২৪ ঘন্টার খবরের জের, উঠে এল হোমের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য

আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এল দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের চাঞ্চল্যকর তথ্য। গুড়িয়া কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্যামলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ আনলেন আবাসিকরা। শ্যামল তাঁদের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছেন প্রায় সব আবাসিকরাই।

Updated By: Jul 12, 2012, 12:09 PM IST

আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এল দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের চাঞ্চল্যকর তথ্য। গুড়িয়া কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্যামলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ আনলেন আবাসিকরা। শ্যামল তাঁদের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছেন প্রায় সব আবাসিকরাই। হোম কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ এই শ্যামলের অবাধ যাতায়াত ছিল হোমে। শ্যামলকে খুঁজছে পুলিস। সেইসঙ্গেই আর এক অভিযুক্ত তনুময়েরও খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস। জানা গেছে গুড়িয়ার দেহ পোঁতার সময় তনুময় সেখানে উপস্থিত ছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে ছিল চূড়ান্ত অব্যবস্থা। হোমের সুপার কাজে না আসায় সকাল থেকে খাবার পাননি আবাসিকরা। শেষপর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার তত্পরতায় বিস্কুট দেওয়া হয় আবাসিকদের। গুড়িয়ার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় চুঁচুড়া হাসপাতালে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় দেহ নিয়ে আসা হয়েছে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল ২৪ ঘণ্টার খবরের জেরে হুগলির জেলাশাসকের নির্দেশে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় গুড়িয়ার দেহ। তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন হুগলির পুলিস সুপার। খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। গুড়িয়া কাণ্ডে বুধবার রাত পর্যন্ত মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। দুলাল স্মৃতি হোমের সেক্রেটারি ছাড়াও হোমের গাড়ির চালক সানি এবং রঞ্জিত নামে আর এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রঞ্জিতকে গর্ত খোঁড়ার জন্য দেড়শো টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
হুগলির ধনেখালির দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিকের রহস্য মৃত্যু। পুলিসকে না জানিয়ে রাতারাতি হোমের ভিতরেই পুঁতে দেওয়া হয় দেহ। সেই খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধিরা। তারপরই সামনে আসে গোটা ঘটনা। কিন্তু প্রথমে গুড়িয়াকে কেউ চিনতে চায়নি। হোম কর্তৃপক্ষকে সরাসরি প্রশ্ন করার পর প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। তারপর স্বীকার, গুড়িয়া মারা গেছে। কর্তৃপক্ষের বয়ানে অসঙ্গতিও ধরা পড়ে। প্রথমে বলা হল দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষপর্যন্ত হোমের সেক্রেটারি স্বীকার করে নেন দেহ পুঁতে দেওয়ার কথা।

বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর থেকে গত মে মাসে গুড়িয়া নামে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকে দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমেই থাকতেন তিনি। অভিযোগ, শ্যামল নামের এক ব্যক্তি হোমের আবাসিক গুড়িয়া নামের এক মহিলাকে প্রথমে মারধর ও পরে তাঁর শ্লীলতাহানি করে। মঙ্গলবার থেকে গুড়িয়াকে হোমের আর কেউ দেখেনি। তার ঘর বন্ধ রাখা হয়েছিল। উদ্ধার হয় দেহ। পুঁতে দেওয়া হয় সোমবার। শ্যামল হোমে খাবার দিতে আসত বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হোমের আবাসিকরা।
হোমের আবাসিকদের একাংশ জানিয়েছেন, ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছিল গুড়িয়ার ক্ষতবিক্ষত দেহ। ২৬ জুন সন্ধেয় দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। যদিও হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ১ জুলাই হোমেরই একটি ঘর থেকে গুড়িয়ার দেহ উদ্ধার করেন তাঁরা। হোমের সেক্রেটারি নিজেই গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেন। ধনেখালির দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের সভাপতি উদয় চাঁদ কুমারের দাবি, খাট থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে গুড়িয়ার। প্রথমে জানালেন, অন্য এক ডাক্তার গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেট লিখেছিলেন। চেপে ধরতেই বয়ান যায় বদলে। জানালেন, তিনিই ডেথ সার্টিফিকেট লিখেছিলেন। হোমের অপর এক আধিকারিক আবার দাবি করেন, দামোদর নদের ধারে গুড়িয়াকে দাহ করা করা হয়েছে। সবশেষে চাপের মুখে পড়ে হোম কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয় গুড়িয়াকে পুঁতে ফেলার কথা। এর পরই পুলিসের উপস্থিতিতে হোম চত্বরের মাটি খুঁড়ে শুরু হয় গুড়িয়ার দেহের সন্ধান। রহস্যে মোড়া এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই স্থানীয় জনমানসে অসংখ্য প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে খুনের সম্ভাবনা।

.