Durga Puja 2021: অম্বিকানগর রাজবাড়ির ৪০০ বছরের প্রাচীন পুজো আজও মন টানে

অম্বিকানগরের রাজবাড়ি একসময় ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা।

Updated By: Sep 29, 2021, 09:10 PM IST
Durga Puja 2021: অম্বিকানগর রাজবাড়ির ৪০০ বছরের প্রাচীন পুজো আজও মন টানে

নিজস্ব প্রতিবেদন: অম্বিকানগরের রাজবাড়ি একসময় ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। রাজপ্রাসাদের ভিতরেই তৈরি হত অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের অস্ত্রশস্ত্র। রাতের অন্ধকারে কখনও রাজা আবার কখনও বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী সেই অস্ত্র ও রসদ নিয়ে পৌঁছে যেতেন বিপ্লবীদের গোপন ডেরায়। বাঁকুড়ার কুমারী নদীর তীরে অম্বিকা নগরের সেই রাজপ্রাসাদ আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। শুধু অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবীদের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি নিয়ে অম্বিকানগরের বুকে টিকে রয়েছে ৪০০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজো।

সময়টা খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শতক। ঘন জঙ্গলে ঢাকা দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তখন বসবাস সাঁওতাল-সহ নানা আদিম জনজাতির। সেখানে তখন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে জৈন ধর্ম। এই ধর্মীয় যুগসন্ধিক্ষণে রাজস্থানের ঢোলপুর এলাকা থেকে পুরী যাওয়ার পথে সুপুর নামের এক এলাকাকে ভালো লেগে গেল জনৈক রাজপুত যোদ্ধার। তিনি তখন সেখানেই বসবাস শুরু করলেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবেই সেখানে প্রতিষ্ঠা হল ধবল দেও রাজ পরিবারের।

আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: অষ্টমীতে মা'কে ভোগ দেওয়া হয় আট রকমের ডাল ভাজা ও হলুদ-মুড়ি দিয়ে

এর পর সুপুর এলাকাতেই রাজধানী তৈরি করে বেশ কয়েক শতক রাজত্ব পরিচালনা করলেন ধবল দেও রাজ পরিবার। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়ার কারণে রাজত্ব দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কথিত আছে, সে সময় খড়্গেশ্বর ধবল দেও কুমারী নদীর দক্ষিণে থাকা রাজত্বের অংশ নিয়ে কুমারী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা আমাইনগরে নিজের রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান। সেখানেই প্রতিষ্ঠা করা হয় কুলদেবী অম্বিকা ও কুলদেবতা কালাচাঁদ জিউকে। পরে 'অম্বিকা'র নামেই রাজধানীর নাম হয় অম্বিকানগর। রাজত্ব স্থাপনের পাশাপাশি অম্বিকানগর রাজপরিবারে চালু হয় দেবী দুর্গার আরাধনাও। 

পরবর্তীকালে এই রাজপরিবারের রাজা রাইচরণ ধবল দেও জড়িয়ে পড়েন ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে। তাঁর আমলেই অম্বিকানগর রাজত্বের মধ্যে থাকা ছেঁদাপাথর জঙ্গলে গোপনে তৈরি হয় বিপ্লবীদের বারুদ ও বন্দুক তৈরির কারখানা। কথিত আছে, রাজা রাইচরণ ধবল দেও প্রায়ই গভীর রাতে ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছে যেতেন সেখানে। নিজের উদ্যোগে অম্বিকানগর ও ছেঁদাপাথর এলাকায় দু'টি সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। রাজার সাহায্য পেয়ে অম্বিকানগর রাজপ্রাসাদে আনাগোনা শুরু হয় ভূপেশ দত্ত, প্রফুল্ল চাকী, নরেন গোস্বামী-সহ সে যুগের বহু বিপ্লবীর। গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পেয়ে অম্বিকানগরের রাজাকে শায়েস্তা করতে প্রথমেই অম্বিকানগর রাজত্ব নিলাম করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। প্রথমে এই রাজত্ব কিনে নেয় কলকাতার এক জমিদার। পরে বিহারের দ্বারভাঙার রাজার হাতে চলে যায় অম্বিকানগর। 

এতেও বিপ্লবী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হওয়ায় ব্রিটিশ সেনাপতি চার্লস টেগার্টের নেতৃত্বে রাজবাড়ি অবরোধ করে ব্রিটিশ পুলিস। আলিপুর বোমা মামলায় গ্রেফতার করা হয় রাজা রাইচরণ ধবল দেওকে। পরে প্রমাণাভাবে ছাড়া পান তিনি। এর পর পাশের কুমারী নদী দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। দেশ স্বাধীন হয়েছে। ধীরে ধীরে জেল্লা হারিয়েছে অম্বিকানগর রাজপরিবার। সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে কুমারী নদীর পাড়ে থাকা বিশাল রাজপ্রাসাদও। 

শুধু ঐতিহ্যময় বাংলার বিপ্লবী ইতিহাসের মহান স্মৃতি বুকে আগলে আজও অম্বিকা নগরের রাজবাড়িতে প্রাচীন রীতি মেনে চলে আসছে দুর্গা পুজো। রাজ-ঐতিহ্য মেনে আজও পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হয় তোপধ্বনিতে। অম্বিকানগর রাজবাড়ির পুজো দেখতে তখন ভিড় জমাতেন গোটা জঙ্গলমহলের মানুষ। ইদানীং এলাকায় বহু নতুন নতুন পুজো শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। 
                             
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: দ্বিতীয় স্বপ্নে দেবী বললেন, এখানে আমারও আরাধনা কর! শুরু হল পুজো

.