কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখবেও না! কারও ওপরেই ভরসা নেই ডানলপ কর্মীদের
গেটের কাছেই শুরু হয় ডানলপ বাঁচাও আন্দোলন। সেও কাটতে চলেছে ১০টি বছর। কারখানা তো খোলার কোনো চেষ্টা হয়নি! সেই আন্দোলনও হারিয়ে গেছে সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ভোট আসে। নেতা আসে। মেলে প্রতিশ্রুতি। ডানলপ কারখানায় চিমনি থেকে আর কালো ধোঁয়া বেরোয় না। 'তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কখা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না।' হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার আকাশে বাতাসেও ভেসে বেড়াচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা। ওরা জানে, আসলে কেউ কথা রাখবেও না। রাজনীতিবিদদের কথা না রাখার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে ডানলপের বন্ধ কারখানা। ভোটের মুখে ফের ডানলপের দুয়ারে রাজনীতিবিদরা। সোমবার ডানলপের ফুটবল ময়দানে সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার একই মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা।
কেউ কথা রাখেনি! কেউ কথা রাখেনা! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার এই দুটো লাইনই এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার আকাশে বাতাসে। আগামীকাল থেকে দুই মহাশক্তিধরের লড়াই শুরু হচ্ছে, শুধু এই রাজ্য বা দেশ নয়, সারা বিশ্ব, যাকে চিনতো ডানলপ সাহাগঞ্জ ফুটবল ময়দানে। প্রায় ২৫০ একরের উপর, সেই বিশাল কারখানা চত্বর, মুখ লুকিয়েছে জঙ্গলের আড়ালে। শকুনের দল ইতিমধ্যেই খুবলে খেয়েছে কারখানার সবকিছুই। বাম জমানায় পবন রুইয়ার হাতে কারখানা আসার পর, বন্ধ হয়ে যায় ইতিহাসের সাক্ষী ডানলপ। তাকেই হাতিয়ার করে বর্তমান শাসক দল।
আরও পড়ুন: 'ভয় দেখাতে চাইলে ভুল করছেন' CBI নোটিস পেয়েই টুইট Abhishekএর
গেটের কাছেই শুরু হয় ডানলপ বাঁচাও আন্দোলন। সেও কাটতে চলেছে ১০টি বছর। কারখানা তো খোলার কোনো চেষ্টা হয়নি! সেই আন্দোলনও হারিয়ে গেছে সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। আগামীকাল ও তার পরের দিন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার একদিন পরই এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার লড়াইয়ে নামছেন। যে মাঠে একদিন সাহেবদের খেলা থেকে শ্রমিকদের খেলাধূলায় মেতে উঠতো এলাকার মানুষ, সেই বিশাল ময়দানই এখন রাজনৈতিক হেভিওয়েটদের বড় ময়দান। কারণে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সমাবেত করে হাজির করা যাবে কার কত শক্তি।
শ্রমিক আন্দোলন থেকে কোর্টের দরজায় মাথা ঠুকেও কোনও লাভ হয়নি। ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন, নিলামের জন্য ওঠা এখানকার পড়ে থাকা যন্ত্রসামগ্রীর সম্ভাব্য খরিদ্দার। শ্রমিকদের কাছে অবশ্য, কি প্রধানমন্ত্রী! কি মুখ্যমন্ত্রী! আর কোনও আশা নেই। কোনও উৎসাহ নেই। কারণ তারা সব নেতা। রাজনৈতিক দল। সকলকে চেনা হয়ে গেছে। তাদেরকেই হাতিয়ার করে জয়মাল্য পড়েছে বিভিন্ন নেতারা, আর কারখানা জঙ্গলে চাপা পড়েছে, শ্রমিকরা হারিয়ে গেছে অন্ধকারে। পেটের দায়ে যে যেমন পেরেছে, এমনকি ফেরিওয়ালার কাজও বেছে নিয়েছে অনেকেই।
আরও পড়ুন: ফের উত্তপ্ত কেশপুর, কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছনোর আগেই BJP কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে মারধর
তবে তাদের একটু আশা মোদীজি বা মুখ্যমন্ত্রী আসা নিয়ে নয়। তাদের আশা কোর্টের নির্দেশে লিকুইডিটরের হাতে থাকা কারখানার নিলামের পরিদর্শন নিয়ে। কারণ যেটুকু অবশিষ্ট বেঁচে আছে চোরের হাত থেকে, সেটুকু বিক্রি হলে যদি বকেয়া পাওনা কিছু ফেরত পাওয়া যায়, সেই স্বপ্নই দেখছে তারা। বর্তমান শাসক দলের জেলা সভাপতি, তিনি তো ডানলপ খোলার প্রসঙ্গ টানতেই তাঁর বলার এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না বলে এড়িয়ে গেছেন। এলাকার সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি, তিনি দোষ চাপিয়েছেন সেই তৃণমূল সরকারের ওপরেই। প্রধানমন্ত্রীর আসার প্রাক্কালে সভাস্থল পরিদর্শনে এসে কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, শুধু ডানলপ নয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্ত কারখানাই একটি কমিটি তৈরি করে তাঁরা 'ক্ষমতায়' এলে খোলার কাজ শুরু করবেন।
যে ৩৪ বছরের বাম জামানায় এই ঐতিহাসিক কারখানায় অন্ধকার নেমে এসেছিল, সেই বাম নেতা মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, কারখানা তাঁদের সময়ে বন্ধ হয়েছিল, তাঁরা ক্ষমতায় এলে আবার খুলে দেখিয়ে দেবেন। অপেক্ষা আগামীকালের, বিশ্বের দরবারে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর একমাত্র নামকরা ডানলপ কারখানা বন্ধ নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, এখন সেটাই দেখার। তবে শ্রমিকরা জানে, কারখানাও যেমন নেই, খুলবেওনা কোনওদিন। এই মাঠ পলাশীর প্রান্তরের মতন পড়ে থাকবে, এইসব নেতাদের রাজনৈতিক ময়দান হিসাবে।