Virat Kohli, IND vs PAK : একমাস ব্যাট হাতে না তুলেও ফেরার মরিয়া চেষ্টা করলেন বিরাট
Virat Kohli, IND vs PAK : অফ ফর্মে থাকা বিরাট গত একমাস ব্যাট ধরেননি। এতটাই বিরক্ত ছিলেন। চলতি বছর পাক মহারণের আগে মাত্র ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বিরাটের ব্যাট থেকে মাত্র ৮১ রান এসেছে। এমনকি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের জার্সি গায়ে চাপিয়ে এ বারের আইপিএল-এ তেমন সাফল্য পাননি তিনি।
সব্যসাচী বাগচী
কঠিন সময় প্রকৃত পারফর্মার জ্বলে ওঠেন। এই চিরসত্য বারবার প্রমাণ করেছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। এ বারও নিজের ১০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেটা করে দেখালেন। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে। ২৪ অক্টোবর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (T20 World Cup 2021) মঞ্চে ১০ উইকেটে হার। দুবাইয়ের এই স্টেডিয়াম থেকে মাথা হেঁট করে মাঠ ছেড়েছিলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রাক্তন অধিনায়ক। সাম্রাজ্য অনেক আগেই হাতছাড়া হয়েছে। তবে মুকুটহীন সম্রাটের অহংবোধ, আগ্রাসী মনোভাব এখনও অটুট। ১০ মাস চারদিন পর, ২০২২-এর ২৮ অগস্ট এশিয়া কাপে (Asia Cup 2022) বিরাট যেন নিজেকে কিছুটা হলেও ফিরে পেলেন। যে দুবাই স্টেডিয়াম শেষবার 'ক্যাপ্টেন কোহলি'-কে দেখেছিল, সেই স্টেডিয়াম এ বার দেখল 'পুরনো কিং কোহলি'-র কিছুটা ঝলক। বাইশ গজের দিকে তিনি যখন ব্যাটে হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন 'কোহলি...কোহলি' শব্দব্রম্ভে উত্তাল গ্যালারি।
বিরাট গার্ড নেওয়ার কথার সময় ভারতের স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ১ রানে ১। অভিষেক ঘটানো নাসিম শাহ (Naseem Shah) রীতিমতো ফুটছেন। মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন ফুটে উঠেছে ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে বিরাটের পাক বধের সেই মহাকাব্যিক ইনিংস। মহম্মদ আমিরকে (Mohammad Amir) কভার ড্রাইভে চার মারছেন তিনি। যাই হোক, অফ স্ট্যাম্পের ভিতরে আসা প্রথম ডেলিভারি বিরাট ছেড়ে দিলেন। কিন্তু বল এতটা সুইং করে উইকেটের কাছাকাছি চলে আসবে সেটা তিনি ভাবতেও পারেননি। হেসেই ফেললেন বিরাট। এরপরের বলেই ভারতের স্বপ্নভঙ্গ ঘটে যেতে পারত। নাসিমের প্রায় চতুর্থ স্ট্যাম্পের বাইরে যাওয়া বলকে অহেতুক ড্রাইভ করলেন। চোখের নিমেষে বল চলে গেল দ্বিতীয় স্লিপে থাকা ফকর জামানের দিকে। পাক ফিল্ডার ক্যাচ ফস্কাতেই ক্যামেরা দুই অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও বাবর আজমের (Babar Azam) দিকে তাক করল। একজন হতাশ। আর একজন নন স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
অফ ফর্মে থাকা বিরাট গত একমাস ব্যাট ধরেননি। এতটাই বিরক্ত ছিলেন। চলতি বছর পাক মহারণের আগে মাত্র ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বিরাটের ব্যাট থেকে মাত্র ৮১ রান এসেছে। এমনকি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (Royal Challengers Bangalore) জার্সি গায়ে চাপিয়ে এ বারের আইপিএল-এ (IPL) তেমন সাফল্য পাননি তিনি। ১৬ ম্যাচে রান করেছেন ৩৪১। অর্ধ শতরান দুটি। সেই বিরাট এ বার দুবাইতে পা রেখেই সবার আগে নেটে ঢুকেছেন। ২০ ওভারের লড়াইয়ে নিজেকে তুলে ধরার জন্য এমন গরমেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং সাধনা করে গিয়েছেন। ব্যাটিং সাধনা মিটলেও বিশ্রাম নেননি। চলে গিয়েছেন ফিল্ডিং প্র্যাকটিসে। কারণ তাঁর লড়াই বিপক্ষের সঙ্গে। নিজের সঙ্গে। ফেলে আসা বিরাটের সঙ্গে।
আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ১০০তম টি-টোয়েন্টি বলে কথা। আলাদা অ্যাড্রিনালিন খরচ তো হবেই। রস টেলরের পর তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি তিন ফরম্যাটেই ১০০টি ম্যাচ খেলে ফেললেন। এমন একটা ম্যাচের আগে তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছিলেন হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। রোহিত আর একটু পরেই টসে যাবেন। ঠিক এমন সময় সবাইকে ডাকলেন রাহুল। পুরো দল গোল হার্ডেল করে দাঁড়িয়ে। সেখানে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে 'পেপ টক' দিলেন বিরাট। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বোঝা যাচ্ছিল তিনি মারাত্মক উজ্জীবিত।
শুরুতেই বেঁচে যাওয়ার পর উজ্জীবিত বিরাট খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন। হারিস রাউফের শর্ট বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে চলে গেল বাউন্ডারির বাইরে। এরপর স্টেপ আউট করতেই মিড উইকেটের উপর দিয়ে এল চার। শাহনাওয়াজ ধানির ভিতরে আসা ডেলিভারিকে অনায়াসে মারলেন মিড অফের উপর দিয়ে। কয়েকটা শট ব্যাটে-বলে হল না। তবুও চেষ্টা করলেন। নিজের অতীতকে খুঁজে পাওয়ার মরিয়া প্রয়াস ছিল তাঁর ব্যাটিংয়ে।
কিন্তু ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারলেন না। রোহিত ফিরে যাওয়ার পর সবাই বিরাটের উপর ভরসা রেখেছিলেন। কিন্তু পারলেন কোথায়! মহম্মদ নওয়াজকে লং অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ইফতিকার আহমেদের হাতে বল জমা পড়ল। কেন যে 'হাফ হার্টেড শট' মারলেন সেটা একমাত্র বিরাটই বলতে পারবেন। ফেরার সময় তাঁর নামের পাশে লেখা ৩৪ বলে ৩৫ রান। সঙ্গে রয়েছে তিনটি চার ও একটি ছক্কা। তাই তো একটি নিখুঁতভাবে অসম্পূর্ণ ইনিংস অসম্পূর্ণ ভাবেই শেষ হল। যদিও আশার কথা বিরাট রানে ফিরলেন। এ বার শুধু বড় রান আসার অপেক্ষা।