ঋণ শোধ করতে না পারায় গোটা পরিবারকে খুনের হুমকি, ধৃত ৪ সুদ কারবারী
পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, এটা একটা বড়সড় চক্র। এই চক্রের প্রতিনিধিরা বিপদে পাশে দাঁড়ানোর নামে টাকা ধার দিয়ে, চড়া সুদ দিতে বাধ্য করে। যত দিন যায় আসল টাকার সঙ্গে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দু-তিন বছরের মধ্যে আসল-সুদ পরিশোধ করতে হয়।
সন্দীপ ঘোষ রায়চৌধুরী: ঋণ শোধ করতে না পারায় সুদ কারবারিদের হুমকির মুখে গোটা পরিবার। আতঙ্কিত অসহায় পরিবারকে বাঁচাতে সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিসে অভিযোগ দায়ের করলেন হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা অনিমেষ সরকার। পুলিস তদন্তে নেমেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ চড়া সুদের কারবারিকে গ্রেফতার করে। কাটোয়ার এসডিপিও কৌশিক বসাক জানান, বুড়ো প্রামাণিক সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে পুলিস তদন্তে নেমে পীযুষ কান্তি দে,সন্দীপ কোনার, চঞ্চল কুমার দে এবং মৃণাল কান্তি দে-কে গ্রেফতার করেছে। ধৃত ৪ চড়া সুদের কারবারিকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় কাটোয়া থানার পুলিস। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, এটা একটা বড়সড় চক্র। এই চক্রের প্রতিনিধিরা বিপদে পাশে দাঁড়ানোর নামে টাকা ধার দিয়ে, চড়া সুদ দিতে বাধ্য করে। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। চক্রের কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন এসডিপিও কৌশিক বসাক। ৪ জনকে আজ কাটোয়া আদালতে পেশ করা হয়।
বাবার চিকিৎসার জন্য পরিচিত বুড়ো প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন শহরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক অনিমেষ সরকার। ২০১৯ সালের ঋণ নেওয়া পাঁচ লাখ টাকা চড়া সুদের চক্রে পড়ে এখন ১০ লক্ষ টাকা দাঁড়িয়েছে। সেই টাকার সুদ পরিশোধ করতে অনিমেষবাবুকে আরও ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। তিন বছরে চড়া সুদের কারবারিদের চক্রে ফেঁসে অনিমেষ বাবুর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ নেই বলে পুলিসকে লিখিত ভাবে জানায়। চড়া সুদের কারবারিরা লাগাতার হুমকি দিতে থাকে টাকা শোধ না করলে তার পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এমনকি অনিমেষ বাবুর স্ত্রী ও সন্তানকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির মুখে গোটা পরিবার দিশেহারা অবস্থায় পড়ে কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হয়।
পুলিসি তদন্তে জানা যায় এই চক্র থেকে যে একবার টাকা ধার করবে তার অবস্থা শোচনীয় হবে। যত দিন যায় আসল টাকার সঙ্গে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দু-তিন বছরের মধ্যে আসল-সুদ মিলিয়ে বিশাল পরিমাণ টাকা গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হয়। টাকা পরিশোধ করতে না পারলেই ভিটে-মাটি লিখে নেওয়া হয়। এই বিশাল চক্রের সন্ধানের তদন্তে নেমেছে কাটোয়া থানার পুলিস। প্রসঙ্গত, সুদ কারবারীদের টাকা শোধ দিতে না পারায় ২২ অক্টোবর কেতুগ্রামে এক সরকারি কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে রেললাইনে বেঁধে রাখা হয়। যাতে তাঁর পা কাটা যায়। কেতুগ্রামের এই ঘটনার সঙ্গে কাটোয়ার সুদ কারবারিদের যোগ আছে কিনা? খতিয়ে দেখছে পুলিস।