'হোমে'র লক্ষ্মীই গৃহলক্ষী, সমাজকে বার্তা চিন্ময়ের

এই প্রেমের কাহিনী আর পাঁচটা মন দেওয়া-নেওয়ার থেকে বেশ আলাদা। আর সেজন্যই শিরোনামে আসানসোলের যুগল

Updated By: Jul 2, 2018, 05:54 PM IST
'হোমে'র লক্ষ্মীই গৃহলক্ষী, সমাজকে বার্তা চিন্ময়ের

নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘ভালোবাসি তোমায়…’ এমন কথা কেউ কাউকে বলেননি। প্রেমের তথাকথিত প্রস্তাবও আসেনি কোনও পক্ষ থেকেই। শুধু একবারের দেখা! আর সেই দেখাতেই যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে! মনের কথা বুঝে নিয়েছিল নির্বাক দৃষ্টি। কিন্তু এলক্ষ্মী-চিন্ময়ের এই প্রেমের কাহিনী আর পাঁচটা মন দেওয়া-নেওয়ার থেকে বেশ আলাদা। আর সেজন্যই শিরোনামে আসানসোলের যুগল।

বর্ধমানের মেয়ে লক্ষ্মী বাবা-মাকে হারিয়েছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে। তখন থেকেই তার ঠাঁই স্বশক্তি হোমে। আজ লক্ষ্মী পরিণত। হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেই আগামী দিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন লক্ষ্মী। কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের মতো 'হোমের মেয়ে' লক্ষীর সেই স্বপ্ন যে এই ভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা কেউই ভাবেননি। কিন্তু ভেবেছিলেন চিন্ময়। 

আসানসোলের বাসিন্দা চিন্ময় মুখোপাধ্যায় একটি বেসরকারি সংস্থার বিপণন বিভাগের কর্মী। এক বন্ধুর মারফত লক্ষ্মীর কথা জানতে পারেন তিনি। যোগাযোগ করেন আসানসোলের স্বশক্তি হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ওই হোমেই থাকতেন লক্ষ্মী। চিন্ময়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় হোম কর্তৃপক্ষও। এবার অপেক্ষা ছিল শুধু দু'জনের সাক্ষাতের। আলাদা করে লক্ষ্মীর সঙ্গে দেখা করেন চিন্ময়। কয়েকবারের দেখাতেই বাকি জীবনটা একসঙ্গে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন দুজনেই। এরপরের গল্প তো সহজেই অনুমান করতে পারা যায়...রবিবার সন্ধ্যায় ঘটে গেল চার হাত এক হওয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

আসানসোলের ডিপোপাড়ার দক্ষিণাকালী মন্দিরে লক্ষ্মী-চিন্ময়ের কন্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম।’ ব্যতিক্রমী ভালোবাসার সাক্ষী থাকলেন কয়েকশো মানুষ। উপস্থিত ছিলেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ এলাকার শিল্পী ও বিশিষ্ট মানুষজন।

কপালে লেপটে যাওয়া সিঁদুর, যার কিছুটা এসে পড়েছে নাকের উপর। লাজুক কন্ঠে লক্ষ্মী শুধু বললেন, ‘নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী মনে করছি।’ লক্ষ্মীর পাশে দাঁড়িয়েই তখন মিটমিট করে হাসছিলেন চিন্ময়। জীবনসঙ্গিনীর হাতটা চেপে ধরে বললেন, ‘ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখব। আর ওর কোনও কষ্ট হবে না।’

হোমের মেয়েদের দুর্দশার কথা শুনেছিলেন চিন্ময়। আর সেই থেকেই লক্ষীকে 'গৃহলক্ষী' করার বাসনা জাগে তাঁর মনে। নববধূ লক্ষ্মী এখন মাধ্যমিক পাশ করতে চান। আর স্ত্রীয়ের এই ইচ্ছায় পূর্ণ সায় রয়েছে চিন্ময় ও তাঁর পরিবারেরও। জি ২৪ ঘণ্টাও সাক্ষী ছিল এই অনন্য ভালোবাসার। ভালো থাকুক চিন্ময়-লক্ষ্মী, রইল আমাদেরও শুভকামনা। তবে, চিন্ময় যা করেছেন তা সাধুবাদযোগ্য হলেও, এমনটাই হওয়া উচিত। সমাজের তুলনামূলক আলোকপ্রাপ্ত অংশ যদি অন্য প্রান্তের আঁধার ঘোচাতে না এগিয়ে আসেন, তাহলে কীভাবে আলোয় আলোয় ভরে উঠবে আমাদের যাপন? ভাবার সময় এসেছে...

 

 

 

 

.