। প্রফুল্ল এবং তরুমল দেড়শো টাকার বিনিময়ে গুড়িয়ার দেহ মাটিতে পুঁতেছিল বলে অভিযোগ। ৭ জনকে আদালতে তোলার পাশাপাশি হোমের দারোয়ান মথুর পাত্র এবং রাঁধুনী নাজিমা খাতুনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। গুড়িয়া কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্যামল ঘোষ এখনও ফেরার। তার দুই দাদাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত হোমের সেক্রেটারি উদয় চাঁদ কুমার, গাড়িচালক সোমনাথ দে ওরফে সানি এবং রঞ্জিত ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতে রয়েছে। আজ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত হবে গুড়িয়ার।

গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাকে সামনে রেখেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। ২৪ ঘণ্টায় খবর সম্প্রচার হওয়ার পরই হুগলির খেজুরদহের ওই হোমে যান এসপিসহ পুলিস কর্তারা। এসপি জানান, গর্ত থেকে তোলা গুড়িয়ার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ধনেখালির খেজুরদহে দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে গুড়িয়ার মৃতদেহ সবার অগোচরে গর্ত খুঁড়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই ভাবে দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছে? সেই সন্দেহকে আরও জোরালো করে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
হোমের এক আবাসিক ২৪ ঘণ্টার কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ২৬ তারিখ গুড়িয়াকে মারধর করেছিল শ্যামল। এখন তাঁর দাবি দোষীরা শাস্তি পাক। অন্যদিকে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা লাইসেন্সেই চালানো হচ্ছিল দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমটি। ২০১১ সালে হোমটির প্রভিশনাল লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। গত ২৬ জুন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের আর্জি জমা পড়লেও, প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারায় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে হোমের স্বীকৃতি বাতিল করে আবাসিকদের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।

.