বিলুপ্তি থেকে ফিরে এবার ওড়ার অপেক্ষায় শকুন
এবার বিশ্বে প্রথমবার প্রজননকেন্দ্র থেকে শকুনকে প্রকৃতির মধ্যে ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন বনকর্তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দু-এক মাসের মধ্যেই ছাড়া হবে শকুন।
![বিলুপ্তি থেকে ফিরে এবার ওড়ার অপেক্ষায় শকুন বিলুপ্তি থেকে ফিরে এবার ওড়ার অপেক্ষায় শকুন](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2019/02/06/174299-shokun.jpg)
মৌপিয়া নন্দী
কথায় আছে শকুনের শাপে গরু মরে না। তবে গরুর দেহে ওষুধের প্রভাবে শকুনের বংশ ধ্বংসের মুখে। যা নিয়ে মাথাব্যথার শেষ নেই পরিবেশবিদদের। তারই মধ্যে রুপোলিরেখা। রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজননকেন্দ্র থেকে এবার আকাশে ডানা মেলবে শকুন। যা বিশ্বে এই প্রথমবার। শকুন নিয়ে গৃহস্থের নানা কুসংস্কার থাকলেও পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য শকুন অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিপজ্জনকহারে কমেছে শকুনের সংখ্যা। হোয়াইট ব্যাক শকুনের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ। যেখানে স্লেন্ডার-বিল এবং লং-বিলড শকুনের বংশ হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯৭% হারে।যার অন্যতম প্রধান কারণ গবাদিপশুর দেহে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধের ব্যবহার। এই ওষুধ প্রযোগ হয়েছে এমন গবাদি পশুর মাংস খেলে শকুনের মৃত্যু অবধারিত। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই মারণ ওষুধ প্রায় উজার করে দিয়েছে শকুনকুলকে। বিপদ বুঝে গত দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় শকুন সংরক্ষণের উদ্যোগ।
আরও পড়ুন - পান চাষে বিপর্যয়, প্রশাসনের সাহায্যের আশায় চাষিরা
হরিয়ানার পিঞ্জোরের পর বিশ্বে দ্বিতীয় শকুন প্রজননকেন্দ্র হিসাবে পথচলা শুরু করে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজননকেন্দ্র। সেটা ২০০৬ সাল। প্রথমে সেখানে ঠাঁই পায় ২-৩টি শকুন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে শকুনের সংখ্যা। মূলত আহত বা উদ্ধার হওয়া শকুন এনে রাখা হত এই কেন্দ্রে। ২০০৯ সালে প্রথম সফল শকুন প্রজনন হয় এই কেন্দ্রে। পৃথিবীর মুখ দেখে প্রথম ক্যাপ্টিভ ব্রিডিং এর ফসল এক স্লেন্ডার বিল শাবক। এর পর ধীরে ধীরে প্রজনন হওয়া শকুনের সংখ্যা বাড়তে থাকে বছর বছর। বর্তমানে রাজাভাতখাওয়া কেন্দ্রে প্রজনন হওয়া মোট শকুনের সংখ্যা ৫৭। আর সবমিলিয়ে ১৩০ টি শকুনের ঠিকানা এই কেন্দ্র।
আরও পড়ুন- বৃহস্পতিবার থেকে শুরু বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন, আসছেন দেশ-বিদেশের ৪০০০ প্রতিনিধি
এবার বিশ্বে প্রথমবার প্রজননকেন্দ্র থেকে শকুনকে প্রকৃতির মধ্যে ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন বনকর্তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দু-এক মাসের মধ্যেই ছাড়া হবে শকুন। বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায় যেটাকে বলা হচ্ছে সফ্ট রিলিজ। বড় একটি জায়গাজুড়ে তৈরি হচ্ছে রিলিজ অ্যাভিয়ারি। কারণ প্রকৃতির থেকে আলাদা ভাবে বড় হওয়া শকুনরা প্রথমেই ঝড়-ঝাপটা সামলাতে পারবে না। তাই ধীরে ধীরে তাদের অভ্যস্ত করে তুলতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে, যাতে মানিয়ে নিতে পারে তারা। এই রিলিজ অ্যাভিয়ারিতে এমন ব্যবস্থা থাকবে যে বাইরের পক্ষীকূলের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাবে শকুনেরা। শিখবে খাদ্যসংগ্রহ করতেও। এরপর তাদের ছাড়া হবে খোলা আকাশে। আপাতত দুটি সারোগেট স্পিসিস ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন বনকর্তারা। ছাড়ার জন্যে তারা বেছেছেন হিমালয়ান শকুনকে। একদিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে শকুন। তাই তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করা হবে স্যাটেলাইট ট্যাগ। এই প্ল্যাটফর্ম টারমিনাল ট্রান্সমিটার বা পিটিটি-র মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে ২৪ ঘন্টা মনিটর করা হবে শকুনের গতিবিধি। প্রস্তুতি একদম শেষ পর্যায়ে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মাস দু'য়েকের মধ্যেই রাজাভাতখাওয়া প্রজননকেন্দ্র থেকে ডানা মিলবে শকুন।