পূজারা- মুরলীর জোড়া সেঞ্চুরি, চালকের আসনে ভারত
চেন্নাই টেস্টের রেশ ধরেই অসিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটসম্যান প্রতাপ অব্যাহত। আজ হায়দরাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ধোনি ব্রিগেডের দুই তরুণ তুর্কী, চেতেশ্বর পূজারা ও মুরলী বিজয়ের জোড়া সেঞ্চুরির সৌজন্যে রানের সম্ভাব্য পাহাড় গড়ে তোলার পথে ভারত। চেতেশ্বর পুজারা অপরাজিত আছেন ১৩৩ রানে। তাঁর সঙ্গেই হায়দরাবাদের ২২ গজে রাজত্ব করছেন মুরলী বিজয়। তাঁর সংগ্রহে ১১৮ রান। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রজন্মের এই দুই প্রতিনিধির ব্যাটের উপর ভর করে টিম ইন্ডিয়া খুব সহজেই টপকে গেছে অস্ট্রেলিয়ার ২৩৭ রানের গণ্ডি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতীয়দের স্কোর এক উইকেট খুইয়ে ২৬২।
ভারত- ৩১১/১ (পূজারা-১৬২ অপ, বিজয়-১২৯ অপ)
অস্ট্রেলিয়া-- ২৩৭/৯ (ডিঃ)
ভারত এগিয়ে ৭৪ রানে
স্বপ্নের একটা দিন দেখল ভারতীয় ক্রিকেট। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট মানেই শুধু মহাতারাকায় সীমাবদ্ধ, এই মিথ ভেঙে দুই তরুণ ব্যাটসম্যানের কাঁধে চড়ে চারমিনারের শহরে জয়ের ভিত তৈরি হয়ে গেল। মুরলী বিজয় আর চেতেশ্বর পুজারার জোড়া সেঞ্চুরিতে অজিরা এখন দিশেহারা। ইনিংসের শুরুতেই সেওয়াগ (৬) আউট হওয়ার পর যে আতঙ্কটা শুরু হয়েছিল, ধীরে ধীরে বিজয়-পুজারার সেটা কাটাতে থাকলেন। তারপর একটার পর একটা বল, ওভার, সেশন কেটে গেল তত মনে হত থাকল পুজারা-বিজয়দের ব্যাট চওড়া হচ্ছে। প্রথমে শতরান করলেন পুজারা। তারপর গম্ভীরের জায়গায় দলে আসা মুরলী বিজয়। যিনি এই টেস্টে ব্যর্থ হলেই হয়ত অন্তত ছটা মস দলের বাইরে থাকার ব্যবস্থা করে ফেললেন। অবিচ্ছেদ্য দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পুজারা-বিজয় যোগ করলেন রেকর্ড ২৯৪ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে টেস্টে অজিদের বিরুদ্ধে ভারতের এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের পার্টনারিশিপ। বিজয়-পুজারা ছাপিয়ে গেলেন মহিন্দর অমরনাথ-সুনীল গাভাসকরদের রেকর্ডকেও (২২৪ রান)। ২৪৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান মুরুলি বিজয়। দিনের শেষে পূজারা অপরাজিত ১৬২ রানে, আর বিজয় অপরাজিত ১২৯ রানে।
উপলের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে পুজারাদের খেলা দেখে ক্লার্কদের দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল, ২০০১ ইডেন গার্ডেনে স্টিভ ওয়ার দলের কথা। এই মার্চের মাসেরই এক দুপুরে ইডেনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে সেদিন ম্যাকগ্রা-গিলেসপিদের খালি হাতে ফিরিয়েছিলেন দ্রাবিড়-লক্ষ্ণণ। আজ যেন সেরকমই হয়ে উঠলেন পুজারা-বিজয়। সেওয়াগের আউট হওয়ার পর পুজারারা ধনুকভাঙা পণ করে ক্লার্কদের বুঝিয়ে দিলেন ভারতের সিরিজ জয় এখন সময়ের অপেক্ষা। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত এখনই এগিয়ে ৭৪ রানে। কাল গোটা দিন ব্যাট করলে অসিদের সামনে একেবারে রানের এভারেস্ট হয়ে যাবে। তারপর ঘূর্ণি পিচ, অশ্বিন... । থাক বাকিটা সবার জানা। তবে বিজয়-পুজারারা আজ যেভাবে ক্লার্কদের শিরদাঁড়া ভেঙে দিলেন তাতে এসব না হলেও বলাই যায় সিরিজ ধোনির পকেটে এসে গেল।
সময়ের অভাবে রবিরার যারা পুজারা-বিজয়ের পার্টনারশিপ দেখতে পেলেন না তাদের জন্য বলা, এমন একটা জুটি দেখে মনে হবে 'মেড ফর ইচ আদার।'পুজারা সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটার, মুরলী বিজয় তামিলনাড়ু। রাজ্য দুটো দেশের একেবারে ভিন্ন দুটো প্রান্তের ক্রিকেটার। কিন্তু দেশের বিপদে দুজনেই চলে এলেন একই প্রান্তে। যার নাম, লড়াই আর জেদ। সঙ্গে দুজনেই জুড়ে দিলেন প্রতিভা আর পরিশ্রমকে। ব্যস, তাতেই অসিদের গর্বের বোলিংয়ের কুতুবমিনার একেবারে ভেঙে পড়ল। সেওয়াগ নন, ধোনিও নন, না না সচিনও নন। চারমিনারের শহরে অসি বোলিংয়ের দর্পচূর্ণ হল আগামির ভারতের হাত ধরে।