কোনও নিয়ম মানছেন না, নিজের অর্থমন্ত্রীর চাকরি খেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী!
কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করার ফলে ১৯৭০ সালের পর থেকে কোয়ার্টেং ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময়ের চ্যান্সেলর অফ এক্সচেকার হলেন। তার উত্তরসূরি হবেন ব্রিটেনের জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়কালের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপ এবং বাজারের বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছয় সপ্তাহেরও কম সময় পদে থাকার পরে শুক্রবার ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করা হল। পদত্যাগ করতে বলার পরে তার পদত্যাগপত্রে কোয়ার্টেং বলেন, ‘আমরা ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রোথ প্ল্যান তৈরি করার পর থেকে অর্থনৈতিক পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। জবাবে, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং ট্রেজারির আধিকারিকদের সঙ্গে একসঙ্গে আমরা সেই পরিবর্তনগুলির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি এবং আমি আমার কর্মীদেরকে তাদের কাজের জন্য প্রশংসা করি।‘
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে এগোনোর পথে আমাদের রাজস্ব শৃঙ্খলার প্রতি সরকারেকে আনুগত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য-মেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমি আপনাকে এবং আমার উত্তরসূরিকে এই কাজে সাহায্য করার জন্য উন্মুখ।‘
প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ২৩ সেপ্টেম্বর কোয়ার্টেং-এর বিতর্কিত ‘মিনি-বাজেট’-এ দেওয়া মূল রাজস্ব নীতির প্রতিশ্রুতিগুলিকে ত্যাগ করার ঘোষণা করবেন বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অনুদানবিহীন ট্যাক্স কাটও রয়েছে।
যে নীতিগুলিকে ছেঁটে ফেলা হবে তার মধ্যে অন্যতম কর্পোরেশন ট্যাক্স। কোয়ার্টেং-এর পূর্বসূরি ঋষি সুনক কর্পোরেশন ট্যাক্স ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার কথা বলে যা কোয়ার্টেং ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর ফলে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হওয়ার কথা এবং লভ্যাংশ ট্যাক্স ১.২৫ শতাংশ কমার কথা।
এই মাসের শুরুর দিকে সরকার জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার পর আয়করের শীর্ষ হার বাতিল করার পরিকল্পনা বাতিল করে। কিন্তু এই কাজ বাজারের অশান্তি দমন করতে ব্যর্থ হয়।
এর মধ্যে দীর্ঘ সময়ের সরকারি বন্ডের বিক্রি অন্তর্ভুক্ত ছিল যেখানে পেনশন তহবিলকে পতনের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
ট্রাসের উপর তার অর্থনৈতিক নীতিগুলি পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ ছিল। জনমত সমীক্ষায় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির পতনের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। ট্রাসের নিজের দলের মধ্যে থেকে আইন প্রণেতারা প্রথম পাঁচ সপ্তাহের অস্থিরতার পরেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানা গিয়েছে।
এরপরেও, তিনি এবং কোয়ার্টেং উভয়েই সাম্প্রতিক দিনগুলিতে প্রকাশ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাঁরা সরকারের র্যাডিকাল আর্থিক পরিকল্পনার সমালোচকদেরকে ‘উন্নয়ন বিরোধী জোট’-এর অংশ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: ফিরছে তিয়েনআনমেনের স্মৃতি, জিনপিঙের চিনে গণতন্ত্রের দাবিতে উড়ল নিশান!
কোয়ার্টেং আরও বলেন, ‘যেমন আমি গত কয়েক সপ্তাহে অনেকবার বলেছি, স্থিতাবস্থা অনুসরণ করা কেবল একটি বিকল্প ছিল না। দীর্ঘকাল ধরে এই দেশটি নিম্ন বৃদ্ধির হার এবং উচ্চ করের মাঝে আটকে রয়েছে - এবং যদি এই দেশকে সফল হতে হয় তবে এটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।‘
তিনি চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে সহকর্মী এবং বন্ধু ছিলাম। সেই সময়ে, আমি আপনার নিষ্ঠা এবং সংকল্প দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই সঠিক। আপনার প্রথম চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্মানের বিষয়।‘
কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করার ফলে ১৯৭০ সালের পর থেকে কোয়ার্টেং ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময়ের চ্যান্সেলর অফ এক্সচেকার হলেন। তার উত্তরসূরি হবেন ব্রিটেনের জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়কালের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী।