টেমসের তীরে বর্ণাঢ্য সূচনা অলিম্পিকের

লন্ডনের হাইড পার্কে টানা সাড়ে ৩ ঘন্টার চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়েই সূচনা হল ৩০ তম অলিম্পিকের। স্লামডগ মিলিয়নিয়র খ্যাত চিত্র পরিচালক ড্যানি বয়েলের পরিকল্পনায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে টেমস নদী দিয়ে রাজকীয় বজরায় চাপিয়ে হাইড পার্কে আনা হয় অলিম্পিকের মশাল।

Updated By: Jul 28, 2012, 09:54 AM IST

লন্ডনের হাইড পার্কে টানা সাড়ে ৩ ঘন্টার চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়েই সূচনা হল ৩০ তম অলিম্পিকের। স্লামডগ মিলিয়নিয়র খ্যাত চিত্র পরিচালক ড্যানি বয়েলের পরিকল্পনায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে টেমস নদী দিয়ে রাজকীয় বজরায় চাপিয়ে হাইড পার্কে আনা হয় অলিম্পিকের মশাল। 
গত ৫ শতাব্দী ব্যাপি গ্রেট ব্রিটেনের আর্থসামাজিক বিবর্তনই ছিল বর্ণাড্য অনুষ্ঠানের মৌলিক ভাবনা। ভারতীয় সময় সকাল পৌনে ৫টা নাগাদ এবারের অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী ভাষণ রাখেন রানি এলিজাবেথ। এক লহমায় সভ্যতার বিবর্তন বললে হয়তো একটু বেশিই বলা হবে। তবে লন্ডনে তিরিশতম অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপমাটা নেহাতই অমূলক নয়। সাড়ে ৩ ঘন্টার অনুষ্ঠানে গত ৫ শতাব্দী-ব্যাপী গ্রেট ব্রিটেনের আর্থসমাজিক বিবর্তনের যে ছবিটা উঠে এলো তা এককথায় অভিনব। অনুষ্ঠানের মাস্টার মাইন্ড স্লামডগ মিলিয়নিয়র খ্যাত চিত্র পরিচালক ড্যানি বয়েল।  
 
প্রথম পর্ব, প্যন্ডেমোনিয়াম। সপ্তদশ শতকে ব্রিটেনে প্রান্তিক অঞ্চলে জীবনযাত্রা দিয়ে শুরু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরপর ধাপে ধাপে গ্রাম্য জীবনের খণ্ডচিত্র, গবাদি পশু থেকে শিল্প বিপ্লবের আঁচে তেঁতে ওঠা গ্রেট ব্রিটেনের ছবি উঠে এলো দর্শকদের সামনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই লন্ডনে কার্নিভ্যাল মুড। তবে উদ্বোধনের রাতে সেই উন্মাদনার পারদ আকাশ ছুঁলো বললেও কম বলা হয়। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা লন্ডন। হাইড পার্কের স্টেডিয়ামে উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ছিল বাইরেও। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রানি এলিজাবেথসহ ছিলেন দেশ বিদেশের ভিভিআইপিরাও।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শিশু হাসপাতালকে ঘিরে। যেখানে ব্রিটিশ রূপকথার প্রখ্যাত চরিত্র মেরি পপিনসের যাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় কঠিন বাস্তব মিলেমিশে একাকার রূপকথার জগতে। এরপরেই মিস্টার বিনসের চরিত্রে মঞ্চে হাজির ব্রিটিশ অভিনেতা রাউইং অ্যটকিনসন। কৌতুকরসে মাতোয়ারা স্টেডিয়ামে হাজির সকলে। পরের পর্যায়ে প্রযুক্তির বিবরণও পুঙ্খানুপুঙ্খ। মহাকাশ অভিযান থেকে হালফিলের সেলফোনে প্রেম, সবই ধরা পড়েছে। এমনকী সঙ্গীতে ধরা পড়ল ব্রিটিশ গোয়েন্দা জেমস বন্ডও। ভারতীয় ঘরনারা নৃত্যশিল্পের উপস্থাপনা করে অনুষ্ঠানে অন্যমাত্রা এনে দিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কোরিওগ্র্যাফার আক্রাম খান। কন্ঠসংগীতে তাঁর সঙ্গত দিলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ গায়িকা এমিলি সানডে।

বিনোদন পর্বের শেষে অ্যাথলিট প্যারেডে যোগ দিলেন অংশগ্রহণকারী ২০৪টি দেশের ক্রীড়াবিদরা। ভারতের জাতীয় পতাকা বহন করেন অলিম্পিকে খেতাবজয়ী কুস্তিগীর সুশীল কুমার। শুধুই নিরাপত্তা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সামিল সেনাবাহিনী।  উদ্বোধনের মার্চপাস্ট থেকে শুরু করে সমাপ্তি অনুষ্ঠান পর্যন্ত সবকটিতেই ছিলেন ব্রিটেনের নৌবাহিনী। অলিম্পিকের উদ্বোধনী ভাষণ রাখেন রানি এলিজাবেথ। এরপরেই অলিম্পিকের মশাল নিয়ে স্পিড বোটে হাজির ডেভিড বেকহ্যাম। গ্রেট ব্রিটেনে তৃতীয়বারের জন্য সূচনা হল অলিম্পিকের।   
ইউরোজোন ক্রাইসিসেসে আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে গ্রেট ব্রিটেন। তারই মধ্যে অলিম্পিকের আসর বসেছে টেমসের তীরে। উত্কর্ষতার বিচারে বেজিং অলিম্পিককে ছাপিয়ে যেতে মরিয়া ব্রিটেনের অন্তরায় চিনের লোকবল বা অর্থবল। সেক্ষেত্রে  লন্ডন অলিম্পিকের আয়োজকদের হাতিয়ার ছিল অভিনবত্ব। স্লামডগ মিলিয়নিয়র খ্যাত চিত্র পরিচালকের ড্যানি বয়েলের যাদুকাঠির ছোঁয়ায় কিন্তু সত্যিই অভিনব লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আসর।

.