মৃত্যুর আগে সংগঠনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উদ্বিগ্ন ছিলেন লাদেন

মৃত্যুর আগে সংগঠনের কাজকর্মে সন্তুষ্ট ছিলেন না আলকায়দা সুপ্রিমো ওসামা বিন লাদেন। বিশেষ করে মুসলিমদের উপর হামলার ঘটনা তাঁকে বেশ চিন্তায় রেখেছিল। আল কায়েদার অন্যান্য কর্মীদের চিঠি লিখে সে কথা জানিয়েও ছিলেন লাদেন।

Updated By: May 4, 2012, 02:40 PM IST

মৃত্যুর আগে সংগঠনের কাজকর্মে সন্তুষ্ট ছিলেন না আলকায়দা সুপ্রিমো ওসামা বিন লাদেন। বিশেষ করে মুসলিমদের উপর হামলার ঘটনা তাঁকে বেশ চিন্তায় রেখেছিল। আল কায়েদার অন্যান্য কর্মীদের চিঠি লিখে সে কথা জানিয়েও ছিলেন লাদেন। সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ ছিল, মুসলিম নয়, আল কায়েদা`র যোদ্ধাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল পশ্চিমী দুনিয়া। ওসামার মৃত্যুর পর তাঁর অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে, সেকরমই বহু তথ্যের হদিশ পান মার্কিন কম্যান্ডোরা। যার মধ্যে রয়েছে লাদেনের লেখা একাধিক চিঠি।
সম্প্রতি সেগুলি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে, মার্কিন মিলিটারি অ্যাকাডেমি। মৃত্যুর আগের ৯ বছর পাকিস্তানেই লুকিয়ে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন আল কায়েদাকে। মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগেও সংগঠনের কর্মী ও সহযোদ্ধাদের বার্তা পাঠানোর জন্য তাঁর পছন্দ ছিল হাতে লেখা চিঠি। দূত মারফত সেই চিঠি হাতবদল হয়ে পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে। যে কোনও দেশে। একই ভাবে আসত উত্তরও। মার্কিন সেনা-অফিসারদের লাদেনের বাড়িতে তল্লাসিতে উদ্ধার হওয়া গোপন নথিতে জানা যায়, সংগঠনের কাজকর্মে মোটেই খুশি ছিলেন না লাদেন। বিশেষ করে অন্যান্য দেশে আল কায়েদার যে সব শাখা রয়েছে, সেখানে গোষ্ঠী কোন্দল মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এমনকী তাঁর নির্দেশগুলিও অক্ষরে অক্ষরে পালিত না হওয়ায় সংগঠনের ভবিষ্যত্‍ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন লাদেন। নিজের উদ্বেগের কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন তিনি। সংগঠনের অন্য নেতাদের চিঠি লিখে সেবিষয়ে আগাম সতর্কও করেছিলেন আল কায়েদা সুপ্রিমো।
ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০১১-র মধ্যে চিঠিগুলি লেখা হয়েছিল। চিঠি থেকে জানা গেছে, আল কায়েদা`র সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক খুব একটা মধুর ছিল না। বিশেষত ইরানে বন্দি লাদেনের পরিবারের সদস্যদের ছাড়ার ব্যাপারে আপসে রাজি না থাকায়, তেহেরানের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ওসামা।

তবে চিঠি থেকে বোঝার উপর ছিল না, আল কায়েদাকে পাক প্রশাসন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করত কি না। তবে যে ন`বছর অ্যাবোটাবাদে ছিলেন লাদেন, সেসময় পাক গোয়েন্দাদের থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতেন তিনি। কারণ কাউকে তিনি ভরসা করতেন না। সংগঠনের এক নেতাকে লেখা চিঠিতে সে কথাও জানিয়েছিলেন ওসামা।
তবে কয়েকটি চিঠিতে "হে আমার বিশ্বস্ত পাকিস্তানি বন্ধুরা"..এধরনের শব্দেরউল্লেখ থাকায় মার্কিন গোয়েন্দাদের সন্দেহ ছিল, লাদেনকে আত্মগোপনের সুযোগ দিয়েছিল পাক প্রশাসনই। কিন্তু পরে সেই ভুল ভাঙে। এখানেই শেষ নয়। তাঁর পরিবার কিংবা অনুগামীদের লাদেন সতর্ক করেছিলেন, পাকিস্তানে পা রাখলে তাঁদের কেউ যাতে পিছু না নেয়, সেদিকে তাঁরা যেন নজর রাখেন। মার্কিন সেনা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে আরও জানা গিয়েছে, মুসলিমরা যে জিহাদ থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে, তা তিনি পছন্দ করতেন না। বিশেষ করে যেভাবে মুসলিম ভাইয়েরা নিজেদের মধ্যে হানাহানীতে জড়িয়ে পড়েছে, তা ছিল লাদেনের না-পসন্দ। তাই সংগঠনের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল একটাই, আঘাত হানতে হবে পশ্চিমী দুনিয়ায়।
একটি চিঠিতে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনও আত্মঘাতী হামলায় যেন কেউ একা না যায়। অবশ্যই সঙ্গে আরও একজন যেন থাকে। তাতে সাফল্য বেশি আসে বলেই মনে করতেন আল কায়েদা সুপ্রিমো। সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে লেখা লাদেনের আরও একটি চিঠির বার্তা ছিল, পাক সফরে এলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিংবা বর্তমান সিআইএ অধিকর্তা ডেভিড পেট্রাওসকে খতম করা। তবে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন`কে খতমের তালিকায় না রাখার পক্ষে ছিলেন লাদেন। কারণ তাঁর মত ছিল, বাইডেন ওই পদের জন্য আদৌ যোগ্য নন। ফলে তাঁর চলে যাওয়ায় মার্কিন রাজনীতিতে কোনও সঙ্কট দেখা দেবে না। চিঠি থেকে জানা গিয়েছে, নিজে না দেখলেও, লাদেনের ঘনিষ্ঠরা বিদেশে সংবাদমাধ্যমের উপরও কড়া নজর রাখত। কোনও চ্যানেলে কী দেখানো হচ্ছে, সেগুলি সব জানানো হল আল কায়েদা সুপ্রিমোকে। তবে ২০১০-এ মার্কিন অর্থনীতিতে যে মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তার জন্য আল কায়েদাকে কৃতিত্ব না দেওয়ায়, হতাশ হয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেন।
 

.