'দাদার কীর্তি' করে টাকা পাননি, কাগজে মুখ ঢেকে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতেন নায়ক তাপস
বাল্যবন্ধুদের কথায় উঠে এল, নায়ক তাপস পালের প্রথম অভিনয় জীবনের সংগ্রামের কথা। তাঁর অর্থাভাবের কথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন : নায়ক হয়েও মুখ লুকাতে হত খবরের কাগজ দিয়ে। কারণ হাতে পয়সা নেই। আবার 'খলনায়ক' হয়ে যাওয়ার পর অনুশোচনায় কুঁকড়ে কুঁকড়ে মরত সব সময়। 'ছোট্ট একটি ভুলের জন্য', চন্দননগরের সকল বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তাপস পাল। অভিনেতা তথা পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদ তাপস পালের ছোটবেলা বন্ধু থেকে পরিচিতদের কথায় উঠে এল সেসব কথা।
আজ ভোরে মুম্বইয়ে প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা তাপস পাল। সাতসকালে এই খবর এসে পৌঁছতেই শোকে ভেঙে পড়েছে চন্দননগর। বাল্যবন্ধুদের কথায় উঠে এল, নায়ক তাপস পালের প্রথম অভিনয় জীবনের সংগ্রামের কথা। তাঁর অর্থাভাবের কথা। তাঁরা জানান, 'দাদার কীর্তি' তাপস পালকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে কোনও অর্থ পাননি তাপস। আর সেই কারণেই পরের ছবির শুটিংয়ের সময় চন্দননগরের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন। ভোর সাড়ে ৩টেয় চন্দননগর স্টেশন থেকে লোকাল ধরে কলকাতায় চলে যেতেন। আর রাতের লাস্ট ট্রেনে চন্দননগরে ফিরতেন। হাতে থাকত একটা খবরের কাগজ। কারণ লোকের মুখে মুখে ফিরত 'দাদার কীর্তি'র নায়ক তাপস পালের কথা। এদিকে অর্থভাবের কারণে তিনি লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতেন। তাই কেউ যাতে চিনতে না পারেন, সেইজন্য কাগজ দিয়ে মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতেন।
ঘরের ছেলের চলে যাওয়ার খবর পেতেই চন্দননগরের সর্ষেপাড়ার বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য অনুরাগী। বাড়ির বন্ধ দরজার পাশে তাপস পালের আত্মার শান্তি কামনায় পোস্টার লাগিয়েছেন তাঁরা। মোমবাতিও জ্বালান। অভিনেতা তাপস পালের ছোটবেলার বন্ধু থেকে পরিচিতরা সকলেই চাইছেন, একবার চন্দননগরের ভিটেবাড়িতে তাঁর দেহ আনা হোক। এই চন্দননগরের বাড়ি থেকেই তাপস পালের নায়ক হয়ে ওঠা। তাই শেষ বিদায়ের আগে একবার সেখানে নিয়ে আসা হোক অভিনেতাকে। অভিনেতার বন্ধুরা জানালেন, চন্দননগরের মানুষ এখন চায়, তাপস পালের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হোক। চন্দননগরের এই ভিটেবাড়ি পিতা গজেন্দ্র চন্দ্র পাল ও তাপস পালের নামাঙ্কিত সেবা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক।
আরও পড়ুন, 'ফিরে এসে শুটিং শুরু করব', শেষ ফোনে চন্দননগরের বাল্যবন্ধুকে বলেছিলেন তাপস
বন্ধুরা জানান, নারদা-সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ, জেলজীবন সবকিছু নিয়ে সবসময় কুঁকড়ে থাকতেন তাপস পাল। কেউ ফোন করলেই, তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করতেন। গত বছরই ডেকে পাঠিয়েছিলেন কয়েকজন বন্ধুকে। নিজের কিছু 'ভুল' মন্তব্যের জন্য বন্ধুদের কাছে বার বার তখন ক্ষমা চান তাপস। শেষজীবনে অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটান অভিনেতা তাপস পাল।