Smriti Mandhana: ঠিক যেন সৌরভের ব্যাটিং স্ট্যান্স! স্মৃতির দাপুটে শতরানে আবেগপ্রবণ বাবা, কোচ
এ এক সাফল্যের গল্প, এ এক ডানাকাটা পরীর ফিনিক্স হয়ে ওঠার গল্প।
সব্যসাচী বাগচী: লিখতে গিয়ে ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর (Ravi Shastri) একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে যাচ্ছে। "She look like 'dadi' at a glance, on his off side drive like silky touch!" এতকাল 'God of the off side' নামে খ্যাত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। সেটা অনেক আগেই উল্লেখ করেছিলেন শাস্ত্রী। অবশ্য জাতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার ওয়াসিম জাফরের (Wasim Jaffer) ট্যুইটও স্মৃতি মন্ধনার (Smriti Mandhana) জন্য একেবারে প্রযোজ্য। এ দিন জাফর লিখলেন, 'The Goddess of the offside.'
ঠিক এ ভাবেই তো স্মৃতির প্রথম টেস্ট শতরানকে বিশ্লেষণ করা উচিত। অফ সাইডে সাত জন ফিল্ডার থাকার পরেও স্মৃতি তাঁর উইলোর ছোঁয়ায় গোলাপি বলগুলো অনায়াসে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। যা এই অশান্ত সময়েও চোখের শান্তি। মন-মেজাজ ভাল করে দেয়। মুখে ভেসে ওঠে একচিলতে হাসি। কারণ ২১৬ বলে ১২৭ রানের ইনিংসে শুধুই ছিল শিল্পের ছোঁয়া। ২২টি চার ও ১টি ছয় দেখে মনে হবে স্মৃতি যেন সবুজ গালিচার উপর স্কেচ করছেন!
দেশজ ক্রিকেট জনতা দিন-রাতের টেস্টে ওঁর প্রথম শতরান দেখে হাসছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই মুহূর্তে ট্রেন্ডিং স্মৃতি। সেটা নিয়ে অবশ্য ইতিহাস গড়ে ফেলা ব্যাটার ও তাঁর পরিবার বাড়তি উচ্ছ্বসিত নয়। কারণ গত দেড় বছরের বেশি সময় করোনার জন্য ওঁর পরিবারের অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবু এই পুরুষ শাসিত সমাজ যেন এক 'বাঘিনী' রূপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন স্মৃতি।
আরও পড়ুন: Pink-ball Test: কীভাবে গোলাপি বলে সাফল্য পেলেন? গোপন তথ্য ফাঁস করলেন Smriti Mandhana
এক সময় মহারাষ্ট্রের একাধিক ক্লাব ক্রিকেট খেলা শ্রীনিবাস মন্ধনা তাঁর কন্যার কীর্তিতে গর্বিত। তবে বিশাল লাফঝাঁপ করতে রাজি নন। জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে এমনটাই জানালেন ওঁর বাবা শ্রীনিবাস। বলছিলেন, "সবাই ওঁর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সৌরভের মিল খুঁজে বেড়ায়। বিষয়টা আমরাও ভাল লাগে। তবে সবচেয়ে ভাললাগার বিষয় হল স্মৃতি খুবই লড়াকু মানসিকতার। সেইজন্যই কঠিন পরিস্থিতিগুলো ওকে টলাতে পারে না। সেটা এই ম্যাচেও দেখা গেল। মাত্র দুটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা, গোলাপি বলে দিন-রাতের ম্যাচ, পিচ ও পরিবেশ প্রতিকূল হলেও স্মৃতি হাল ছাড়েনি। তাই ও শতরান করতে পারল। তবুও আমরা বিশেষ উল্লাস করছি না। কারণ গত দেড় বছরে করোনার দাপটে পরিবারের অনেক মানুষ চলে গিয়েছেন। ওদের সবার কাছে স্মৃতি খুবই প্রিয় ছিল। এই শতরান ওদের উৎসর্গ করলাম।"
স্মৃতি ক্রিকেটের জন্য ঘরের বাইরে থাকলেও বাবার সঙ্গে রোজ কথা বলা চাই। বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্টের প্রথমদিনের খেলা শেষ হওয়ার পরেই বাপ-বেটির ক্রিকেট চর্চা হয়েছে। কেমন ছিল আলোচনা? শ্রীনিবাস যোগ করলেন, "গোলাপি বলের টেস্টে এত দাপুটে ইনিংস সচরাচর দেখা যায় না। তবে স্মৃতি নিন্দুকদের ভুল প্রমাণিত করে ৮০ রানে অপরাজিত ছিল। তাই ওকে মাথা ঠান্ডা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। সেটা মেনে ব্যাট করেছে বলে বাড়তি আনন্দ হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: Smriti Mandhana: প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে 'গোলাপি সেঞ্চুরি' স্মৃতি মন্ধনার
ওঁর ছোটবেলার কোচ অনন্ত তাম্বেকরও ছাত্রীর ক্রিকেটীয় উত্থানে আবেগপ্রবণ। ছয় বছর বয়সের সময় অনন্ত তাম্বেকরের কাছে ক্রিকেট পাঠ নিতে যেতেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুনাম পেলেও স্মৃতি তাঁর প্রথম গুরুকে ভুলে যাননি। ছাত্রী এমন মহানুভবতা দেখে গুরুও মুগ্ধ। বলছিলেন, "আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে ওর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ নেই। সামনাসামনি সাক্ষাৎ কমে গিয়েছে। তবে তাই বলে ও আমাকে ভুলে গিয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। সাফল্য, ব্যর্থতা কিংবা কোনও সমস্যায় পড়লেই স্মৃতি ফোন করে। আমার খবরাখবর নেয়। একজন গুরুর কাছে এটাই আমার কাছে বড় পাওনা।"
এ এক সাফল্যের গল্প, এ এক ডানাকাটা পরীর ফিনিক্স হয়ে ওঠার গল্প। একটা সময় সাফল্য অর্জন করার পরেও ওঁরা পুরুষ দলের জাকঁজমকের কাছে হারিয়ে যেতেন। রয়ে যেতেন ব্রাত্য হয়ে। তবে গত কয়েক বছরে পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করা প্রমিলাবাহনী এখন যেন আক্ষরিক অর্থে ফিনিক্স। আর স্মৃতি তাঁদের জয়ডঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে পতাকা বহন করে চলছেন।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)