যাঁদের ত্রাণ পাওয়ার কথা তাঁরাই এখন ত্রাতা, অসহায়ের পাশে অসহায় ভ্যান-রিক্সাচালকরা

ডায়মন্ডহারবারের চাঁদনগর এলাকার ভ্যান রিক্সাচালক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে গ্রামের  অসহায় পাঁচশোটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, বিস্কুট-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী

Reported By: অধীর রায় | Updated By: Apr 24, 2020, 04:27 PM IST
যাঁদের ত্রাণ পাওয়ার কথা তাঁরাই এখন ত্রাতা, অসহায়ের পাশে অসহায় ভ্যান-রিক্সাচালকরা
নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনার জন্য  দেশজুড়ে লকডাউন। একমাস ধরে এই অচলাবস্থার জন্য টান পড়েছে মানুষের রুজি রোজগারে। হাজার হাজার মানুষ একমুঠো ভাতের জন্য গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন ত্রাণের লাইনে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণে এগিয়ে এসেছেন সমাজের বহু মানুষ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। কিন্তু এই ত্রাণ দেওয়ার কাজে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন সিরাজ মোল্লা, আনশার খোন্দকাররা।

এদের ত্রাণে এমন কী বিশেষত্ব? খবর নিয়ে জানা গেল, যাঁদের ত্রাণ নেওয়ার কথা তাঁরাই এখন ত্রাতা। হ্যাঁ এটাই বাস্তব। সিরাজ মোল্লা, আনার মোল্লা, আনিশ মল্লিক এরা সবাই ভ্যান-রিক্সাচালক। ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে  ডায়মন্ডহারবারের  চাঁদনগর এলাকায় পাঁচশোর উপর অসহায় দিনমজুর পুরুষ এবং মহিলাদের হাতে  সাধ্যমতো খাদ্যসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তাঁরা।

এই লকডাউনে সব জায়গায় ভ্যান রিক্সাচালকদেরই ত্রাণের লাইনে দেখা যাচ্ছে। কারণ, মাসখানেক ধরে কাজ নেই। কিন্তু  ব্যতিক্রমী পথে হাঁটলেন  ডায়মন্ডহারবারের চাঁদনগরের ভ্যান রিক্সাচালকরা। সফি, আনার, আনসাররা ডায়মন্ডহারবারের চাঁদনগর এলাকায় ভ্যান-রিক্সায় যাত্রী এবং মাল বহন করেন। বর্তমানে এই এলাকায় টোটো চালু হওয়ার পর টান পড়ে রোজগারের  ভাণ্ডারে।

তবুও কেন্দ্রীয় সরকার যখন লকডাউনের মেয়াদ মে মাসের তিন পর্যন্ত করে দিল তখন সিরাজ, আনিশরা সিদ্ধান্ত নিলেন লকডাউনে খেতে  না পাওয়া এলাকার অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবেন। কিভাবে ? ভ্যান চালিয়ে কত রোজগার হয়? এইসব প্রশ্নে সিরাজ, সফিরা  জানালেন তাদের এই মানবিক কর্মকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি।   সিরাজ বলেন, "প্রথম একুশদিন লকডাউনেই আমাদের এলাকার বহু মানুষের একবেলা খাবার জুটেছে আরেকবেলা জোটেনি। কারণ, আমাদের গ্রামে অধিকাংশ পরিবার দিনমজুর। দ্বিতীয়বার যখন লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হল তখন আমরা ভ্যান রিক্সাচালক কল্যাণ সমিতিকে আমাদের ইচ্ছার কথা জানাই। আমাদের প্রস্তাবে সবাই সম্মতি দেয়। টাকার ব্যবস্থা হয় আমাদের রোজগারের পয়সা দিয়েই।”

সফি মোল্লার কথায়. “এই সমিতি তৈরি হওয়ার পর থেকে আমাদের পঁয়তাল্লিশ জন ভ্যান চালক প্রতিদিন রোজগারের কিছু টাকা জমা রাখতাম।  যারা যে রকম রোজগার করত তারা সেইরকম টাকা রাখত। তবে কমপক্ষে দশ টাকা রাখতে হত। আমাদের প্রয়োজনে সমিতির এই ফান্ড থেকে টাকা নিতাম। আবার ভ্যান চালিয়ে টাকা শোধ করে দিতাম।’ পঁয়তাল্লিশ জনের জমানো  টাকা দিয়ে গ্রামের  পাঁচশো অসহায় পরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন- দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থেকে মুখের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত? জেনে নিন প্রতিকার

ডায়মন্ডহারবারের চাঁদনগর এলাকার ভ্যান রিক্সাচালক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে গ্রামের  অসহায় পাঁচশোটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, বিস্কুট-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী। তার সঙ্গে ছিল মাস্কও। সরকারি নিয়মবিধি মেনেই অসহায় মানুষগুলোর হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয় ।

এলাকার ভ্যান রিক্সাচালকদের এই মানবিক কর্মকাণ্ডে সামিল হন  স্থানীয় কলেজ ছাত্রী হাফিজা খাতুন ।  সে তার টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে জমানো হাজার দেড়েক টাকা তুলে দেন ভ্যান রিক্সাচালকদের হাতে। হাফিজা জানান, "এই সঙ্কটে ভ্যান চালকরা যেভাবে  অসহায় মানুষগুলোর  দাঁড়িয়েছেন তাতে আমি  অভিভূত। তাই একজন ছাত্রী হয়ে আমার সাধ্যমত ক্ষমতা নিয়ে এই মহান কাজে সামিল হতে পেরে আমি ভীষণ খুশি  এবং গর্বিত ।" এই দুর্দিনে সবাই সবার পাশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু গ্রহীতা যখন দাতা হন সেই দান অন্যমাত্রা পায় ।

.