জেলাজুড়ে ছড়িয়ে বনেদি বাড়ির পুজো, ইতিহাস-লোকশ্রুতির মিশেল
ওয়েব ডেস্ক : পুজোর রঙ লেগেছে জেলাতেও। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে বহু বনেদি বাড়ির পুজো। একেক পুজোর একেক ইতিহাস। কত লোকশ্রুতি।
কামারপুকুরে লাহা বাড়ির পুজো (হুগলী)
রামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত এই মাটি। হুগলীর কামারপুকুর। কামারপুকুরের লাহা বাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস। প্রায় দুশো বছর আগে পুজোর প্রচলন করেন লাহা পরিবারের সদস্য ধর্মদাস লাহা। লোকশ্রুতি, মামলায় কোণঠাসা হয়ে চুঁচুড়া কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ধর্মদাস। পথে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। স্বপ্নে মা দুর্গার অভয়বানী পান মামলায় জয় হবেই। সত্যি সত্যিই মামলায় জয়ী হন ধর্মদাস। তারপর থেকেই লাহা বাড়িতে ধূমধামের সঙ্গে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
রামকৃষ্ণ দেবের বাবা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন ধর্মদাস লাহা। ঠাকুর রামকৃষ্ণও পাঁচ বছর বয়স থেকে লাহা বাড়ির পাঠশালায় পড়তে আসতেন। পুজোর চারদিন লাহা বাড়ির পুজো ঘিরে মেতে থাকে গোটা গ্রাম। বসে যাত্রা পালার আসর। ঠাকুর রামকৃষ্ণ নিজেও যাত্রা পালা শুনতে ভারি ভালোবাসতেন। বর্তমানে লাহা পরিবারের প্রায় পাঁচশো সদস্য। পুজোর সময় প্রায় সবাই এসে ভিড় করেন লাহা বাড়িতে। বসে যায় চাঁদের হাট।
আরামবাগে ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো
আরামবাগের হরাদিত্য গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোর বয়স ৪০০ বছর। মায়ের এখানে অভয়া মুর্তি। নয় পুরুষ ধরে পূজিত হয়ে আসছেন প্রতিমা। এক চালার অভয়া মুর্তি ঘিরে পুজোর কটা দিন মেতে ওঠে গোটা গ্রাম।
দাঁইহাটের দুর্গা (বর্ধমান)
দস্যু রত্নাকরের গল্পের মতো এ পুজোর ইতিহাস। বর্গী হামলায় তখন বিপন্ন বাংলা। দস্যু ভাস্কর পণ্ডিত নবাবের সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে আরাধ্য সোনার দুর্গাকে ভাগীরথির বুকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। সে দুর্গার হদিস না মিললেও তখন থেকেই শুরু হয়ে পুজো। তিনশো বছরের এই পুজো ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস। দস্যু ভাস্কর পণ্ডিতের দুর্গা মণ্ডপেই পুজো হয় এখনও। অনেকে বলেন দস্যু ভাস্কর পণ্ডিত ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপের প্রাচীরের দেওয়াল আজ কমজোরি। বয়সের ভারে অশক্ত হয়েছে শরীর। তবু আশ্বিনের ঢাকে আজও মেতে ওঠে শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো।
বসুবাড়ির পুজো (নদীয়া)
নবাবী আমলের এই পুজো ঘিরেও রয়েছে বহু ইতিহাস। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেনের উজির গোপীনাথ বসু এই পুজো শুরু করেছিলেন। প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের চৌবাড়িয়া গ্রামে। পরে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ভিটে ছেড়ে চলে আসেন কৃষ্ণনগরের তাঁতিপাড়ায়। সেখানেই শুরু হয় পুজো। প্রতিমা একচালার। রূপোর গয়নায় সেজে ওঠেন মা। উল্টো রথের দিন প্রতিমার গায়ে মাটি পড়ে। শুরু হয়ে যায় প্রতিমা গড়ার কাজ।
আরও পড়ুন, শহরের সব বড় পুজোর পার্কিং জোনে অ্যাপ ক্যাব ধরার সুবিধা