পাকিস্তানের মসনদ শরিফের দখলে, শুভেচ্ছা ভারতের
পাকিস্তানের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে নওয়াজ শরিফ। সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথেই এগোচ্ছে। নওয়াজ শরিফের তৃতীয় বারের জয়কে স্বাগত জানিয়েছে ভারতও। ভারত-পাক সম্পর্কের অশান্ত পরিস্থিতিতে পাক নির্বাচনের রায় আশু সমাধান সূত্র আনবে বলে মনে করছে ভারত।
পাকিস্তানের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে নওয়াজ শরিফ। সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথেই এগোচ্ছে। নওয়াজ শরিফের তৃতীয় বারের জয়কে স্বাগত জানিয়েছে ভারতও। ভারত-পাক সম্পর্কের অশান্ত পরিস্থিতিতে পাক নির্বাচনের রায় আশু সমাধান সূত্র আনবে বলে মনে করছে ভারত।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম এবং নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পারেন শরিফ। এমনকি, পিপিপি-র সাহায্য নিতেও তাঁর আপত্তি নেই বলে খবর। তবে, পিএমএল-এন কোনও অবস্থাতেই তেহরিক-ই-ইনসাফের সমর্থন চাইবে না বলে জানা গেছে। এ দিকে, প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে পঞ্জাব ও বালুচিস্তানে এগিয়ে রয়েছে পিএমএল-এন । সিন্ধ ও খাইবার পাখতুনওয়ায় এগিয়ে যথাক্রমে পিপিপি এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ। চোদ্দো বছর পর ফের ক্ষমতায় ফিরছেন নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল পিএমএল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পথে। তৃতীয়বারের জন্য পাকিস্তানের মসনদ মোটামুটি তাঁর দখলে আসতে চলেছে।
প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা আগেই তাঁর জয়ের আভাস দিয়েছিল। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়েছে পিএমএল। গণনা যত এগোচ্ছে বেড়েছে ব্যবধান।
সাধারণ নির্বাচনে ভরাডুবি হল পাকিস্তান পিপলস পার্টির। শরিফ ঝড়ে কার্যত খড়কুটোর মতো ভেসে গেল জারদারির দল। ক্ষমতা হারাতে চলেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল। ভোটের ফল বেরোতে না বেরোতেই বাস্তবে পরিণত হল সেই ভবিষ্যতবাণী।
অন্যদিকে, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারলেও পিপিপি-র সঙ্গে সমানে সমানে লড়াই দিয়ে পাক রাজনীতিতে বড় দল হিসাবে আত্মপ্রতিষ্ঠায় সফল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ। অক্সফোর্ডের স্নাতক ইমরান খানকে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম তো প্রায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েই ছেড়েছিল। শেষপর্যন্ত তা না হলেও ইমরান খান প্রমাণ করে দিয়েছেন, আর তাকে শখের রাজনীতিবিদ বলা যাবে না। পাকিস্তানের মাটিতে এখন যে তাঁর জনভিত্তি প্রবল, এ বারের নির্বাচনে তা বুঝিয়ে ছেড়েছেন খান সাহাব। দুহাজার দুইয়ে ঝুলিতে ছিল মাত্র একটি আসন। দুহাজার আটে সাধারণ নির্বাচনে লড়াই করেনি তেহরিক-ই-ইনসাফ। সে খান থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে রাজনীতির ময়দানে নিজের দলকে নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত করার পর ইমরানকে কৃতিত্ব দিতে দ্বিধা করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোট নিজের ঝুলিতে টানতে প্রচার পর্বের শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলেন নওয়াজ শরিফ। এ জন্য, সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে কিছুটা হলেও নিয়েছিলেন নরম অবস্থান। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন পিপিপি-র বিরুদ্ধে একের পর হুমকি দিলেও তাতপর্যপূর্ণভাবে পিএমএল-এনের বিরুদ্ধে সুর চড়ায়নি। শরিফের পক্ষে ব্যালট বক্সে এ সবেরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফকে পিছনে ফেলে দেওয়াই শুধু নয়, এ বারের নির্বাচন নওয়াজ শরিফের কাছে এক অর্থে মধুর প্রতিশোধেরও সুযোগ এনে দিয়েছে। উনিশশো নিরানব্বইয়ে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন পারভেজ মুশারফ। তারপর, দীর্ঘ কয়েক বছর সৌদি আরবে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন শরিফ। পরে, অবশ্য দেশ ছাড়তে হয় মুশারফকেও। এ বারের ভোটে নিজের সভাগ্য পরীক্ষায় পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছিলেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটে দাঁড়ানো তো হয়ইনি, উল্টে গৃহবন্দি হতে হয়েছে মুশারফকে।
নির্বাচনে জয়লাভ, পারভেজ মুশারফ সহ অন্য দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া - এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু, কুর্সিতে বসার পরই যে উত্তাপের মুখোমুখি হতে হবে তাকে, তা কি আগামী পাঁচ বছর সামাল দিতে পারবেন শরিফ?
উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। দুর্নীতি, দারিদ্র, শিল্প, বিদ্যুত, পরিকাঠামোর বেহাল দশা - এ সবের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে নতুন দিশা দেখানোর চ্যালেঞ্জ তাঁর সামনে। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কী অবস্থান নেবেন শরিফ? রয়েছে সে প্রশ্নও। সম্প্রতি শরিফ জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি আমেরিকার নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হওয়ার রাস্তা থেকে দেশকে সরিয়ে আনবেন।