টেন্ডার ছাড়াই কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে শিশুখাদ্য সরবরাহের বরাত রাজ্য সরকারের
ওপেন টেন্ডার ছাড়াই আইসিডিএস প্রকল্প রূপায়ণে একটি বহুজাতিক সংস্থাকে খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। দেশের সবক`টি রাজ্য যেখানে প্রকাশ্য টেন্ডার ডেকে যোগ্যতম সংস্থাকে বেছে নিচ্ছে, সেখানে এ রাজ্যে এই কাজের বরাত পেতে চলেছে দেশের ৩টি রাজ্যে কালো তালিকাভুক্ত একটি সংস্থা।
ওপেন টেন্ডার ছাড়াই আইসিডিএস প্রকল্প রূপায়ণে একটি বহুজাতিক সংস্থাকে খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। দেশের সবক`টি রাজ্য যেখানে প্রকাশ্য টেন্ডার ডেকে যোগ্যতম সংস্থাকে বেছে নিচ্ছে, সেখানে এ রাজ্যে এই কাজের বরাত পেতে চলেছে দেশের ৩টি রাজ্যে কালো তালিকাভুক্ত একটি সংস্থা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতর।
কেন্দ্রের আইসিডিএস প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গে অস্বচ্ছতা ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠল। ওপেন টেন্ডার ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট বহুজাতিক সংস্থাকে এ রাজ্যের আইসিডিএস প্রকল্পে পণ্য সরবরাহের বরাত দেওয়া হতে চলেছে বলে জানা গেছে। দিল্লির ওই সংস্থার নাম কন্টিনেন্টাল মিলকোস প্রাইভেট লিমিটেড। কোনওরকম স্বচ্ছতা এবং টেন্ডার নিলাম ছাড়াই যে সংস্থাকে এই বরাত দেওয়ার উপক্রম হচ্ছে তা দেশের বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই কালো তালিকাভুক্ত। তিন বছর আগে রাজস্থান সরকারের আইসিডিএস প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়ে নিম্নমানের সামগ্রী এবং পুষ্টি সংক্রান্ত ভুয়ো রিপোর্ট পেশ করায় সে রাজ্যে ওপেন টেন্ডারে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হায়িয়েছে কন্টিনেন্টাল মিলকোস।
মূলত পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থকর খাদ্য-পানীয় এবং বিপিএল তালিকাভুক্ত অন্তস্বত্তা ও সদ্য মা হওয়া নারীদের পুষ্টিকর রেডিমেড খাদ্য বিনামূল্যে সরবরাহের দায়িত্ব পালিত হয় ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বা আইসিডিএস প্রকল্পে। যেমনভাবে রাজ্যের সরকারি প্রাথমিকস্কুলগুলিতে মিড ডে মিল প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব থাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে। তেমনভাবেই আইসিডিএস প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্দিষ্ট কোনও বহুজাতিক সংস্থাকে। এ রাজ্যে যে প্রকল্পের পোষাকি নাম- `সবলা`। এখানে এই সংস্থাকে প্রকাশ্য নিলাম বা ওপেন টেন্ডার ছাড়াই এই প্রকল্পে পণ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের অ্যাপেক্স বডি ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজিউমার`স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড বা এনসিসিএফ দ্বারা পরিচালিত হয় আইসিডিএস প্রকল্প। সংস্থার নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, এই খাতে নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে একটা বাজেট বেঁধে দেবে তারা। তবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকেই ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কোনও সংস্থা বেছে নিতে হবে। তাদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের বিপিএল তালিকাভুক্ত মহিলা ও শিশুদের কাছে। ওই সংস্থার সরবরাহ করা পণ্যসামগ্রীর গুণগত মানও যাচাই করে নিতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকেই। এ বিষয়ে এনসিসিএফ কোনও দায়িত্ব নেবেনা।
উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাট সহ দেশের প্রায় সব রাজ্যেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে টেন্ডার ডেকে কোনও একটি সংস্থাকে এই প্রকল্প রূপায়নের বরাত দেয়। উত্তর প্রদেশে `বাল বিকাশ সেবা` এবং `পুষ্টাহার`, গুজরাটে `সুখাদি` এবং উত্তরাখণ্ডে কোনও পোষাকি নাম ছাড়াই চলা আইসিডিএস প্রকল্পে ফি বছর নতুন করে টেন্ডার ডেকে যোগ্যতম সংস্থাকে বরাত দেওয়াটাই রেওয়াজ। এনসিসিএফ-এর নির্দেশিকাতেও সেকথা স্পষ্ট বলা রয়েছে।
তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গ এই রীতি মানছে না?
বেশি দামে একটি কালো তালিকাভুক্ত সংস্থা থেকে নিম্নমানের তৈরি খাবার নিয়ে তা পৌঁছে দেওয়ার অশুভ পরিকল্পনা চলছে বিপিএল তালিকাভুক্ত সেইসব নারী ও শিশুদের কাছে, যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপুষ্টির শিকার?
সুষম খাদ্যের অভাবে একদিকে রাজ্যে বাড়ছে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার, শিশুদের অপুষ্টি বারবার উঠে আসছে সংবাদ শিরোনামে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এনসিসিএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম কে পারিদাকে একটি চিঠি দিয়েছে রাজ্য। রাজ্যে আইসিডিএস প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গত ষোলোই মার্চ এনসিসিএফ- কে জানান, খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় রাজ্য সরকার। তবে, সেই বৈঠক কবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।