এক বছর ধরে ১০০ জন দুঃস্থের খিদে মেটাচ্ছে রামধনু

এক বছর আগে বদলে যায় ছবি। 'রামধনু'র সাত রঙে ভরে ওঠে তাঁদের ধূসর জীবন। দুঃস্থ মানুষের সন্তানের স্থান নেন হালিসহরের সুদীপ্ত দাস। গত এক বছর ধরে এভাবেই প্রায় ১০০ জন দুঃস্থ মানুষের মুখে দুপুরের খাবার তুলে দিচ্ছে তাঁর সংস্থা রামধনু।

Updated By: Aug 12, 2019, 05:32 PM IST
এক বছর ধরে ১০০ জন দুঃস্থের খিদে মেটাচ্ছে রামধনু

নিজস্ব প্রতিবেদন : ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। কিন্তু তাদের সংসারে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধ মা-বাবার। অশীতিপর শরীরে এতদিন ভিক্ষাই একমাত্র সম্বল ছিল অর্চনা দাস, তমালি সাউ, কমল সাহাদের। কিন্তু, এক বছর আগে বদলে যায় ছবি। 'রামধনু'র সাত রঙে ভরে ওঠে তাঁদের ধূসর জীবন। দুঃস্থ মানুষের সন্তানের স্থান নেন হালিসহরের সুদীপ্ত দাস। গত এক বছর ধরে এভাবেই প্রায় ১০০ জন দুঃস্থ মানুষের মুখে দুপুরের খাবার তুলে দিচ্ছে তাঁর সংস্থা রামধনু। প্রতিদিন দুপুরে চাকদহ, কল্যাণী, সোদপুর এবং দমদম থেকে প্রায় ১০০ জন মানুষ হালিসহর আসেন রামধনুর হেঁশেলে একমুঠো ভাত খাওয়ার জন্য। এমনকি বয়সের ভারে অশীতিপর ৩২ জনের কাছে প্রতিদিন খাবার পার্সেল করেও পৌঁছে দেন সুদীপ্ত ও তাঁর দলের সদস্যরা।

উত্তর চব্বিশ পরগনার হালিসহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রামধনু। নানা সামাজিক সেবামূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকেন রামধনুর সদস্যরা। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ 'রামধনু হেঁশেল'। সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত দাসের দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মানুষকে সাহায্য করার অদম্য জেদের ফলেই ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পথ চলা শুরু রামধনু হেঁশেলের। 

তবে, রামধনুর চলার পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না কোনওদিনই। চলার পথে এসেছে একের পর এক প্রতিকূলতা। প্রথমেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় টাকার জোগান। প্রায় ১০০ জনের অন্নের জোগান করা তো আর মুখের কথা নয়! কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে বাঁধা। রামধনুর কর্ণধার সুদীপ্ত বলেন, "রামধনু হেঁশেল শুরুর পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন দলের সদস্যরা।" সদস্যদের সাধ্য মতো চাঁদা দিয়েই পথ চলা শুরু করে রামধনু। পরে, রামধনুর প্রচেষ্টায় পাশে দাঁড়ান বহু মানুষ। মাসিক চাঁদা দিয়ে রামধনুর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ বিয়ে, শ্রাদ্ধ্য, জন্মদিন কাটাতে বেছে নিচ্ছেন রামধনু হেঁশেলকেই। বিশেষ দিনে দুঃস্থ মানুষের মুখে অন্নের জোগান দিয়ে রামধনুর আলোয় আলোকিত হয়েছেন তাঁরা। 

আলোকিত অর্চনা দাস , তমালি সাউ , কমল সাহারাও। দুপুরে খাওয়ার পর বুক ভরা তৃপ্তি নিয়ে তাঁরা হাসিমুখে জানালেন ,"আগে ভিক্ষা করে প্রতিদিন খাবার জুটত না। এখন দুপুরে পেট ভরে ভাত খাই। সুদীপ্তর দয়াতে বেঁচে আছি। ওর মত সন্তান যেন প্রতিটি মায়ের ঘরে জন্মায়।" 

অসহায় মানুষের আশীর্বাদ আর সমাজের সমস্ত মানুষের ভালোবাসা এবং আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে চলা রামধনু হেঁসেলের বর্ষপূর্তি আসন্ন। শুধু হেঁসেল নয়। আরও অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রামধনু। দুঃস্থ অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি পঁচিশ জন দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধী  মানুষের স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করেছে রামধনু । এঁরা প্রত্যেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যাশলেস চিকিত্সা পাবেন। প্রতি বছর এঁদের প্রিমিয়ামও দেয় রামধনু। 

মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। সঙ্গে একটি ক্ষুধাহীন সমাজ গঠনের প্রয়াস। ভালবাসার সাত রঙের ছটায় বড়ই রঙিন হালিসহরের রামধনু।

আরও পড়ুন : নকশা হাতাতেই কি খুন? মুম্বইতে বাঙালি চিত্রশিল্পী খুনে উঠে আসছে বন্ধুর নাম

.