#উৎসব: প্রায় দেড়শো বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা ঘটের জল পাল্টানো হয়নি আজও!
মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য চন্দননগরের জমিদাররা জমি দান করেছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিঙ্গুরের জগৎনগর গ্রামের মা আনন্দময়ীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা মিথ, নানা ঘটনা, আধ্যাত্মিক অনুভূতির নানা পরত। বলা হয়, মা তাঁর ভক্তবৃন্দকে আনন্দ দেন বলেই মায়ের নাম 'আনন্দময়ী'। দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। এখানে সারা বছর ধরেই চলে মায়ের পুজো। তবে কালীপুজোর দিন চার প্রহরে বিশেষ পুজো হয় এখানে। জেলা-সহ বাইরে থেকেও প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় তখন।
আরও পড়ুন: #উৎসব: মা স্বপ্নাদেশে জানালেন তাঁর মূর্তি রয়েছে দ্বারকানদীতে
কথিত, প্রায় ৩০০ বছর আগে এক স্বপ্নাদেশে এই মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধক। অনেক পরে ভক্তদের দানের টাকায় এখানে তৈরি হয় দক্ষিণেশ্বরের আদলে এক মন্দির। আগে এই গ্রাম ছিল জঙ্গলে ভরা নির্জন এক এলাকা। পাশেই ছিল কানা নদী। এই জঙ্গলে মৃতদেহ সৎকার করা হত। জানা যায়, একবার এই গ্রামেরই 'আন্দি' নামে ন'বছরের এক ব্রাহ্মণকন্যার মৃতদেহ সৎকার করার কাজ চলছিল। সেই সময়ে হঠাৎ এখানে তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। তখন শবদাহকারীরা ওই জ্বলন্ত মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায়।
সেই সময়ে সন্নিহিত জঙ্গলে এক সাধক ধ্যানরত ছিলেন। কথিত, সেই সময়ে তাঁকে মা স্বপ্নাদেশ দেন, ওই আধপোড়া মৃতদেহ মাটিতে সমাহিত করে যেন তার উপর মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়! সেই মতো সাধক সেই আধপোড়া দেহ মাটিতে সমাহিত করে তার উপর দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা ও সাধনা শুরু করেন। সেই থেকেই এই মন্দিরে সেই কন্যার সমাধির উপরেই অধিষ্ঠাত্রী রয়েছেন মা আনন্দময়ী। ওই সাধক ডালপালা ও গাছের পাতা দিয়ে প্রথমে একটি ঘর বানিয়ে মায়ের ঘট স্থাপন করে পুজো শুরু করেছিলেন।
১২৯৪ বঙ্গাব্দে ওই গ্রামেরই এক বড় ব্যবসায়ী কৈলাস দত্ত মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছোট আকারের একটি মন্দির তৈরি করিয়ে সেখানে নতুন করে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। কৈলাস বেনারস থেকে অষ্টধাতুর মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে শোনা যায়। এ-ও শোনা যায়, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য চন্দননগরের জমিদাররা জমি দান করেছিলেন। এমনকি মায়ের নিত্যপুজো করার জন্য যে পূজক প্রয়োজন তার জন্যও নাকি স্বপ্নাদেশ পাওয়া গিয়েছিল। সেইমতো কাশী থেকে দিগম্বর চক্রবর্তী নামে এক পুরোহিতকে আনানোও হয়। শুরু হয় মায়ের যথাবিহিত পূজার্চনা।
পরবর্তীকালে এই দিগম্বর চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরাই এই মন্দিরে মায়ের পুজোর দায়িত্ব সামলে আসছেন। প্রাচীন রীতি মেনে মন্দিরের গর্ভগৃহে তাঁদের বংশধররা ছাড়া অপর কেউ প্রবেশ করতে পারেন না বলেই শোনা যায়।
শোনা যায়, কৈলাস দত্ত মন্দির তৈরি করে, মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে যে পিতলের ঘট সেই প্রথম দিন এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই ঘটের জল নাকি এখনও পর্যন্ত পালটানো হয়নি!
প্রতি বছর কালীপুজোর দিনে চারপ্রহরে পুজো হয় এখানে। লুচি, খিচুড়ি, পায়েস ছাড়াও ফল দিয়ে মাকে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের মুখে শোনা যায়, মা আনন্দময়ী খুবই জাগ্রতা। কালীপুজোর দিন ছাড়া অন্যান্য দিনেও এখানে বহু ভক্ত এসে ভিড় জমান।
(Zee 24 Ghanta App: দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: #উৎসব: মা দেখা দিয়ে বললেন, আমিই তোর মেয়ের মতো, তুই আমাকেই পুজো কর!