WB assembly election 2021: বারমুডা-ট্রায়াঙ্গলেই কি হারিয়ে গেল বাংলার ভোট-রাজনীতির ভাষা-সংস্কৃতি?
সাংস্কৃতিক দৈন্যের জন্য উদ্বেগ ভাল, কিন্তু সক্রিয় হতে হবে সব পক্ষকেই।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বুধবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জনসভায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে 'শাড়ি নয়, বারমুডা পরুন' মন্তব্যে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য-রাজনীতি; দেশও।
দিলীপ-মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে টুইট করে তৃণমূল। টুইটে তৃণমূল জানায়, এইরকম কুরুচিকর মন্তব্য দিলীপবাবু ছাড়া আর কারও থেকে প্রত্যাশিত নয়! একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সম্বন্ধে এইরকম নিন্দনীয় ভাষা প্রয়োগ প্রমাণ করে যে, বিজেপি নেতারা মহিলাদের সম্মান করে না। বাংলার মা-বোনেরা মমতার প্রতি এই অপমানের যোগ্য জবাব দেবেন ২ মে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিন্তু বিজেপি'র তরফ থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা হয়নি। এ নিয়েও স্বাভাবিক ভাবেই তপ্ত থেকেছে শাসক শিবির। তারই জের ধরে তৃণমূলনেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya) বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ একটি টুইট করেন। সেখানে লেখেন-- 'যত দিন যাচ্ছে দেখছি @DilipGhoshBJPবাবু ততই বাজে বকছেন! কোনো ভদ্রলোকের মুখে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এইরকম বিকৃত ভাষা কখনও শুনেছেন?! ছিঃ! বাংলার মহিলারা এইরকম ঘৃণ্য মানসিকতার লোকেদের একটি ভোটও দেবে না।'
প্রায় একই সময়ে একটি টুইট করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও (Partha Chaterjee)। ইংরেজিতে করা তাঁর টুইটের মর্মার্থ: ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল কোনও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের করা (মুখ্যমন্ত্রীর) অবমাননাকর মন্তব্যের কোনও সমালোচনা করেননি। বিজেপি যদি দেশের এক মাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে এমন উদ্ধত ভাবে বিদ্রুপ করতে পারেন তবে কল্পনা করুন আপনার ঘরের মেয়েটির সম্বন্ধে তারা কী বলতে পারে!
দু'টি টুইটই ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ #NoVoteToBJP-তে করা।
আরও পড়ুন: WB assembly election 2021 : "ভোটের দিনে হিংসা, রাজ্যের ৫০ বছরের ট্র্যাডিশন এবার ভাঙুন"
এক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে #EbarBJP ট্রেন্ডিংয়ে অমিত মালব্যের (amit malviya) এ সংক্রান্ত একটি টুইট দেখা যায়। কিন্তু সেখানে বিজেপি'র তরফে দুঃখপ্রকাশ তো নেই-ই; প্রত্যাশিত ভাবেই নেই দিলীপের সমালোচনাও। যা আছে, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণও। এই নির্বাচনে ভাষা-ব্যবহারের এই নিম্নগামিতার জন্য একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) দায়ী। নিজেকে তিনি ভিক্টিম হিসাবে তুলে ধরেন, কিন্তু তিনি নিজেও যে-সব আপত্তিকর মন্তব্য করে থাকেন দ্রুত তা ভুলে যান।
পাশাপাশি সময়েই নুসরত জাহান (nusrat jahan) একটা টুইট করেন। তিনি লেখেন--মেয়েদের প্রতি ঘৃণা (Misogyny) এবং মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বিজেপি'র এত গভীরে ঢুকে পড়েছে যে, তা জাতীয় উদ্বেগের বিষয় হয়ে পড়েছে।
নুসরত আরও লেখেন, দিলীপ ঘোষ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীকে হেয় করেছেন। এর পরই নুসরত অত্যন্ত জোরের সঙ্গে দাবি করেন, বিজেপিকে একটিও ভোট নয়!
এই বাদানুবাদ থেকে কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ দু'টি বিষয় বেরিয়ে আসছে। একটা, মালব্য তুলেছেন-- রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের ভাষাটাই ক্রমশ নিম্নমুখী হয়ে উঠছে। এর জন্য কে দায়ী, সেটা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো কঠিন। এবং মুখ্যমন্ত্রী এজন্য একা দায়ী নন। সেই বাম আমল থেকেই এ রাজ্যে কুরুচিকর মন্তব্যের ছড়াছড়ি ছিল। 'ডিসকোর্সে'র মান নেমেছে, একথা সত্যি। কিন্তু এজন্য সব পক্ষই কম-বেশি দায়ী।
অন্য বিষয়টি সামনে এনেছেন নুসরত। তিনি মিসোজিনির প্রসঙ্গ তুলেছেন। সারা দেশের সামাজিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে এ কথা সত্যি বলে মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এটা আদৌ রাজনীতির প্রশ্ন নয়। নুসরত পুরুষতান্ত্রিকতার কথাও তুলেছেন। পুরুষতান্ত্রিকতা তো শুধু রাজনৈতিক পরিসরের বিষয় নয়। তা এ দেশের সমাজের পরতে-পরতে ঢুকে পড়েছে।
ফলে, এখানে এটা মমতা-দিলীপ বা নুসরত-মালব্যের বাদানুবাদের প্রশ্নই নয়; নয় বিজেপি-তৃণমূলের অহর্নিশ ভোট-দ্বন্দ্বের পাঁচালিও। বান্দোয়ানের জনসভা থেকে বাংলার রাজনীতিতে সহসা যে বারমুডা-ট্রায়াঙ্গলের জন্ম হল, তার সমস্ত রহস্যভেদের শেষে হাতে পড়ে থাকে পেনসিল। যে-পেনসিল বলে, আমাদের ভাষাটাকে ঠিক করতেই হবে; আমাদের অ্যাটিটিউড ঠিক করতেই হবে, না-হলে ভোট আসবে ভোট যাবে, আমাদের সাংস্কৃতিক দৈন্য দিন দিন তার ময়লা দাঁত খুলে দেখাবে, তা সে যতই রাজনৈতিক নেতারা বাঙালি সংস্কৃতির জন্য কুমিরের কান্না কাঁদুন না কেন!
আরও পড়ুন: WB Assembly Election: ওরা লোককে হাফ প্যান্টুলুন পরিয়ে দিচ্ছে, কে কী পরবে সেটা নিজের চয়েস: মমতা