Anubrata Mandal: কাউন্সিলর থেকে কর্মী, নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে কেষ্টর টাকা সরানোর ছক ফাঁস ইডির চার্জশিটে!
পাশাপাশি ইডির চার্জশিটে আরও দাবি, গরু পাচারের দুই চক্রী আবদুল লতিফ ও এনামুল হক সায়গেল হোসেনের দুটি নম্বরে ফোন করে অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। সায়গল হোসেনের দুটি নম্বরের ২০১৭ সাল থেকে কল ডিটেলস রেকর্ডও চার্জশিটে তুলে ধরেছে ইডি। গরু পাচারের সেফ প্যাসেজ করে দিতেই সায়গল হোসেনের ফোন থেকে অনুব্রতর সঙ্গে লতিফ ও এনামুলের নিয়মিত কথা চলত।
পিয়ালি মিত্র: ইডির চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিপুল পরিমাণ টাকাকে আড়ালে রাখার জন্য অনুব্রতর ছিল অনের বেনামী ঢাল। তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর থেকে একাধিক তৃণমূল কর্মীর নামে বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সরিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। ইডির চার্জশিটে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। চার্জশিটে ইডির দাবি, বাড়ির কাজের লোক বিদ্যুৎবরণ গায়েন ও কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে প্রচুর বেনামে সম্পত্তি কেনা হয়। তারপর বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সরানো হয়। এছাড়াও তৃণমূল কাউন্সিলর ওমর শেখ, দলীয় কর্মী অর্ক দত্ত, তাপস মণ্ডল ও শ্যামাপদ কর্মকার এবং সবজি ব্যবসায়ী বিজয় রজক- এদের প্রত্যেকের নামে অনুব্রতর কথায় সায়গাল হোসেন বেনামে অ্যাকাউন্ট খোলে।
এই সব অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থের টাকা নগদে জমা করা হত। পরে তা অনুব্রত এবং তাঁর পরিবার সদস্য ও সায়গেল হোসেনরা ব্যবহার করত। ইডির দাবি এমনই। কারণ প্রত্যেকেই ইডির কাছে বয়ানে দাবি করে যে, অনুব্রতর কথা মতো সায়গেল হোসেন তাঁদের নামে অ্যাকাউন্ট খুললেও, সেই অ্যাকাউন্টের পাশবুক থেকে চেকবুক সবই থাকত অনুব্রতর কাছে। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা থেকে শুরু করে ট্রান্সফার, সবই করতেন অনুব্রত মণ্ডল। লেনদেন সম্পর্কে তাঁরা কিছু-ই জানেন না। পাশাপাশি ইডির চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে যে, গরু পাচারের দুই চক্রী আবদুল লতিফ ও এনামুল হক সায়গেল হোসেনের দুটি নম্বরে ফোন করে অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।
কোন দুটি নম্বর? ইডি চার্জশিটে সেই দুটি নম্বরের উল্লেখ করেছে। এনামুল হক ও আবদুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগের সায়গল হোসেনের দুটি নম্বরের ২০১৭ সাল থেকে কল ডিটেলস রেকর্ডও চার্জশিটে তুলে ধরেছে ইডি। গরু পাচারের সেফ প্যাসেজ করে দিতেই সায়গল হোসেনের ফোন থেকে অনুব্রতর সঙ্গে লতিফ ও এনামুলের নিয়মিত কথা চলত। ইডির দাবি তেমনই। পাশাপাশি, ইডির চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে যে, সায়গাল হোসেন তার বয়ানে স্বীকার করেছে যে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে ফোন করত আবদুল লতিফ ও এনামুল হক।
প্রসঙ্গত, গরুপাচার মামলায় কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে ইডি। বাবার মত সুকন্যারও ঠাঁই হয়েছে দিল্লির তিহাড় জেলে। আগামী ১২ মে পর্যন্ত দিল্লির তিহাড় জেলেই থাকবেন সুকন্যা। মেয়ে সুকন্যার গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলেছেন অনুব্রত মণ্ডলও। কটাক্ষের সুরে তীব্র তোপ দেগেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, 'মেয়েকে অ্যারেস্ট করা অন্যায় হয়েছে। এটা কোনও বাহাদুরির কাজ হয়নি।' এমনকি আদালতে দাঁড়িয়ে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারকে কেষ্টকে একথাও বলতে শোনা যায়, 'আপনাদের বিবেক বলে কিছু নেই? মেয়েটাকেও গ্রেফতার করলেন!'
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল সুকন্য়া মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, একাধিকবার সুকন্যা মণ্ডলের বয়ানে অসংগতি পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। তাঁর সম্পত্তির হিসেবই তিনি ঠিকঠাক দিতে পারছিলেন না। এদিকে, সুকন্যা মণ্ডলের আয়কর রিটার্নে মিলেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কেষ্ট-কন্যার সম্পত্তি বেড়েছে রকেট গতিতে। সিবিআই সূত্রে খবর, ৮ বছরে সুকন্যার আয় বেড়েছে প্রায় ১৭৫ গুণ! ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২-এর মধ্যে আয় বেড়েছে প্রায় ১৭৫ গুণ। ২০১৯-২০-তে আবার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুকন্যার আয়কর রিটার্ন থেকেই এই তথ্য পায় সিবিআই।
এসব দেখেশুনে একসময় তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন যে সুকন্যা মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট হয়তো ব্যবহার করেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু বার বার জিজ্ঞসাবাদে উঠে আসে যে তাঁর সম্পত্তি সম্পর্কে সবটাই জানতেন সুকন্যা। প্রসঙ্গত, অনুব্রতর গ্রেফতারের আগেই ইডি গ্রেফতার করেছিল তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন ও তাঁর চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীষ কোঠারিকে। তাদের জেরা করে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে ইডির। এরপরই বহু আইনি বাধা পেরিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তারপর অনেক আইনি লড়াই টপকে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে অনুব্রতর ঠাঁই তিহাড় জেলে। সেখানে আছেন সায়গল হোসেন ও মণীষ কোঠারিও।