সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ, আইনসভায় ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ গিলানির

এক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগে না নেওয়ায় তাঁকে `অসত্‍` বলে চিহ্নিত করেছিল পাক সুপ্রিম কোর্ট। এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননার অভিযোগ কেন আনা হবে না’ এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিল সে দেশের শীর্ষ আদালত।

Updated By: Jan 16, 2012, 02:49 PM IST

সুপ্রিম কোর্ট আর সেনাবাহিনীর নিশানার মুখে দাঁড়িয়ে এবার ইস্তফার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন ইউসুফ রাজা গিলানি। সোমবার পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিশেষ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
এক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগে না নেওয়ায় গিলানিকে `অসত্‍` বলে চিহ্নিত করেছিল পাক সুপ্রিম কোর্ট। এদিন তাঁর বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননার অভিযোগ কেন আনা হবে না’ এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত। আগামী ১৯ জানুয়ারির আগে গিলানিকে আদালতে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে জবাবদিহির নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি নাসির-উল-মুলক-এর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৭ সদস্যের বেঞ্চ।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে  সোমবার পাক জাতীয় আইনসভার নিম্নকক্ষের অধিবেশন আহ্বান করে সরকার পক্ষ। পাক মিডিয়ার একাংশের দাবি, গিলানির নিজের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র একাংশের পাশাপাশি সরকার সমর্থক মুত্তহিদা কওমি মুভমেন্ট, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়েদ-ই-আজম)-এর মতো দলগুলির নেতারাও সংকট কাটাতে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন গিলানিকে।

দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে পাক সুপ্রিম কোর্টের এ ধরনের নোটিশ জারির নির্দেশ একেবারেই নজিরবিহীন। পরভেজ মুশারফ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত রাজনীতিক ও আমলাদের অব্যাহতি দিতে ন্যাশনাল রিকলসিলিয়েশন অর্ডিন্যান্স বা এনআরও জারি করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জরদারি ও তাঁর স্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোসহ প্রায় ৮,০০০ রাজনীতিক, প্রাক্তন সেনা অফিসার ও আমলা এই আইনের আওতায় অব্যাহতি পেয়েছিলেন। কিন্তু পাক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইফতিকার মহম্মদ চৌধুরী এনআরও বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল সরকারকে।
সেই সময়সীমা আজ শেষ হয়। এনআরও-র আওতায় খারিজ হয়ে যাওয়া ১৫৫টি মামলার নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর চেয়ারম্যান। তবে কেন এনআরও নিয়ে সরকার ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে পাক অ্যাটর্নি জেনারেল আনওয়ার-উল-হকের বক্তব্য সন্তুষ্ট হয়নি সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নোটিস জারি করে পাক সুপ্রিম কোর্ট।
দুর্নীতি কাণ্ডের পাশাপাশি মেমোগেট কেলেঙ্কারি নিয়েও সোমবার শুনানি হয় পাক আদালতে। পাকিস্তানে সামরিক অভ্যূত্থান প্রতিরোধের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে দায়ের করা একটি মেমো বা স্মারকলিপি প্রকাশ্যে আসা নিয়ে মেমোগেট কাণ্ডের সূত্রপাত। অভিযোগ, গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট জারদারির নির্দেশে তত্‍কালীন আমেরিকার পাক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি তৈরি কেরছিলেন ওই মেমো। অনাবাসী পাক ব্যবসায়ী মনসুর ইজাজই ওই স্মারকলিপি ফাঁস করেন। পরিণামে চাকরি যায় হাক্কানির।

এই রহস্যজনক স্মারকলিপির ঘটনার তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ১৭ একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন নিযুক্ত করে। মেমোগেট কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য কমিশন তলব করলেও এদিন ইজাজের আইনজীবীরা জানান, মনসুর ইজাজকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি সুইজারল্যান্ড যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন জানিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারির আগে পাকিস্তান ফিরতে পারবেন না ইজাজ। অন্যদিকে মেমোগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে হাক্কানির কথোপকথনের তথ্য জানতে মোবাইল সংস্থা ব্ল্যাকবেরি'র কাছে তদন্ত কমিশনেরর তরফে আবেদন জানানো হলেও এ ব্যাপারে কোনও রকম সহায়তা করতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি।
মেমোগেট নিয়ে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া হলফনামাকে কেন্দ্র করে আইএসআই ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেড়েছে পাক প্রধানমন্ত্রীর। গিলানির বিবৃতির ব্যাখ্যা অথবা প্রত্যাহারের যে দাবি সেনাবাহিনী করেছিল, রবিবার তা খারিজ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। একমাত্র পার্লামেন্টকেই তিনি জবাবদিহি করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন গিলানি। এর পাশাপাশি সেনাপ্রধান কায়ানির ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সচিব, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) নঈম খালিদ লোদিকে বরখাস্ত করে নার্গিস শেঠিকে নিযুক্ত করা নিয়ে সেনা-সরকার সংঘাত তীব্র হয়। প্রকাশ্যে সরকারের এই পদক্ষেপের নিন্দা করে পাক ফৌজ।

.