Ranji Trophy Final 2023, BEN vs SAU: অধিনায়ক ও ব্যাটার হিসেবে ব্যর্থ মনোজ, ঘরের মাঠে রঞ্জি ফাইনালে বাংলার লজ্জার হার

তিন বছর আগে এই একই দলের বিরুদ্ধে রাজকোটে হারলেও, সেবার বাংলা তবুও লড়েছিল। আর এবার তো ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে দাঁড়াতেই পারেনি।  

Reported By: সব্যসাচী বাগচী | Updated By: Feb 19, 2023, 11:13 AM IST
Ranji Trophy Final 2023, BEN vs SAU: অধিনায়ক ও ব্যাটার হিসেবে ব্যর্থ মনোজ, ঘরের মাঠে রঞ্জি ফাইনালে বাংলার লজ্জার হার
বাংলাকে হারিয়ে দেওয়ার পর উল্লাসে মত্ত জয়দেব উনাদকাটের সৌরাষ্ট্র। ছবি: টুইটার

সব্যসাচী বাগচী

গোটা বাংলা শেষ পর্যন্ত আশায় বুক বেঁধেছিল। লড়াই করে ফিরে আসার বার্তা দিয়েছিলেন হেড কোচ লক্ষ্মী রতন শুক্লা (Laxmi Ratan Shukla)। তবে মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) আপনি পারলেন কোথায়! কুয়াশা ঘেরা সকালের মতো আপনার মনের মধ্যে এতটা কুয়াশা জমে ছিল কে জানত! তিন বছর আগে এই সৌরাষ্ট্রের (Saurshtra) বিরুদ্ধে রাজকোটে হারলেও, সেবার বাংলা (Bengal) তবুও লড়েছিল। আর এবার তো ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে দাঁড়াতেই পারেনি। ফলে মাত্র দেড় ঘন্টায় সব শেষ হয়ে গেল। বঙ্গ ক্রিকেট নিজের ঘরের মাঠেই যেন ইলেকট্রিক চুল্লিতে ঢুকে গেল। ৯ উইকেটে হেরে একরাশ লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলা। স্বভাবতই এমন জয় পেয়ে যে জয়দেব উনাদকাট (Jaydev Unadkat) ও তাঁর সতীর্থরা যে হিংস্রভাবে সেলিব্রেশন করবে, এতে আবার অবাক হওয়ার কী আছে! কারণ দু'বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়া সৌরাষ্ট্র যে একই বিপক্ষকে ল্যাজেগোবরে করে চলে গেল। 

চতুর্থ দিনের শুরুটা শাহবাজ আহেমদকে (Shabaz Ahmed) নিয়ে ভালোই করেছিলেন বঙ্গ অধিনায়ক। কিন্তু ক্ষণিকের ভুলে ক্রিজে জমে যাওয়া শাহবাজকে রান আউট করালেন। এরপর উনাদকাটের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে থাকা একটা ডেলিভারিকে বিচ্ছিরিভাবে খোঁচা লাগিয়ে নিজেও ফিরলেন বঙ্গ অধিনায়ক। অধিনায়কের আউট হওয়ার ধরণ দেখে তখন লক্ষ্মী মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন। ঘরের মাঠে সৌরাষ্ট্রের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিপক্ষের হাতে রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy Final 2023) তুলে দিল বাংলা। একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দুই ইনিংসে মোট ১২৯ রানে ৯ উইকেট নিলেন উনাদকাট (৪৪/৩ ও ৮৫/৬)। 

২০৫ রানে ৯ উইকেট হয়ে যাওয়ার পর তখন ঘনিয়েছিল ইনিংস হারের আশঙ্কা। কিন্তু শেষ উইকেটে ঈশান পোড়েল ও মুকেশ কুমারের ৩৬ রানের জুটি রানকে নিয়ে ২৪১-এ। ফলে সৌরাষ্ট্রের টার্গেট দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১২ রান। সেই রান তুলে ট্রফি হাতে তোলা ছিল সময়ের অপেক্ষা। আর সেটাই হল। একরাশ লজ্জা ও যন্ত্রণা 'উপহার' দিয়ে আরও অনেক আলোকবর্ষ পিছিয়ে গেল বাংলা। 

কিন্তু চাপের এমন ডেসিবেল বেড়ে যাওয়ার তো দরকার ছিল না। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংটা পুরো ঘেঁটে যাওয়ার পর, বিপক্ষকে অল আউট করলেও 'ভারতসেরা' পেস বোলিং লাইন আপের মধ্যে আগুনে মেজাজ কোথায়! আসল পরীক্ষার মঞ্চে ডাহা ফেল বঙ্গ পেস অ্যাটাক। ঘরের মাঠের পিচে ভিনরাজ্যের জয়দেব উনাদকাট-চেতন সাকারিয়া পুরো ফায়দা নিলেন। তবে পারলেন না আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার ও ঈশান পোড়েল। ফলে দেখতে দেখতে প্রথম ইনিংসে ৪০৪ রান তুলে দেয় সৌরাষ্ট্র। 

যদিও শনিবার দিনের শুরুটা বাংলার বোলাররা খারাপ করেননি। দিনের প্রথম ওভার বল করতে এসেছিলেন মুকেশ। এবং সেই ওভারের পঞ্চম বলেই বিপক্ষকে ধাক্কা দেন তিনি। ফিরিয়ে দেন সৌরাষ্ট্রের সেরা ব্যাটার অর্পিত ভাসাবাদাকে। যিনি দু'বছর আগেও রঞ্জির ফাইনালে বাংলার বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন। এবং এবারও ৮১ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এদিন সকালে অবশ্য আগের দিনের স্কোরেই ফিরে যান অর্পিত। স্কোরবোর্ডে তখন আগের দিনের রানের সঙ্গে মাত্র এক রান যোগ হয়েছিল। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করেছিলেন, অলৌকিক কিছু সম্ভব।

কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন সৌরাষ্ট্রের টেল এন্ডাররা। প্রেরক মানকড় ৩৩, ধর্মেন্দ্র সিং জাদেজা ২৯ রান করেন। ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন পার্থ ভুট। চিরাগ জানি ৬০ রান করে ফেরেন। মুকেশ ১১১ রানে ৪, আকাশ ১১১ রানে ৩ উইকেট নিলেও, দুজনকে দেখে একবারও মনে হয়নি যে বিপক্ষ তাঁদের ভয় পেয়েছিলেন! 

আরও পড়ুন: Virat Kohli, BGT 2023: বিতর্কিত আউটের পর কী খেয়ে মেজাজ ঠাণ্ডা করলেন বিরাট? দেখুন ভাইরাল ভিডিয়ো

আরও পড়ুন: MS Dhoni Last Match: ক্রোড়পতি লিগে কবে শেষ ম্যাচ খেলবেন এম এস ধোনি? চলে এল বড় আপডেট

ঈশান পোড়েল পেলেন ৮৬ রানে ৩ উইকেট। তবে এবারও প্রভাব ফেলতে একেবারে ব্যর্থ। একেবারে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। মাত্র ছয় বছরের প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে দু'বার রঞ্জি ফাইনাল খেলার সুযোগ পেলেন ঈশান। কিন্তু গত ফাইনালের মতো এবারও এমন একটা মর্যাদা রক্ষার ম্যাচে দল ও জার্সির সম্মান রাখতে পারলেন না। এমন একটা ম্যাচে লড়াই করতে না পারে, আর কবে লড়বেন ঈশান! লাইন লেন্থের ঠিক নেই। একেবারে নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ। বাংলার রঞ্জি ফাইনালের ইতিহাসে ঈশান যেন সবচেয়ে জঘন্য বল করার নজির গড়ে গেলেন। তাঁর বোলিং ফিগার ২১-৩-৮৬-৩, ইকনমি ৪.০৯। বোলিংয়ের সঙ্গে নিম্ন মানের ফিল্ডিং করে গেলেন ঈশান। বঙ্গ পেসার এমন বল গলিয়েছেন যে, অধিনায়ক মনোজও তাঁকে কোথায় রাখবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্যাচ ফেললেন অভিমন্যু ও সুমন্ত। 

২৩০ রানে এগিয়ে ছিল সৌরাষ্ট্র। ভঙ্গুর মানসিকতার দুই ওপেনারকে নিয়ে এমনিতেই কোনও আশা ছিল না। অভিমন্যু ঈশ্বরণ ফের প্রমাণ করে দিলেন যে তিনি নক আউট ম্যাচ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে একেবারে 'অচল আধুলি'। ঈশানের পর অভিমন্যু, অনেক বছর ধরেই এত সম্ভাবনাময়  তিনি। দেরহাদুনে ছেলের নামে স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন। কিন্তু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট গবেষণাগারও  একটা বৈশিষ্ট  তৈরি করতে অসমর্থ---বুকের খাঁচা। ওটা কেউ নিয়ে আসে। কেউ ধাক্কা খেতে খেতে ,হেরে হেরে নিজেই সেই ইস্পাত নিজের মধ্যে জন্ম দিয়ে ফেলে। অভিমন্যুর নক আউট ম্যাচগুলোতে গত কয়েক বছর হতশ্রী পারফরমেন্স। মরণ বাঁচন সময় তিনি ফের দলের ব্যাটিংয়ের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হলেন। 

অন্য ওপেনার সুমন্ত গুপ্তর হালও একই রকম। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও তিনি কেঁপে গেলেন। আসলে তাঁর তো কেঁপে যাওয়ার কথাই ছিল। কারণ যে ছেলেটা ক্লাবের হয়ে চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেন, তাঁকে দিয়ে এমন চাপের ম্যাচে ওপেন করালে ভালো ফলের আশা না করাই ভালো। গোটা মরসুম ধরে ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন সুদীপ ঘরামি। ফাইনালে তাঁর সঙ্গী হল জোড়া ব্যর্থতা। ফলে চোখের নিমেষে ৪৭ রানে ৩ হয়ে যায় বাংলা। 

ঠিক এমন অবস্থা থেকে ফের লড়াই শুরু করলেন মনোজ ও অনুষ্টুপ। চাপে চুপসে না গিয়ে পালটা মার দিতে লাগলেন। কিন্তু বিকেল ৩:২৫ মিনিটে নেমে এল মহা বিপর্যয়। প্রথম ইনিংসে মনোজকে ঠিক যেমন বাইরে যাওয়া বলে উনাদকাট তাঁকে ফিরিয়েছিলেন, এবার ঠিক তেমন বলেই আউট হলেন রুকু। থামলেন ৬১ রানে। 

জেতার আশা অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবুও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মনোজ ও শাহবাজ। সেই স্বপ্নে যে খোদ বঙ্গ অধিনায়ক জল ঢেলে দেবেন সেটা আর কে জানত! মনোজ প্রমাণ করে দিলেন সব স্বপ্ন সত্যি হয় না। একইসঙ্গে লজ্জার হারের পরেও মনোজের একটা দাবি সত্যি হল। মাঠে বল পড়ার আগেই তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, 'ম্যাচটা ওয়ান সাইডেড হবে।' তাই তো হল। তবে ফলাফল বাংলার পক্ষে নয় সৌরাষ্ট্রের দিকে গেল। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ বিপক্ষ যে সব বিভাগেই সেরা দল। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.