জোটের জারিজুরি! কমিউনিস্টকে নিষিদ্ধ করার বিধান দেন যিনি, তাঁরই গলায় মালা বাম নেতৃত্বের
এক সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিধানচন্দ্র রায় এবং তাঁর ক্যাবিনেটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরণশঙ্কর রায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর কাছে অভিক্ত কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানান।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আগে বেশ কয়েকবার বিধান ভবনে গেলেও এই প্রথম প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতৃত্ব। এটা নজিরবিহীনই বলা যায়। বাম-কংগ্রেসের জোট রাজনীতিতে এমন পদক্ষেপ সদর্থক বার্তা হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। তবে, ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে বাম-কংগ্রেসের এমন সুমধুর সম্পর্কে খোঁচা দিতে পারে ৪৮-এর স্মৃতি। সময়ের স্রোতে আজ সে স্মৃতি মলিন হয়ে গিয়েছে। বিধান রায়ের জন্মদিনের বিমান বসুদের স্বতঃপ্রণোদিত শ্রদ্ধার্ঘ আবারও প্রাসঙ্গিক করে তুলল সে দিনের ঘটনা।
** ১৯৪৮-এর স্মৃতি:
সবেমাত্র প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের হাত থেকে রাজ্যের দায়িত্বভার এসেছে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে। সেই সময় তেলেঙ্গানাতে কৃষক আন্দোলনে তোলপাড় গোটা দেশ। অভিক্ত বামপন্থীদের উদ্দেশ্য ছিল গোটা দেশে এই জঙ্গি আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া। কমিউনিস্ট পার্টির এই আন্দোলনে কার্যত দিশেহারা কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে সেই আন্দোলনের উত্তাপ দিন দিন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে যে তাকে রোধ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিধানচন্দ্র রায় এবং তাঁর ক্যাবিনেটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরণশঙ্কর রায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর কাছে অভিক্ত কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানান।
প্রথমে জহরলাল নেহরু রাজি না হলেও বিধানচন্দ্র রায়ের চাপে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান কমিউনিস্টরা। ১৯৫০ সালে আদালতের রায়ে আবার রাজনীতির মূলস্রোতে ফিরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি । কিন্তু যার উদ্যোগে প্রায় আঠারো মাস কমিউনিস্ট পার্টি ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছিল সেই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনে বিধান ভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন রাজ্যের বাম নেতৃত্ব।
আদর্শ নাকি ক্ষমতা কোনটি গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান বাম নেতৃত্বের কাছে। সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “রাজনীতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। পৃথিবীর সবকিছু পরিবর্তনশীল । রাজনীতিও পরিবর্তনশীল । ১৯৪৮ এর পরিস্থিতি আর ২০২০ পরিস্থিতি এক নয়। ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে সে সময় কী ঘটেছিল তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আগামিকাল কী ঘটবে।” RSS-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দিনে বাংলা-সহ গোটা দেশকে RSS কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে গোটা দেশের মানুষের কাছে প্রধান শত্রু RSS। যারা দেশটাকে হিন্দুরাষ্ট্র করতে চায়। এরা আমাদের সংবিধান বদলে দিয়ে আমেরিকার মতো রাষ্ট্রপতির হাতে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।” সেইজন্য বাম এবং কংগ্রেসের একসঙ্গে আন্দোলনে সামিল হওয়া জরুরি বলে জানান তন্ময়বাবু।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিএম-এর বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে অনেক বিরোধ আছে। আদর্শগত ভেদাভেদ আছে। কিন্তু সব বিতর্ককে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। যে বিতর্ক যে সময় উত্থাপনের প্রয়োজন সেই সময় উত্থাপন করা উচিত । এখনকার বিতর্ক হল ভারত ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবে কিনা ? ভারত সাম্রাজ্যবাদের পুতুল হবে কিনা? ভারত আত্মনির্ভরতা ও স্বাধীন বিদেশনীতির পথ ছেড়ে আমেরিকার মুখোপেক্ষি হবে কিনা ? তাই এই বির্তকের সামনে দাঁড়িয়ে বামেদের সম্ভাব্য এবং নিশ্চিত বন্ধু কংগ্রেস।
কংগ্রেস বলছে, এই নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি বিধানচন্দ্র রায় বাংলার রূপকার। তাঁর জন্মদিনে আমরা সবাইকেই আমন্ত্রণ জানাই। এবারও তাই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : ২০ কেজি সোনা, ২০টি বিলাসবহুল গাড়ি, আশ্রম! সব রেখে চলে গেলেন 'গোল্ডেন বাবা'