রাঢ়ের অন্যতম প্রাচীন লোকায়ত উত্সব টুসু। সেই উত্সবেই মজল গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। জনপ্রিয়তায় কিছুটা টান পড়লেও পৌষ সংক্রান্তিতে আজও টুসুকে ঘিরে গ্রামের মানুষের উন্মাদনা তুঙ্গে।
"শুন বিহারি ভাই, তোরা রাখতে লারবি ডাং দেখাই।" এই টুসু গানকে কেন্দ্র করেই ঊনিশশো ছাপ্পান্ন সালে পুরুলিয়ায় বঙ্গভুক্তি আন্দোলনের সূচনা। যার আরেক নাম টুসু সত্যাগ্রহ। সেই গানের আবেগেই লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে। একটিমাত্র লোকায়ত গানকে কেন্দ্র করে কোনও প্রদেশের স্বাধীনতা পৃথিবার ইতিহাসে বিরল ঘটনা। সেই গান আজও সমান জনপ্রিয় রাঢ়বঙ্গে। পৌষ মাস জুড়ে রাঢ়ের ঘরে ঘরে মহিলারা মাটির টুসু খোলায় ধানের তুষ ও গাঁদাফুল সাজিয়ে বিশেষ ধরনের গান করে টুসুর আরাধনা করেন। প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হয় মুড়ি, চিঁড়ে, বাতাসা, চিনি, নকুলদানা। পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে হয় টুসুর জাগরণ। টুসু গানের কোনও লিখিত রূপ নেই। নেই কোনও বিশেষ তাল, সুর, ছন্দ। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের সুখ, দুঃখ, যন্ত্রণা নিয়েই মহিলাদের মুখে মুখে তৈরি হয় নতুন নতুন টুসু গান।
লোক গবেষকদের মতে, হিন্দু, জৈন, শৈব ও বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে সংস্কৃতির মিলন ঘটিয়েছে এই লোকায়ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে আজও লোকায়ত সংস্কৃতির ধারা বইছে রাঢ়ের গ্রাম-গ্রামান্তরে।
পৌষ সংক্রান্তিতে রাঢ় বাংলা মজল টুসু উত্সবে