কচুরিপানায় ঢেকেছে জল! অস্তিত্ব সংকটে ঐতিহাসিক দুই নদী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস
একে তো দূষণ এবং যেখানে-সেখানে বাঁধ নির্মাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল সমস্যা। তার ওপর নতুন করে কচুরিপানার সমস্যা!
নিজস্ব প্রতিবেদন- সবুজ রংয়ের কচুরিপানা। তাতে ফুটে রয়েছে অজস্র বেগুনি রঙের ফুল। এমনিতে এমন ছবি দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। প্রাকৃতিক শোভায় চোখ ভরে ওঠে। কিন্তু কচুরিপানা আসলে এমন এক উদ্ভিদ যা পরিষ্কার জলের বিশাল জলাশয়কেও অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলে দিতে পারে। ইরাকের দুই নদী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এবার অস্তিত্ব সংকটের মুখে। কচুরিপানার বাড়বাড়ন্তে এই দুই ঐতিহাসিক নদী এখন মহাবিপদে। দুই নদীকে কচুরিপানার হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করা যাবে তা বুঝে উঠতে পারছে না ইরাকের প্রশাসন। দিন দিন জল কমে আসছে নদীতে। একে তো দূষণ এবং যেখানে-সেখানে বাঁধ নির্মাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল সমস্যা। তার ওপর নতুন করে কচুরিপানার সমস্যা!
বিশ্বের উষ্ণতম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ইরাক। প্রত্যেক বছরই খরা সমস্যায় ভোগে তারা। এমনিতেই টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর জলের ব্যবহার হয় ব্যাপক হারে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই দুই নদীতে কচুরিপানার পরিমাণ বাড়ছে। একেকটি কচুরিপানা দিনে পাঁচ লিটার পর্যন্ত জল শোষণ করতে পারে। তাছাড়া কচুরিপানার পাতা সূর্যের আলো নদীর জলে পৌঁছতে দেয় না। জলে অক্সিজেনের সরবরাহ বাধা পায়। ফলে নদীর বাস্তুতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। মাছ মারা যায়। স্থানীয় জেলেদের জীবিকা সংকট দেখা দেয়। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের বহু মত্সজীবীর জীবিকা নির্বাহ হয় ইউফ্রেটিস নদীতে মাছ ধরে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেখানে বেড়ে ওঠা কচুরিপানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। পূর্ব বাগদাদের বহু মানুষ আবার টাইগ্রিস নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত দু'বছর ধরে তারা মাছ শিকার করতে পারছেন না তেমনভাবে।
আরও পড়ুন- প্রতিবেশীদের উৎপাত বাড়ছে, এবার ভারতীয় চাষিদের জল দেওয়া বন্ধ করল ভুটান
ইরাকের চাষবাসের উপর প্রভাব পড়েছে। এমনিতেই এই দুই নদীতে জল কমে আসায় সমস্যায বাড়ছিল চাষীদের। এবার নতুন করে দেখা দিয়েছে কচুরিপানার সমস্যা। ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে চাষবাসে। জলের স্তর নেমে গিয়েছে অনেক নিচে। জানা গিয়েছে স্থানীয় বাজারে এখন সবজির বিক্রি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া আরও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এক হাজার বর্গফুট আয়তনের কচুরিপানা হতে পারে পাঁচ টন পর্যন্ত। এতে নদী দুর্বল পাড়ের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে সেতু বাঁধ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে এমনিতেই পানীয় জলের সংকট রয়েছে। এবার সেখানে পানীয় জলের সমস্যা আরও বেড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের জন্যই নদীতে কচুরিপানা বেড়ে উঠেছে। ইরাকের জল সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মেশিনের মাধ্যমে নদী থেকে কচুরিপানা সরানোর কাজ দ্রুত শুরু হবে।