২০১৫- ঝড়-কম্পে 'ধর'-'হারা' বিশ্ব
সৌরভ পাল
পৃথিবীটার শরীর খারাপ করেছে। হঠাৎ হঠাৎ পা হাত পা ঝাড়া দিয়ে উঠছে। ভন ভন করে ঘোরা পৃথিবীটার হঠাৎ ইচ্ছে হল একটু 'ড্রাগন রাইড' নেওয়ার। বুঝে দেখুন কাণ্ডটা, কখনও ওপরে উঠে যাচ্ছে সুমেরু আবার কখনও কুমেরু। কিংবা হঠাৎ 'মত কি কুয়া'য় ঘুরতে শুরু করল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। যদি দেখেন ভারত মহাসাগরটা এভারেস্টের উচ্চতায়! (দেখার সুযোগটাই হয়ত থাকবে না।) পৃথিবীর শরীর খারাপ আসলে প্রকৃতির 'অসিষ্ণু আচরণ'। কথায় আছে 'শেষ ভাল যার সব ভাল তাঁর'। তাই মৃত্যু, আর মৃত্যু মিছিলের বদলে একটু জীবনের খোঁজে নতুন বছরে পা দেওয়া। পৃথিবীর বয়স বাড়বে, সৃষ্টিও হবে ধ্বংস থেকেই।
ভূমিকম্প, খরা, বন্যার মত কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয় পৃথিবীর জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ছিল আজও আছে। ২০১৫। একটা বছর শেষ হতে চলেছে। ভয়াবহতার মানদণ্ডে এমন কয়েকটি ঘটনা পৃথিবীটায় ঘটেছে যা কখনই পরিপূর্ণ হওয়ার নয়। প্রকৃতির রোষে যাদের চোখটা আর কোনও দিন সূর্য দেখতে পাবে না, যাদের নিঃশ্বাসটা আর অক্সিজেন খুঁজবে না, যাদের পায়ের পাতার রক্তছাপটাই কেবল রয়ে গেল, তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে ২৪ ঘণ্টা ডট কম।
'ধর'-'হারা' নেপাল
সংখ্যাটা ৯,০০০। নেপালের শেষ জনগণনা অনুযায়ী পাহাড়ি দেশটার মোট জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬৬ লক্ষ। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিলের দিনটা মনে আছে? কেঁপে উঠল নেপাল। একবার নয়, বার বার। এক পলকেই নেপালের জীবন থেকে মুছে গেল ৯ হাজার প্রাণ। ভূমিকম্পে আহত প্রায় ২৫,০০০ মানুষ। বিধ্বস্ত গোটা নেপাল। ভেঙে গিয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য ধরহারা মিনার। এক মাস, এক মুহুর্তের জন্যও নেভেনি শশ্মান। গোটা নেপাল দিন যাপন করেছে খোলা আকাশের তলায়। সুস্থ নেপাল একটা ভূমিকম্পেই হয়ে গেল 'প্রতিবন্ধী'। বিস্তারিত জানুন-
বাণভাসি চেন্নাই (দক্ষিণ ভারত)
৮ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর। অবিরাম বৃষ্টি। শীতের আকাশে রোদ তো দূরস্থ, সূর্যটাই দেখেনি চেন্নাই। এ যেন বৃষ্টির অকাল বোধন। চেন্নাইয়ের বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫০ জন মানুষ। এখনও খোঁজ নেই শতাধিকের। এই বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তামিলনাড়ুর পাশের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশও। মৃত অন্তত ৮১। পন্ডিচেরিতে মৃত ৩। নেই খাবার জল, নেই খাদ্যও। অন্ধকারেই দিন কেটেছে লক্ষ মানুষের। দক্ষিণ ভারতের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা।
ফিলিপিন্স বন্যা
ডিসেম্বরে ভয়াবহ বন্যায় ফিলিপিন্সে মৃত ৫২। টাইফুন কপ্পুর ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, ফিলিপিন্সের রাজপথ সমুদ্রের আকার নিয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত হয়ছে ফিলিপিন্সের রাজধানী মানিলাও।
বিশ্বের ১০ ঝড় (২০১৪-২০১৫)
১.অ্যাজাক্স- গ্রীক মিথ থেকে নেওয়া। মহাকাব্য হোমার-এর নায়ক চরিত্রের নাম অ্যাজাক্স। যার অর্থ শক্তি ও উৎসাহ।
২.বেল্লা- লাতিন শব্দ। যার অর্থ সুন্দর।
৩.কারা- লাতিন শব্দ। অর্থ প্রেমিক/প্রেমিকা(BELOVED)
৪.দেলফি- গ্রীক শব্দ থেকে উৎপত্তি। পুরাণে শয়তানের বাসভূমির নাম দেলফি।
৫.ইলিয়াস- গ্রীক নাম।
৬.ফেরুস- লাতিন শব্দকোষ থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ বন্য। পেট্রোস- এর অর্থ পাথর। উৎপত্তি গ্রীক শব্দকোষ।
৭.জান্দুর- আলেকজান্ডারের নাম। যার অর্থ রক্ষী।
৮.জোলো- যা একবারই বাঁচে।
৯.অলিম্পিয়া- গ্রীকের একটি শহরের নাম। পরে অলিম্পিয়া নাম থেকেই নামাঙ্কিত হয় অলিম্পিক গেমস।
১০.ট্রয়- গ্রীক মহাকাব্য থেকে উৎপত্তি, যেখানে ট্রোজান যুদ্ধের কথা রচিত হয়েছিল।
২০১৫-এর ৩৬৫ দিনব্যাপী এদের তাণ্ডবে তটস্থ ছিল গোটা বিশ্ব। কখনও অস্ট্রেলিয়া, কখনও আমেরিকা, কখনও এশিয়া, ঝড়ে কাবু হয়েছে সিডনি, ক্যালিফোর্নিয়ার মত শহর।