বঙ্গ বিজেপি-র মিরজাফরের খোঁজে মোদী-শাহ!

'মিরজাফর' খোঁজার লক্ষ্যে তদন্তে নেমেছে স্বয়ং অমিত শাহ। জানা যাচ্ছে, তাঁর বাহিনীর কয়েকজন ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন। বেশ কিছু টেলিফোনিক কথাবার্তা এবং কাগজপত্রও ইতিমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা।

Updated By: Sep 24, 2018, 02:27 PM IST
বঙ্গ বিজেপি-র মিরজাফরের খোঁজে মোদী-শাহ!

অঞ্জন রায়

পদ্মদিঘীর অন্দরের খবর খাসফুল কাননে কানাকানি হচ্ছে! কিন্তু,  পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির হাঁড়ির খবর রাজ্যের শাসকদলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে কে বা কারা? লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে আপাতত এই প্রশ্নই তাড়া করে বেরাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকে। গত চার বছর ধরে মোদী এবং শাহ এ রাজ্যের সংগঠনিক ভিত পোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব ভারতের এই রাজ্য থেকে তাঁদের আসন প্রত্যাশা অনেক। তাই দফায় দফায় রাজ্যে এসেছেন দু'জনেই। বিশেষ করে পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এবং কলকাতার সমাবেশে মানুষের ঢল আশ্বস্তও করেছে তাঁদের। আর এ জন্য দলের সর্বভারতীয় কার্যকারিনীর বৈঠকেও আলাদা করে বাংলার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন মোদী-শাহ। কিন্তু, ঠিক এরপরই বেঁধেছে গোল।

রান্নার গ্যাস ও মহিলাঘটিত কেলেঙ্কারিতে যেভাবে সঙ্ঘ ও বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নাম জড়িয়েছে তাতে বেজায় অসন্তুষ্ট মোদী-শাহ। কিন্তু এই খবর কে পাচার করছে? পুলিসের হাতে তথ্য প্রমাণ তুলে দিয়ে থানায় এফআইআর করাতে উত্সাহিত করছে কারা? বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চিত এর পিছনে রয়েছে কোনও 'মিরজাফর'ই। এবার সেই 'মিরজাফর' খোঁজার লক্ষ্যে তদন্তে নেমেছে স্বয়ং অমিত শাহ। জানা যাচ্ছে, তাঁর বাহিনীর কয়েকজন ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন। বেশ কিছু টেলিফোনিক কথাবার্তা এবং কাগজপত্রও ইতিমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা। আরও পড়ুন- বিজেপি মিরজাফর, বাংলা বনধের বিরোধিতা করে বললেন ফিরহাদ হাকিম

কিন্তু, কেন এমন করছে এইসব 'মিরজাফর'রা? দলের একাংশের দাবি, বিগত নির্বাচনগুলিতে রাজ্যে বিজেপির ফল বেশ আশাব্যাঞ্জক। আর এর পুরো কৃতিত্বটাই পাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। কারণ, তাদের হাত ধরেই 'বড় বাজারের পার্টি'র চিরাচরিত তকমা ঘুচিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি জুটেছে পদ্ম ফুলের। আর এ জন্যই না কি 'হাত ধুয়ে' দল বিরোধী কাজে নেমে পড়েছেন এই সব গেরুয়া নেতারা। উল্লেখ্য, দলের মধ্যে চলা কলহের প্রতিফলন পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেই খবরও পৌঁছেছে অমিতের কানে। আর এতেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। আরও পড়ুন- প্রমাণ করুন আমরা জড়িত, নইলে ক্ষমা চান, পার্থকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ল RSS

'বিশ্বাসঘাতকতা'র কারণ যাই হোক,  অমিত শাহ মনে করেন, এই দুই ঘটনা বিজেপি-র কাছে বড় ধাক্কা। যেভাবে আরএসএস এবং বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের নাম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে, তাতে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এর উপর লোকসভা নির্বাচন যখন দোর গোড়ায়, তখন এই ধরনের ঘটনা রাজ্য বিজেপির জন্য বিশেষ অস্বস্তিকর। বিশেষত, এ রাজ্য থেকে ২২টি লোকসভা আসনের টার্গেট নিয়েছে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তাই এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য মরিয়া হয়েছে গেরুয়া শিবির। আরও পড়ুন- সাংসদ তহবিলের খরচে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ রূপার

"আসলে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই তাদের অগ্রগতির পথে বড় বাধা। গত আড়াই বছরে সংগঠনের যে প্রসার ও লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে, রাজ্যের অনেক বিজেপি নেতাই ভালভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তাই, শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেই দলের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে", এক সর্বভারতীয় নেতার এমনই মতামত। আর তাই শাহ চান, আসল মির্জাফরদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করতে। সে জন্যই নিজের ঢঙে তিনি কাজ শুরু করেদিয়েছেন। আরও পড়ুন- Exclusive: বঙ্গের নেতাদের উপরে ভরসা নেই? রাজ্যে আসছে অমিত-বাহিনী

আগামি ২৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে রাজ্যের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ। তিনি এবং মোদী এই দুই ঘটনাকে যে ভালো চোখে দেখছেন না, তা রাজ্য নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সেদিনই। পাশাপাশি, শাসক দলের সঙ্গে যাঁরা যোগাযোগ রাখছেন তাঁদেরকেও সতর্ক করা হবে। এর পাশাপাশি, বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের কৌশলও বাতলে দেওয়া হবে এই বৈঠকে।

.