Purulia: বছরের ৩৬১ দিন থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে, ষষ্ঠীতে মা মণ্ডপে আসেন কড়া পুলিসি প্রহরায়
Purulia: জয়পুর রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে কথিত আছে, প্রায় চারশো বছর আগে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন ৷ যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম জয়পুর
মনোরঞ্জন মিশ্র: বছরের ৩৬১ দিন মা দুর্গা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে ৷ পুজোর দিন ষষ্ঠীতে রাজবাড়িতে মা আসেন কড়া পুলিসি পাহারার মধ্যে। দুর্গা পুজোর চারদিন জেলা পুলিসের কড়া নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে বিরাজমান থেকে পুজো নেন মা৷ দশমীতে বিসর্জনের দিন আবার ব্যাঙ্কের লকারেই ফিরে যান দুর্গা মা ৷ প্রাচীন ঐতিহ্য ও আচারবিধি বজায় রেখে পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজপরিবারে ঠিক এভাবেই দুর্গা পুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে ৷ এই রাজপরিবারের দুর্গা পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সোনার তৈরি দ্বিভুজা দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র ৷ জেলা ছড়িয়ে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে সোনার দুর্গা ও রুপোর চালচিত্র দেখতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে জয়পুর রাজবাড়িতে ৷ রাজার রাজত্ব না থাকলেও, পুজোর চারটি দিন যেন সেই পুরোনো রাজতন্ত্র ফিরে আসে এই রাজবাড়িতে। পুজোর চারদিন আয়োজিত হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷
আরও পড়ুন-দুর্যোগ থেকে এখনই রেহাই নেই, আগামী ৩ দিন ভারী বৃষ্টিতে ভিজবে এইসব জেলা
জয়পুর রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে কথিত আছে, প্রায় চারশো বছর আগে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন ৷ যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম জয়পুর ৷ জয় সিংহ উজ্জ্বয়নী থেকে এসে এই এলাকার মুণ্ডা সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই এলাকা দখল করেন ৷ খামার মুণ্ডা একটি খাঁড়াকে ইষ্ট দেবী হিসেবে পুজো করতেন ৷ জয় সিংহ খাঁড়াটিও ছিনিয়ে নেন ৷ সেই খাঁড়া ও কলা বউয়ের পুজোর প্রচলন হয় সিংদেও পরিবারে ৷ এর বহু বছর কেটে যাওয়ার পর সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংহের আমলে দুর্গাপুজোর দিন একটি অঘটন ঘটে ৷ আগুন লেগে যায় কলা বউয়ে ৷ পুড়ে ছাই হয়ে যায় মন্দির ৷ এরপরই রাজা কাশীনাথ সিংহ মানত করেন, সোনার প্রতিমা তৈরি করে তাতে রূপোর চালচিত্র লাগিয়ে মায়ের পুজো করবেন ৷ সোনার বিগ্রহ তৈরির জন্য বেনারসের স্বর্ণ শিল্পীদের ডাকা হয় ৷ এক সের (দেড় কেজি) সোনার দ্বিভুজা দুর্গা মূর্তি ও দেড় মন (60 কেজি) রুপা দিয়ে চালচিত্র তৈরি করান রাজা ৷ সেই থেকে সোনার বিগ্রহ পুজোর প্রচলন শুরু জয়পুর রাজবাড়িতে ৷
এভাবেই চলছিল। এরপর ১৯৭০ সালে ঘটে যায় বিপত্তি ৷ একদল ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়িতে ৷ তারা সোনার মূর্তির হদিশ না পেয়ে মন্দিরে রাখা মায়ের সমস্ত অলঙ্কার ও অন্যান্য দামী সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায় ৷ এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রাজপরিবারের ৷ তৎকালীন জেলা পুলিসের উদ্যোগে রাজবাড়ির স্বর্ণ বিগ্রহের নিরাপত্তায় চালু হয় বিশেষ ব্যবস্থা ৷ ঠিক হয় পুজোর চার দিন ছাড়া ৩৬১ দিন ব্যাঙ্কের লকারে থাকবে সোনার বিগ্রহ ৷ এই রীতিই আজও চলছে ৷ পুজোর চার দিনের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কড়া পুলিসি নিরাপত্তায় সোনার দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র আনা হয় রাজবাড়িতে ৷ পুজো শেষে দশমীতে পুলিসি পাহারায় আবার ব্যাংকে লকারবন্দি করা হয় মা দুর্গাকে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)