প্রথম দৃষ্টিহীন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য সিরিজ এখন মেষপালক

আজ থেকে ১৭ বছর আগেকার কথা। ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছলেন ভালাজি দামোর নামের এক দৃষ্টিহীন। চোখে দেখতে পান না, তবুও ছুঁয়ে ছিলেন এমন এক স্বপ্ন যা ইতিহাস থেকে বর্তমান, ক্রিকেট যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিনই হিরের মত জ্বল জ্বল করবে। কিন্তু যিনি গৌরব রচনার কারিগর তিনিই আজ আস্তাকুরে। ১৯৯৮, দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ভারতকে সেমি ফাইনালে তুলেছিলেন একাই। অলরাউন্ডার সেই ভালাজি দামোর এখন মেষ পালক। পেট চালাতে এটাই তাঁর সম্বল। স্ত্রী, এক ছেলে আর একটি মোষ এই ছোট্ট পরিবার নিয়েই জীবন অতিবাহিত করছেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডা ক্রিকেটার ভালাজি দামোর।

Updated By: Jul 11, 2015, 02:31 PM IST
প্রথম দৃষ্টিহীন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য সিরিজ এখন মেষপালক

ওয়েব ডেস্ক: আজ থেকে ১৭ বছর আগেকার কথা। ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছলেন ভালাজি দামোর নামের এক দৃষ্টিহীন। চোখে দেখতে পান না, তবুও ছুঁয়ে ছিলেন এমন এক স্বপ্ন যা ইতিহাস থেকে বর্তমান, ক্রিকেট যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিনই হিরের মত জ্বল জ্বল করবে। কিন্তু যিনি গৌরব রচনার কারিগর তিনিই আজ আস্তাকুরে। ১৯৯৮, দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ভারতকে সেমি ফাইনালে তুলেছিলেন একাই। অলরাউন্ডার সেই ভালাজি দামোর এখন মেষ পালক। পেট চালাতে এটাই তাঁর সম্বল। স্ত্রী, এক ছেলে আর একটি মোষ এই ছোট্ট পরিবার নিয়েই জীবন অতিবাহিত করছেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডা ক্রিকেটার ভালাজি দামোর।
   
ইতিহাসের একটুকরো হীরের মুহুর্ত এখন যেন কয়লার থেকেও কালো, গভীর অন্ধকার। ভারতের ক্রিকেটে তখন সচিন, সৌরভ, রাহুলদের দাপট। সারা পৃথিবী ভারতীয় ক্রিকেটকে চিনতে শুরু করে সচিন-সৌরভের নাম দিয়ে। সতীর্থরা তাকে ডাকতে শুরু করেছিলেন সচিন বলেই। ৩৮ বছরের দামোর ১২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৩ হাজার ১২৫। নিজের ঝুলিতে রয়েছে ১২৫টি উইকেটও। সেই সময়কার শ্রেষ্ঠ 'উইকেট টেকার' বললে, সর্বপ্রথম যার নাম করা হত তিনি ভালাজি দামোর। চোখে না দেখতে পেলেও বলে বলে উইকেট তীপ করতে মাহির ছিলেন তিনি। শুধু মাত্র শব্দ শুনেই ব্যাট করতেন অনায়াশে। 

১৯৯৮ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দল হেরে যায়। এরপর জীবন যুদ্ধেও ক্রমশ হারতে থাকেন এই অন্ধ ক্রিকেটার। বিশ্বকাপে অসাধারণ ক্রিকেট খেলার পর ভেবেছিলেন দেশে ফিরে নিশ্চয়ই কোনও না কোনও চাকরির সন্ধান পেয়ে যাবেন। দরজায় দরজায় ঘুরেও ফাকা হাতেই নিজের ঘরে ফিরেছেন। খেলোয়াড় কোটা অথবা প্রতিবন্ধী কোটা কোনওটাতেই কোনও চাকরি জোটেনি তাঁর। 

বাধ্য হয়েই চাষের কাজে যুক্ত হয় গোটা পরিবার। স্ত্রী অনু এবং ভালাজি দামোর দুজনেই চাষাবাদের কাজ করেন। মাস গেলে উপার্জন হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। তাই দিয়েই চালাতে হয় সংসার। একটি ঘরের মধ্যে কোনও ভাবে জীবন অতিবাহিত করছেন তাঁরা। ছোট্ট ছেলে ৪ বছরের সতীশের স্বপ্নও খুব সাদামাটা। খেয়ে পড়ে বাঁচার স্বপ্নেই দিন বুনছেন ওরা। উদাসীনতার এমন চরম ছবি ভারতের ক্রিকেটে আর আছে কিনা তা হয়ত কারোই জানা নেই। ১৯৯৮ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়ে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন ৫০০০ টাকা। ১৭ বছর পর তাঁর পুরো পরিবার সারা মাস খেটে উপার্জন করে ৩০০০ টাকা। বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজ হওয়ার পর সচিন তেন্ডুল্কার, যুবরাজ সিংরা যে সম্মান পেয়েছেন, তার ছিটে ফোটাও পাননি তিনি, একথা অকপটেই বলা যায়।  ব্লাইন্ড পিপল'স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি এই বলেই দায় সারেন, ' এটা দুঃখের, কিন্তু সত্যিই বটে। স্পেশাল ক্যাটাগরির খেলোয়াড় হওয়া সত্যেও তাকে কোনও রকম পুরস্কার দেওয়া হয়নি'।
             
এবার দৃষ্টিহীন ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। কিন্তু যেখানে প্রাক্তনদের প্রতিই এই অবহেলা, সেখানে এই বর্তমান ক্রিকেটদার ভবিষ্যৎ কি? সন্দেহ প্রকাশ করছে খোদ ক্রিকেটমহল। 

দেখোরে, নয়ন মেলে, জগতের বাহার, দিনের আলোয় কাটে অন্ধকার। সত্যিই এই বাহার অকল্পনীয়। দৃষ্টিহীন নয়ন মেললেও তাঁর কাছে জগতের 'বাহার' কেবলই 'অন্ধকার'।

.