পাহাড়ে বনধ প্রত্যাহার নিয়ে প্রকাশ্যে 'বিমল-বিনয় দ্বন্দ্ব'
ওয়েব ডেস্ক : পাহাড়ে বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা নিয়ে মোর্চার অন্দরে মাথা চারা দিল দ্বন্দ্ব। একদিকে পাহাড়ের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে এই কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকেই জোর দেওয়ার পক্ষে মোর্চার প্রথম সারির নেতা বিনয় তামাংপন্থীরা। অন্যদিকে, আজই দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই বনধ প্রত্যাহারের পক্ষে সায় নেই মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের।
প্রসঙ্গত, ২৯ অগাস্ট নবান্নে পাহাড় ইস্যুতে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বল্প সময়ের এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেন মোর্চা নেতা বিনয় তামাং ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দফার বৈঠক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির উত্তরকন্যাতে হবে বলে স্থির হয়েছে। আর তার আগেই আজ মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ১২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাহাড়ে বনধ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এই কথা বিনয় তামাং ঘোষণা করা মাত্রই কার্যত 'স্বস্তি ফেরে' পাহাড়ে। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে প্রায় তিনমাস (৮০ দিন) ধরে পাহাড়ে চলছে অচলাবস্থা। বন্ধ দোকানপাট থেকে স্কুল কলেজ। মার খেয়েখে পর্যটন ও চা শিল্প। এই পরিস্থিতিতে কার্যত সার্বিকভাবে ভেঙে পড়েছে পাহাড়ের অর্থনীতি। তার ওপর, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শান দিতে বার বার পাহাড়ে বিমল গুরুং অ্যান্ড কোম্পানির নামে উঠছে 'জঙ্গি কার্যকলাপে'র অভিযোগ।
আরও পড়ুন- পাহাড়ে ১২ দিনের জন্য বনধ প্রত্যাহার, ফিরল স্বস্তি
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাহাড়ে নতুন করে জমি ফিরে পেতে শুরু করেছে সুবাস ঘিসিং প্রতিষ্ঠিত গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট(GNLF)। পাহাড়ে সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায় তারা। অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই পাহাড়ে মোর্চার আন্দোলনের পন্থার বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করেছে আওয়াজ। প্রশ্ন উঠেছে আর কতদিন চলবে এই আন্দোলন? ঘরে-বাইরে কার্যত কোনঠাসা হতে থাকা মোর্চা অবশেষে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্তে রাজি হয়। যদিও, সেই আলোচনায় প্রথম থেকেই 'নেতিবাচক অবস্থান' কট্টোরপন্থী বিমল গুরুং-এর।
তবুও 'পাহাড়বাসীর স্বার্থে' দলের একাংশের চাপে বৈঠকে যায় বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে মোর্চার প্রতিনিধি দল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা সেখান থেকেই দলের অন্দরে চিড় ধরা শুরু। আজকের বৈঠকেও একইরকম ভাবে ব্রাত্য ছিলেন বিমল গুরং ও রোশন গিরি। যদিও বিনয় তামাংয়ের দাবি, বনধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির। আর সেই সিদ্ধান্তের কথা ইতিমধ্যেই মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই, রোশন গিরি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে সাফ জানিয়ে দেন, কোনও পরিস্থিতিতেই শুক্রবার পাহাড়ে বনধ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। এখন দেখার মোর্চার অন্দরের এই দ্বন্দ্ব আগামীকাল থেকে কোন পথে নিয়ে যায় পাহাড়বাসীকে।